দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় অন্যরকম এক হাতিরঝিল
দুপুর আনুমানিক আড়াইটা। মগবাজার থেকে গুলশানগামী হাতিরঝিলের রাস্তার ফুটপাতে বিশাল আকৃতির ছাতা মাথায় এক তরুণ ছোট্ট একটি ছেলেকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঝির ঝির বৃষ্টি ঝরছে। রাস্তাঘাট বলতে গেলে একেবারেই ফাঁকা।
মিনিট খানেক পর পর সাঁই সাঁই শব্দ তুলে দ্রুতগতিতে চলে যাচ্ছে প্রাইভেটকার, মিনিবাস ও মোটরসাইকেল। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বৃষ্টিতে ভেজা থেকে রক্ষা পেতে ব্রিজের গোড়ায় আশ্রয় নিয়ে গল্পে মশগুল থাকতে দেখা যায়। প্রেমিক যুগলদের বৃষ্টির দিকে খেয়াল নেই। বৃষ্টিতে ভিজে ‘সুঃখ-দুঃখের’ আলোচনায় ব্যস্ত তারা।
এই ছিল আজকের দুপুরের হাতিরঝিল এলাকার দৃশ্য। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে রাজধানীতে সকাল থেকেই বৃষ্টি ঝরছে। কখনো ঝির ঝির গতিতে আবার কখনোবা একটু জোরে। হাতিরঝিলের নিত্যদিনের দৃশ্যের চেয়ে বৃষ্টিস্নাত আজকের দুপুরটা ছিল একটু ব্যতিক্রম।
তেজগাঁও সাতরাস্তার মোড় থেকে সামনে এগুতেই পুলিশ চেকপোস্ট। প্রতিদিন কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে অস্ত্রহাতে সেখানে দাঁড়িয়ে কর্তব্য পালন করতে দেখা যায়। সন্দেহ হলে গাড়িসহ অন্যান্য যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু আজ তাদের একজনকেও সেখানে দেখা যায়নি। পুরো পুলিশ চেকপোস্ট ফাঁকা।
এপাশ-ওপাশে একটু উঁকি-ঝুঁকি মারতেই অদূরে একটি ফুটওভার ব্রিজের নিচে দুইজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। চেকপোস্টের সামনে এ প্রতিবেদককে দাঁড়াতে দেখে তাদের একজন মাথা তুলে সমস্যা কি জানতে চাইলেন। আপনাদেরকেই খুঁজছি বলতেই কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলেন, ওখানে বৃষ্টি, এদিকটায় এসে কথা বলুন।
একটু এগুতেই ফাঁকা ফুটপাতে সুমন নামে এক চটপটি বিক্রেতার দেখা মেলে। আনুমানিক দুই আড়াই বছরের তমাল নামে তার ছেলের মাথায় বিশাল আকৃতির ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, রাস্তার ওপারেই তার বাসা। ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ছেলেকে নিয়ে বের হতে পারেন না। ঝিরঝির বৃষ্টি ও সুন্দর বাতাস দেখে বড় ছাতা মাথায় ছেলেকে ঘোরাতে নিয়ে এসেছেন তিনি।
অদূরেই একটি গলিতে বেশ পানি জমে গেছে। কয়েকটি মিনি ট্রাক সারিবদ্ধভাবে রাখা রয়েছে। আনুমানিক ছয় থেকে আট-নয় বছরের কয়েকজন শিশুকে পানি ছিটিয়ে খেলা করতে দেখা যায়। রমিজ নামের মিনি ট্রাকচালক শিশুদের ডেকে বৃষ্টির পানিতে গাড়ির ময়লা পরিষ্কার করলে প্রত্যেককে ৩০ টাকা দেয়ার কথো বলতেই শিশুরা চল চল বলতে বলতে পানি নিয়ে ট্রাক পরিষ্কার করার কাজে লেগে যায়। কেউ ট্রাকের উপরে উঠে কেউবা আবার ট্রাকের নিচে ঢুকে কাজ করতে থাকে।
কিছুদূর এগুতেই দশ বারজন ছেলেকে একটি ব্রিজের নিচে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ আগেও ঝির ঝির বৃষ্টি থাকায় ওরা পানির কাছে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল। আরো কিছুদূর এগুতেই একটি ফাঁকা বাসস্ট্যান্ডের বেঞ্চে কয়েকজন তরুণকে সেলফি তুলে আনন্দ করতে দেখা যায়।
হাতিরঝিল এলাকায় যে বাসগুলো চলাচল করে সাধারণত ওই বাসগুলোতে প্রচণ্ড ভিড় থাকলেও আজ অপেক্ষাকৃত কম ভিড় দেখা যায়। একজন যাত্রিকে বেশ খানিকটা সময় নিয়ে টিকিট কাটতে দেখা যায়। দুযোর্গপূর্ণ আবহাওয়ায় সবচেয়ে আনন্দে ছিলেন প্রেমিক প্রেমিকারা।
কয়েক জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকাকে রোমান্টিক মুডে আলাপরত অবস্থায় দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনা সদস্য বলেন, আজ হাতিরঝিল এলাকাটা কেমন যেন বিষণ্ণ দেখাচ্ছে।
এমইউ/এসএইচএস/এবিএস