ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

স্কুলের দেওয়াল যেন প্রজাপতির পাখা

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:২০ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ

‘খেলাঘর পাতা আছে এই এখানে, স্বপ্নের ঝিকিমিকি আঁকা যেখানে।’—কবি আহসান হাবিবের ‘রূপকথার’ সেই কবিতার মতোই একটি প্রতিষ্ঠানের গল্প বলবো আজ। এ প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালজুড়ে নান্দনিক আল্পনা, সুদৃশ্য চিত্রাবলি আর নানা ধরনের অলংকরণে মনে হবে এটি কোনো সাহিত্য চর্চাকেন্দ্র বা সাংস্কৃতিক অনুশীলন কেন্দ্র। কিন্তু না, এটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে প্রচলিত আট-দশটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে এটি একটি বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

ইসলামি আদর্শ, আধুনিকতা ও মননশীলতার সমন্বয়ে পরিচালিত স্কুলটির নাম ‘ইনসাইট ইসলামিক স্কুল’। স্কুলটির উদ্যোক্তা সবাই কওমি মাদ্রাসা ঘরানার। যারা আমার পূর্বপরিচিত। সম্প্রতি তাদের ফেসবুক আইডিতে ছবিগুলো দেখে মুগ্ধতা নিতে একদিন ছুটে গেলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের কলেজপাড়ায় অবস্থিত স্কুলটির ক্যাম্পাসে।

সেখানে গিয়ে জানলাম, স্কুলের প্রায় প্রতিটি শ্রেণিকক্ষেই নানা ধরনের শিক্ষামূলক চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিশুদের মনে উৎফুল্লতা প্রদান ও প্রাণচঞ্চলতা সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের মাঝে লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্য, নান্দনিকতা, মননশীল মেধার বিস্তার ঘটানোর এই চেষ্টা—সত্যিই অসাধারণ।

স্কুলের দেওয়াল যেন প্রজাপতির পাখা

এ স্কুলের দেওয়ালে দেওয়ালে অঙ্কন করা হয়েছে গাছ-পালা, লতা-পাতা, পাহাড়-পর্বত, পশু-পাখি, ঘুড়ি, প্রজাপতির পাখা, টেলিস্কোপ, প্যারাসুট ও হেলিকপ্টার। ছাদ আঁকা হয়েছে চাঁদ-সূর্য-গ্রহ-তারাসহ সোলার সিস্টেম। আছে বাংলাদেশের রঙিন মানচিত্র। আরবি ক্যালিওগ্রাফি, আছে কবি আল মাহমুদের বিখ্যাত দুটি কবিতা।

স্কুলটির একটি কক্ষ সজ্জিত করা হয়েছে বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত সব গ্রন্থের প্রচ্ছদ অঙ্কনের মাধ্যমে। এখানে দেওয়ালে দেওয়ালে ঝুলে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বইয়ের প্রচ্ছদ। আরও আছে ফররুখ আহমেদ, অদ্বৈত মল্লবর্মণ, আল মাহমুদ, হুমায়ুন আজাদ ও সৈয়দ শামসুল হকের মতো বিখ্যাত লেখকের অমর কীর্তির মুখচ্ছবি।

আরও পড়ুন

দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্কুলের দেওয়াল ও ক্যাম্পাস রঙিন করার উদ্যোগ আমরা আগেও দেখেছি। তবে বইয়ের মুখ দেওয়ালের গায়ে সেঁটে দেওয়ার এই চেষ্টা আমার কাছে প্রথম দেখা বলে মনে হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবশ্যই প্রথম। যাত্রা শুরুর পর থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের নানা ধর্মীয় বইপড়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা সাহিত্যের অনন্য সৃষ্টিগুলো সহজে তুলে ধরার বিষয়টি অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।

স্কুলের দেওয়াল যেন প্রজাপতির পাখা

ইনসাইট ইসলামিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক এনামুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘এ স্কুলে একটি বিশ্বমানের লাইব্রেরি করার কার্যক্রমও চলছে। এরই মধ্যে বেশকিছু মূল্যবান বই ও অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে।’ বোঝাই যাচ্ছে যে, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে শুধু অর্থ উপার্জনের চেষ্টায় থাকে। তাদের বাইরে এটি সত্যি ব্যতিক্রমী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

আমি যখন এ প্রতিষ্ঠানে আসি; তখন শিশুদের পরীক্ষা চলছিল। বিধায় সব ক্লাসে ঢোকা হয়নি। যে কক্ষটিতে প্রবেশ করেছিলাম সেটির কাজও অসম্পূর্ণ। এটিকে সাহিত্যকক্ষ হিসেবে রূপদানের কাজ করে যাচ্ছিলেন অঙ্কন শিল্পীরা। ক্যাম্পাসজুড়ে রংতুলির আঁচড় দিয়ে চমৎকার একটি ছবিঘর বানানোর মূল কারিগর যিনি; তিনি একাধারে কবি, গীতিকার, কণ্ঠশিল্পী এবং চিত্রশিল্পী। তিনি আমাদের কাজী বর্ণাঢ্য ভাই। কাজ শেষ হলে আবার যাওয়ার আমন্ত্রণ পেলাম। বলে এলাম একদিন অবশ্যই আসবো। তবে একটি সাহিত্য আড্ডার আয়োজন নিয়ে।

স্কুলের দেওয়াল যেন প্রজাপতির পাখা

স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘একটি সংস্থার মাধ্যমে ইনসাইট ইসলামিক স্কুলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্লে থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত জেনারেল ও ইসলামি শিক্ষার সুষম সমন্বয়ে পাঠদানসহ নৈমিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এটি ছাড়াও এ সংস্থার মাধ্যমে আরও দুটি প্রতিষ্ঠান আছে। তিনটি ছয়তলা ভবনের একটিতে স্কুল, অন্য দুটির একটিতে বালক ও অন্যটিতে বালিকা মাদ্রাসা। শিক্ষক ও স্টাফ মিলিয়ে ৫৭ জনের টিমের সমন্বয়ে পরিচালিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।’

সব মিলিয়ে ইনসাইট ইসলামিক স্কুলটি যেন স্বপ্ন ও সম্ভাবনার বিস্তৃত এক দিগন্ত। ধন্যবাদ মাহমুদুল হাসান ভাই ও আপনার টিম। আপনাদের উদ্যোগ সত্যিই অনন্য।

লেখক: সাহিত্যকর্মী।

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন