বিশ্ব মানবাধিকার দিবস
সার্বজনীন মানবাধিকার সুরক্ষা হোক
প্রকাশ ঘোষ বিধান
মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের জন্মগত অধিকার, এটা কারো দ্বারা প্রদত্ত নয়। জন্মসূত্রেই সব মানুষ এ অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। অধিকার সুযোগ নয়, অধিকার সমাজের সব শ্রেণি পেশার মানুষের সম অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধানে অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা এই পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্ন, বস্ত্র ও খাদ্য এই তিনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানবাধিকার রক্ষার দায় দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্র বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের অধিকারের দাবি পূরণের দায়ভার বহন করবে।
১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১০ ডিসেম্বর কে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ঘোষণা করে। জাতিসংঘ সর্বজনীন মানবাধিবার ঘোষণা পত্র গ্রহণের পর থেকে প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস বিশ্বজুড়ে পালিত হয়ে আসছে। স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ মানবাধিকার ঘোষণায় স্বাক্ষর করে। প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর বিশ্বের ন্যায় দেশজুড়ে মানবাধিকার দিবস পালিত হয়।
মানবাধিকার প্রসঙ্গটি বর্তমান বিশ্বে অতি পরিচিত ও বহুল আলোচিত। মানবাধিকার রক্ষায় বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো খুবই সোচ্চার। তারপরও আজ দেশে দেশে যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে তাতে মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
পরিবারে নারী পুরুষের বৈষম্য আছে। নারী ও শিশু পাচার, বাল্য বিবাহ, ইভটিজিং এবং ক্রাসফায়ারের মত ঘটনা ঘটছে। পুলিশী কাস্টডিতে নির্যাতন চলছে। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অন্যায় কাজ। তারপরও এটি ঘটেছে। দেশের প্রচলিত আইন, মানবাধিাকার, নৈতিকতা বা কোনো কিছুই এটা কোনোভাবে সমার্থন করে না। অথচ আমাদের দেশে বরাবরই পুলিশী কাস্টডিতে নির্মম ও ন্যাক্কার জনক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে।
আমাদের দেশে অনেক সাধারণ মানুষ মানবাধিকার কি তা জানেন না। এমনকি এদেশের অধিকাংশ মানুষের মানবাধিকার সম্পর্কে খুব একটা স্বচ্ছ ধারণাও নেই। সেজন্য সাধারণত আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ও মানবাধিকার-এ দুটোকে এক করে তালগোল পাকিয়ে ফেলতে দেখা যায়। মানুষ হিসেবে মানবাধিকার রক্ষার জন্য তার কী অধিকার রয়েছে তা জানা দরকার। কারণ মানুষ যদি না জানে কোন কোন ক্ষেত্রে তার অধিকার আছে, তাহলে সে অধিকার দাবী করতে পারবে না।
মানবাধিকার প্রতিটি পদে হোচট খাচ্ছে। মানবাধিকারের শত্রু হচ্ছে শ্রেণি বৈষম্য। ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ, সাদা-কালো, ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণি বৈষম্য ইত্যাদি নীতিগতভাবে বিলুপ্ত ও নিন্দিত হওয়ার পরও টিকে আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষ ধর্ম-বর্ণ, সম্প্রদায়, জাতিভেদে অধিকার ভোগের নির্দেশ করা হয়েছে। যা মানুষের দৈনন্দিক জীবন-যাপনে সম অধিকার ও সম মর্যাদার ক্ষেত্রে কঠিন বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিটি মানুষের স্বাধীন ও সমমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। সব মানুষ সে অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। মানুষের এ অধিকার আদায়ে সচেতন হতে হবে। মর্যাদা ও ন্যায় বিচার সবার জন্য নিশ্চিত করতে হবে। জন্মগতভাবে মানুষ যে মৌলিক অধিকারগুলো লাভ করেছে, সেগুলো যেন পুরোপুরিভাবে রক্ষা করা হয়। এজন্য প্রয়োজন শিক্ষা ও পারিপার্শ্বিক জ্ঞান। এজন্য মানবাধিকার কমিশনসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে। আর এ ব্যাপারে সবাইকে সব সময় সোচ্চার থাকতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
কেএসকে/জেআইএম