সমুদ্রের গভীরে ‘হার্প স্পঞ্জ’ উদ্ভিদ নাকি প্রাণী?
প্রথম দেখায় সামুদ্রিক উদ্ভিদ বলে মনে হলেও, এটি একটি সামুদ্রিক প্রাণী। এর বাংলা নাম পাওয়া না গেলেও ইংরেজিতে ‘হার্প স্পঞ্জ’ ও বৈজ্ঞানিক নাম ‘চন্ড্রোক্লাডিয়া লিরা’ ডাকা হয়। হার্প স্পঞ্জ হলো একটি বিরল এবং চমকপ্রদ সামুদ্রিক স্পঞ্জ। ২০১২ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলের গভীর সমুদ্রে এদের প্রথম দেখতে পাওয়া যায়।
সমুদ্রতলের প্রায় ১০ হাজার ৮০০ থেকে ১১ হাজার ৫০০ ফুট গভীরতায় এদের বসবাস। ঠান্ডা ও অন্ধকার এই পরিবেশে টিকে থাকার জন্য এটি একটি অনন্য শিকারি কৌশল গ্রহণ করেছে।
হার্প স্পঞ্জের গঠন দেখতে একটি হার্প বা বীণার মতো। এর ভাঁজগুলোতে ছোট ছোট কাঁটাযুক্ত হুক থাকে, যা এর ভাসমান শিকারদের বিশেষ করে ছোট ক্রাস্টেসিয়ানকে আটকে ফেলে। শিকার আটকের পর, স্পঞ্জটি বিশেষ কোষ ব্যবহার করে শিকারকে ঘিরে ধরে এবং বাইরে থেকেই হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এই পদ্ধতি তাকে গভীর সমুদ্রের পুষ্টিহীন পরিবেশে টিকে থাকতে সহায়তা করে।
হার্প স্পঞ্জের অনন্য গঠন ও খাদ্যগ্রহণের কৌশল জীববিজ্ঞানে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে। এটি আবিষ্কারের পেছনে ছিল ‘রিমোটলি অপারেটেড ভেহিকল’ এর মাধ্যমে গভীর সমুদ্রের অনুসন্ধান। এই প্রজাতি গভীর সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্ব ও বৈচিত্র্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরা পাঁচ বছর খাবার না খেয়েও বাঁচতে পারে। আরও জেনে অবাক হবেন যে, এরা নিজের আকারের চেয়ে কয়েক গুণ বড় এবং শক্তিশালী প্রাণীদের শিকার করে খেয়ে ফেলতে পারে। গাছের ডালের মতো এই প্রাণীরা তাদের শিকারকে আকরে ধরে রাখে যতক্ষণ না পর্যন্ত ওই প্রাণীর দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে আমিষ শুষে নেওয়া শেষ হয়।
হার্প স্পঞ্জ আমাদের প্রকৃতির অভিযোজনশীলতার অসাধারণ উদাহরণ। গভীর সমুদ্রের অজানাকে জানতে আমাদের আরও আগ্রহী করে তোলে এই ধরনের প্রাণী।
আরও পড়ুন
- ৫০০ বছরেও যে বই পাঠোদ্ধার করতে পারেনি কেউ
- বাস নম্বর ৩৭৫-এর রহস্য আজও অজানা
- নারী হয়ে জন্মালেও এক সময় পুরুষ হয়ে যায় যে প্রাণী
সূত্র: স্মিথসোনিয়ান ওশান পোর্টাল, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ডিসকভারি নিউজ
কেএসকে/এমএস