যে কারণে প্লাস্টিক ব্যাগমুক্ত দিন পালন করা হয়
প্লাস্টিক পরিবেশ দূষণের অন্যতম এক উপাদান। যা শুধু মাটি নয়, পানি, বায়ু সব জায়গায় খারাপ প্রভাব ফেলছে। সর্বত্রই যেন প্লাস্টিকের ব্যবহার। বাজারের ব্যাগ থেকে শুরু করে পানির বোতল, টুথব্রাশ, চিরুনি, চশমা, জুতা, স্যান্ডেল, মোবাইল সেট সব জায়গায় ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিক।
প্লাস্টিক দূষণের কবলে শুধু আমাদের দেশ নয়, সমুদ্র এমনকি বিশ্বের পর্বত শৃঙ্গ এভারেস্টেও পৌঁছে গেছে প্লাস্টিক বর্জ্য। একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ গড়ে সর্বোচ্চ ১২ মিনিট ব্যবহৃত হয়। অথচ এটা পচতে সময় লাগে প্রায় ৯৪০ বছর। গত ৫০ বছরে পৃথিবীতে মাথাপিছু এক টনের বেশি প্লাস্টিকের দ্রব্য উৎপাদন করা হয়েছে। এসব পচনরোধী প্লাস্টিক বর্জ্যের শতকরা ১০ ভাগ পুড়িয়ে ধ্বংস করা হলেও বাকি ৯০ শতাংশের বেশি বিশ্ব পরিবেশকে নানাভাবে বিপন্ন করে তুলেছে।
এসব ক্ষতিকর পচনরোধী বর্জ্য পরিবেশে ৪০০ থেকে ১ হাজার বছর পর্যন্ত থাকতে পারে এবং নানা রকম মাইক্রো বা ন্যানো কণা বা ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ করে পরিবেশে ও মানবস্বাস্থ্যে ভয়ংকর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পৃথিবীতে প্রতি বছর ৪৫ কোটি টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে যোগ হচ্ছে। এ বর্জ্যের ৫১ শতাংশ উৎপাদন হচ্ছে এশিয়া মহাদেশে।
আরও পড়ুন
মূলত এই প্লাস্টিক দূষণ কমাতে এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতেই এমন একটি দিন পালন করা হয়। প্রতি বছর ৩ জুলাই ‘আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগমুক্ত দিবস’ পালন হয়। পরিবেশ ও জীবের উপর প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলায় এই দিবস পালনের মূল লক্ষ্য।
জিরো ওয়েস্ট ইউরোপ ২০০৩ সালে ৩ জুলাই প্লাস্টিক ব্যাগের বিরুদ্ধে একটি প্রচারণা শুরু করে, তারপর ২০১৫ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সারা বিশ্বে একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার কমাতে কিছু নির্দেশনা পাস করে। তারপর থেকে এই দিনটি উদযাপন করা হয়। প্রতি বছর এই দিনটি উদযাপনের উদ্দেশ্য হলো মানুষকে প্লাস্টিক ব্যাগের ক্ষতিকারক দিকটি সম্পর্কে অবগত করানো এবং ভবিষ্যতের জন্য এক প্লাস্টিক মুক্ত সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলা।
প্লাস্টিক হচ্ছে কৃত্রিমভাবে তৈরি পলিমার, যা মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করা হয়। প্লাস্টিক সাধারণভাবে সহজেই বাঁকানো যায়, ক্ষয়রোধী, দীর্ঘস্থায়ী এবং সস্তা। আলেকজান্ডার পার্কস ১৮৫৫ সালে প্রথম মানবসৃষ্ট প্লাস্টিক আবিষ্কার করেন এবং এর নাম দেন পার্কেসিন। এটি তৈরি করা হয়েছিল উদ্ভিদের সেলুলোজ ও নাইট্রিক অ্যাসিডের মধ্যে বিক্রিয়া করে।
তবে ১৯০৭ সালে লিও বেকল্যান্ড সম্পূর্ণ সিনথেটিক প্লাস্টিক আবিষ্কার করেন এবং এর নাম দেন বেকেলাইট। তিনিই প্রথম প্লাস্টিক শব্দটি ব্যবহার করেন। এছাড়া যে দুজন বিজ্ঞানী প্লাস্টিক উৎপাদনে অনন্য অবদান রাখেন, তারা হলেন নোবেলজয়ী হারমেন স্টাওডিংগার (পলিমার রসায়নের জনক) এবং হারমেন মার্ক (পলিমার পদার্থবিদ্যার জনক)। ডুপনট করপোরেশন কর্তৃক উদ্ভাবিত নাইলন ছিল বাণিজ্যিকভাবে সফল সিনথেটিক থার্মোপ্লাস্টিক পলিমার। ক্রমে অ্যাক্রাইলিক, পলিস্টাইরিন, পলিভিনাইল ক্লোরাইড, সিনথেটিক রাবার, পলিইথিলিন (পলিথিন) ইত্যাদি প্লাস্টিকের আবিষ্কারের ফলে জীবনের সব স্তরে প্রয়োজনীয় প্রায় সব দ্রব্য ও দ্রব্যাদির অংশবিশেষ প্লাস্টিক দ্বারা তৈরি হচ্ছে। ধীরে ধীরে এই প্লাস্টিক মিশে গেছে আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত সব কিছুতেই।
আরও পড়ুন
কেএসকে/এএসএম