যে দেশে বিনামূল্যে পাওয়া যায় ইন্টারনেট, ট্রান্সপোর্ট সুবিধা
বিশ্বের এমন একটি দেশ আছে যেখানে নাগরিকরা বিনামূল্যে ইন্টারনেট পরিষেবা পান। ভাবতেও অবাক লাগছে নিশ্চয়ই? যেখানে সব দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে মাসে টাকা খরচ করতে হয়। একবিংশ শতাব্দীতে এসে সেখানে একটি দেশের সব বাসা বাড়ি, ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, পেট্রোল পাম্প, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গায় ইন্টারনেট ফ্রি ব্যবহার করা যায়।
শুধু তাই নয়, এই দেশে পাবলিক ট্রান্সপোর্টও একেবারে ফ্রি। আমাদের মাসের বেশ বড় একটি বাজেট রাখতে হয় ট্রান্সপোর্ট, ইন্টারনেট বিলের জন্য। তবে তা যদি হয় একেবারে বিনামূল্যে অর্থাৎ পুরো মাসে এই খাতে আপনাকে এক টাকাও খরচ করতে হবে না, তাহলে তো খুবই ভালো হয়।
যেখানকার বাসিন্দাদের বিনামূল্যে ইন্টারনেট দেয় সে দেশের সরকার। শুধু তাই নয়, সব কিছুই সেখানে ডিজিটাল। সব কিছুই হয় ইন্টারনেটে। দেশটির নাম এস্তোনিয়া। ইউরোপের একটা ছোট্ট দেশ। রাজধানীর নাম তাল্লিন। এদেশে মানুষকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে এক পয়সাও খরচ করতে হয় না।
এস্তোনিয়া পৃথিবীর প্রথম ই-কান্ট্রি। ভোট দেয়া থেকে শুরু করে সিগনেচার পর্যন্ত সবকিছুই ডিজিটাল সেবা। এমনকি দেশটির ই-রেসিডেন্ট পর্যন্ত হয়ে যেতে পারবেন বাংলাদেশে বসেই। এই দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে।
- আরও পড়ুন
যে দেশে কোনো শিশুর জন্ম হয় না
২৪ বছর আগে ২০০০ সাল থেকেই এই দেশে রয়েছে বিনামূল্যে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা। এই দেশের সমস্ত স্কুল এবং কলেজে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সরবরাহ ২০০০ সাল থেকেই রয়েছে। এখানকার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করেন।
এখানে অনলাইনে প্রতিটি সুবিধা পাওয়া যায়। ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া থেকে শুরু করে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য অর্থ প্রদান সবই হয় ইন্টারনেটে৷ এস্তোনিয়ান নাগরিকরাও অনলাইনে অর্থ প্রদান করে।
আমেরিকার একটি বেসরকারি সংস্থা ফ্রিডম হাউসের মতে, সারাবিশ্বে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে এস্তোনিয়া একটি মডেল দেশ। বিনামূল্যে ইন্টারনেট ছাড়াও, আরও অনেক জিনিস রয়েছে যা এই দেশটিকে বিশেষ করে তোলে।
ইউরোপের উত্তর-পূর্বে বাল্টিক সাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এই দেশটি একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি অংশ ছিল। ১৯৯১ সালে এই দেশ রাশিয়া থেকে পৃথক হয়। এরপর এখানকার অর্থনীতির দ্রুত উন্নতি হয়। এস্তোনিয়ায় শুধু ইন্টারনেটই বিনামূল্যে নয়, এখানকার মানুষ পাবলিক ট্রান্সপোর্টও পান বিনামূল্যে।
২০১৩ সালে দেশটির রাজধানী তালিনের তৎকালীন মেয়র এডগার সাভিসার প্রথম এই বিনামূল্যে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের পরিষেবা চালু করেন। এর পেছনে তার যুক্তি ছিল যে, রাশিয়ার অংশ থাকাকালীন যেহেতু নিজেদের মধ্যে অনেক বিভেদ তৈরি হয়েছিল, তাই দেশের জনগণকে যতটা সম্ভব মেলামেশার সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেছিলেন তিনি।
প্রথমে এখানে বিনামূল্যে পরিবহণের জন্য গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং বিপুল সমর্থন পাওয়ার পরে, বাস এবং ট্রামগুলো জনসাধারণের জন্য বিনামূল্যে করা হয়েছিল। এস্তোনিয়া ছাড়াও ফ্রান্স ও জার্মানিও বায়ু দূষণ মোকাবিলায় গণপরিবহণ বিনামূল্যে করার কথা ভাবছে। যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও বিনামূল্যে বাস চলে।
এস্তোনিয়ার অর্থনৈতিক মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য ছিল দেশের প্রতিটি নাগরিক আগামী এক বছরের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে শিখতে পারে। সারাদেশে ৩ হাজারের বেশি ফ্রি ওয়াই-ফাই স্পট রয়েছে। কফি শপ, পেট্রোল পাম্প, রেস্তোরাঁ, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, হোটেল এবং সব সরকারি অফিসে বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই রয়েছে। এখানে নির্বাচনে ভোটদানও হয় অনলাইনে। অর্থাৎ ঘরে বসেই নাগরিকরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন।
বিশুদ্ধ বাতাসের কথা বললেও এস্তোনিয়ার নাম সবার উপরে চলে আসে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গত বছর প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এস্তোনিয়া এমন কয়েকটি দেশের মধ্যে রয়েছে যেখানে বায়ুর গুণমান সবচেয়ে ভাল। এছাড়া ফিনল্যান্ড, সুইডেন, কানাডা, নরওয়ে ও আইসল্যান্ডের নাম রয়েছে তালিকায়।
মুক্তমত কিংবা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও দেশটি পৃথিবী সেরা। যে কোনো ধরনের মতামত জানানোর সুযোগ রয়েছে। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে জেলে দেবে না, এমনকি কাউ অযথা হয়রানিও করবে না। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশটি সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হয়েছে ১৯৯১ সালে। স্বাধীনতার মাত্র ২৬ বছরের মাথায় সফলতার শীর্ষে পৌঁছে গেছে।
সূত্র: ওয়ারিড, ওয়াই-ফাই গ্লোবাল
কেএসকে/জেআইএম