গয়নার লোভে সিরিয়াল কিলার হয়ে ওঠেন বাঙালি বধূ!
বিশ্বের ইতিহাসে অসংখ্য সিরিয়াল কিলার আছেন। যাদের অত্যাচার এবং নির্মমতা যুগে যুগে ভয় ধরিয়েছে সব মানুষকে। বিশ্বের প্রথম সিরিয়াল কিলার জ্যাক দ্য রিপার থেকে শুরু করে সর্বকনিষ্ঠ সিরিয়াল কিলার ৮ বছরের অমরজিৎ সাদা। সবাই সৃষ্টি করেছেন কলঙ্কিত এক অধ্যায়। তবে বাংলায় শুধু পুরুষ নয় নারী সিরিয়াল কিলারও ছিলেন।
সাধারণ এক গৃহবধূ থেকে হয়ে ওঠেন ভয়ংকর এক সিরিয়াল কিলার। গয়নার লোভে একের পর এক নারীকে হত্যা করেছেন তিনি। তার নাম সায়ানাইড মল্লিকা। এই নামেই তাকে চিনেছিল ভারত সহ গোটা বিশ্ব। এক সাধারণ পরিবারের মেয়ে। অভাব ছিল যার নিত্যসঙ্গী। আর সেই অভাব তাকে এমন কাজ করিয়েছিল, আঁতকে উঠেছিল গোটা বিশ্ব।
অভাবের সংসারেই তার জন্ম। আবার তার বিয়েও হয়েছিল অভাবের এক সংসারে। স্বামী দর্জির কাজ করতেন। সংসারের অনটন দূর করতে তাকেও পরিচারিকার কাজ করতে হত। তবে সেই কাজের জন্য তিনি হীনমন্যতায় ভুগতেন। কেডি কেম্পাম্মা। কর্নাটকের কগ্গলীপুরার বাসিন্দা। পরে আইনের চোখে তার নাম হয়েছিল সায়ানাইড মল্লিকা। সাধারণ নারী থেকে সিরিয়াল কিলার হয়ে উঠেছিলেন তিনি। দেশের প্রথম নারী সিরিয়াল কিলার। তার কাণ্ড শুনে শিউরে উঠেছিল গোটা সমাজ।
বিত্তশালীদের পরিবারে পরিচারিকার কাজ করতে যেত কেডি। বিত্তশালীদের জীবনযাপন দেখে নিজেকেও সেভাবেই সাজাতে চেয়েছিল সে। তবে পরিচারিকার কাজ করে তা কী আর হয়! আর তখনই নিজের প্রয়োজন মেটাতে চুরি শুরু করে সে।
একটা সময় চুরির দায়ে ধরা পড়ে যায় কেডি। জেল খাটতে হয়। তার পর আর স্বামীর ঘরে থাকতে পারেনি সে। পেট চালাতে বিপথে চালিত হয়। চিট ফান্ডের ফাঁদ পেতে সাধারণ মানুষের টাকা হাতাতে চেয়েছিল কেডি। তবে তাতে সে সফল হয়নি। ধীরে ধীরে অন্ধকার জগতে পা রাখে কেডি।
আরও পড়ুন
বিত্তশালী নারীদের টার্গেট করা শুরু করে সে। বেঙ্গালুরু শহরের বিভিন্ন মন্দিরগুলোই ছিল তার টার্গেট পয়েন্ট। সন্ন্যাসিনীর বেশ ধরে বিভিন্ন মন্দিরে মন্দিরে ঘুরতেন তিনি। মন্দির আসা বিভিন্ন নারীদের দেখে বোঝার চেষ্টা করতেন, কে কে পারিবারিক সমস্যার কারণে অবসাদে আছেন।
এমন নারীদের খুঁজে বের কর; তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতেন সাইনাইড মল্লিকা। তাদের বিশ্বাস অর্জন করে ফাঁকা কোনো মন্দিরে নিয়ে যেতেন। সেখানে সমস্যা সমাধানের জন্য যজ্ঞ করার পরামর্শ দিতেন। তবে তার শর্ত থাকত একটিই, তাদের আলমারিতে থাকা সবচেয়ে দামি শাড়ি এবং সব গয়না পরে আসতে হবে। তার কথা মেনে যে নারী ফাঁকা মন্দিরে আসতেন, সুযোগ বুঝে সায়ানাইড মেশানো পানি খাইয়ে হত্যা করে শাড়ি-গয়না নিয়ে পালিয়ে যেতেন সাইনাইড মল্লিকা।
২০০৮ সালে নাগবেণী নামের এক নারীকে খুন করে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় কেডি কেম্পাম্মা। সাত বছরে সাতটি খুন করেছিল কেডি। তিনিই ভারতের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রথম নারী সিরিয়াল কিলার। তার জীবনী নিয়ে নির্মিত ছবি ‘সায়ানাইড মল্লিকা’ প্রকাশ পেয়েছে। এ ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছে সানজানা প্রকাশ।
গ্রেফতারের পর তিনি জানান, সিনেমার মাধ্যমে তিনি সায়ানাইড দিয়ে হত্যা সম্পর্কে জানতে পারেন। এই পদ্ধতির কারণেই তিনি ‘সায়ানাইড মল্লিকা’ নামে আলোচিত হয়ে ওঠেন।
তিনি পুলিশকে আরও জানান, যখন কোনো নারী ওই পানি খেতে না চাইতেন; তখন তাদের নাক চেপে ধরে জোর করে তা খাওয়াতেন তিনি। ভিকটিম কখন মারা যাবেন, সেজন্য অপেক্ষা করতেন; তারপর অর্থ ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করতেন সাইনাইড মল্লিকা। প্রতিটি খুনের পরই তিনি বেশ-ভূষা পরিবর্তন করতেন।
আরও পড়ুন
কেএসকে/জেআইএম