কবরস্থানে রহস্যময় মূর্তি, চোখ থেকে পড়তো পানি
কবরস্থান একটি পবিত্র জায়গা হলেও সবার মধ্যেই এই জায়গা নিয়ে কিছুটা ভীতি কাজ করে। কেমন গা ছমছমে নিস্তব্ধতা। নানা ভীতিকর কাল্পনিক গল্পও চর্চিত আছে এই স্থান নিয়ে। তবে এর মধ্যেই যদি থাকে রহস্যময় এক মূর্তি, যাকে নিয়েও গল্পের শেষ নেই।
মূর্তিটি নারী না পুরুষের সে বিষয়ে নিশ্চিত নন কেউই। স্থানীয়েরা অনেকে একে ‘মৃত্যুর দেবী’ হিসেবে কল্পনা করেন। কারও মতে আবার এই মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভয়ংকর অভিশাপ। আমেরিকার ওহায়োর ক্লিভল্যান্ডে লেক ভিউ নামে একটি কবরস্থান রয়েছে।
এই কবরস্থানে ১৩ নম্বর লটের দিকে এগোলেই দেখা যাবে তামার বিশাল এক মূর্তি। ১৩ সংখ্যাটিকে অশুভ বলে মানেন অনেকেই। এই মূর্তির সঙ্গে অশুভ সংখ্যার কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। ক্লিভল্যান্ডের কবরস্থানে ১০ হাজারের বেশি কবর রয়েছে। কিন্তু যে এলাকায় হাসেরত পরিবারের কবর রয়েছে সেখানেই তৈরি করা হয়েছিল এই তামার মূর্তি।
ইতিহাসবিদদের অনুমান, ১৯২৪ সালে হার্মান এন ম্যাটজ়েন নামে এক কারিগর তামার এই মূর্তি গড়েছিলেন। স্থানীয়দের অনুমান, হাসেরত পরিবারের উদ্দেশে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্যই মূর্তিটি তৈরি করেছিলেন তিনি। ক্লিভল্যান্ডের খ্যাতনামী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিল হাসেরত পরিবার। চার দশকের বেশি সময় ধরে ব্যবসা বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ওই পরিবারের সদস্যেরা। পরিবারের কেউ মারা গেলে তাদের এখানে কবর দেওয়া হত।
মূর্তির নিচে ইংরেজি হরফে খোদাই করা রয়েছে হাসেরত পরিবারের নাম। মূর্তির পিছন দিক থেকে দু’দিকে ছড়িয়ে রয়েছে দু’টি ডানা। ডানা দু’টির মুখ সামান্য নীচের দিকে ঝোঁকানো। মূর্তিটি দু’হাত দিয়ে একটি নিভে যাওয়া মশাল ধরে রয়েছে। মশালটি আবার উল্টো ভাবে ধরা। অনেকের ধারণা, ‘মৃত্যুর দেবী’র মূর্তি সেটি। জীবনের আলো নিভে যাওয়ার প্রতীক হিসাবেই খোদাই করা হয়েছে মশালটি।
কবরস্থানের মূর্তিটি আদতে নারী না পুরুষ সে বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই মূর্তি মনুষ্যত্বের প্রতীক। কোনো নির্দিষ্ট লিঙ্গপরিচয় নয়, মনুষ্যত্বই চরম সত্য, এই ধারণা থেকেই মূর্তির এমন আদল গড়ে তুলেছেন হার্মান।
হার্মান বিশ্বাস করতেন, মৃত্যুর পর সব কিছু শেষ হয়ে যায় না। অমরত্বের ধারণায় বিশ্বাস করতেন তিনি। মূর্তি নির্মাণের সময় সেই ছাপই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন হার্মান। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, এই মূর্তিটি আসলে ‘দ্য অ্যাঞ্জেল অব ডেথ ভিক্টোরিয়াস’-এর।
মূর্তির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ‘অভিশাপ’, এমনটা মনে করেন স্থানীয়দের একাংশ। তাদের দাবি, মূর্তির সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় সারা শরীরে অদ্ভুত শিহরণ খেলে যায় তাদের। এমনকি মূর্তির কোলে বসে পড়লে মৃত্যু নিশ্চিত বলেও বিশ্বাস করেন স্থানীয়েরা। মূর্তি সম্পর্কে নানা রকম কাহিনি জড়িয়ে থাকলেও ক্লিভল্যান্ডে এই মূর্তিটি দেখতে কবরস্থানে ভিড় জমান পর্যটকেরা।
তামার মূর্তির দিকে এক নজরে তাকালে মনে হয় তার মুখ যেন ভাবলেশহীন। চোখ থেকে গলা পর্যন্ত কালো দাগ নেমে গিয়েছে। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, মূর্তির কান্নার দাগ সেটি। স্থানীয়দের একাংশ মনে করেন, বহু বছর আগে তামার মূর্তির চোখ থেকে অনবরত জল ঝরে পড়ত। মূর্তিও নাকি কাঁদত! সেই চোখের জল মূর্তির গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ত গলায়। তামার উপর জলের ধারা বয়ে যাওয়ার ফলে কালো দাগের সৃষ্টি হয়েছে।
কেউ আবার মনে করেন, মূর্তির মুখের উপর কালো দাগগুলি আদতে কারিগরেরই সৃষ্টি। এই ধরনের দাগ রয়েছে মূর্তির ডানার উপরেও। প্রিয়জনকে হারানোর যে শোক তা ফুটিয়ে তুলতেই মূর্তির উপর এমন কালো দাগ সৃষ্টি করেছিলেন হার্মান। সে কারণে মূর্তিটি ‘ব্ল্যাক অ্যাঞ্জেল’ নামেও পরিচিত।
আরও পড়ুন
- ভাইরাল খুদে ভ্লগার, আসল পরিচয় জানেন কি?
- তার এক হাতের ওজন ৯ কেজি!
- পৃথিবীর শেষ প্রান্তে অবস্থিত যে শহর
সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল
কেএসকে/এমএস