চল্লিশের বেশি কার্টুন চরিত্রে মিমিক্রি করেন অরপিতা
জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্রের কণ্ঠ অনুকরণ বা মিমিক্রি এবং পাপেট্রি করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সামিহা অরপিতা। কখনো মিনা কার্টুনের চরিত্র, কখনোবা শিনচ্যান, ডোরেমন, সিসিমপুরসহ নানা চরিত্রে মিমিক্রি করছেন তিনি।
অরপিতা জানান ছোট থেকে কার্টুন দেখতে দেখতে মিমিক্রি করা শুরু করেন। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এই বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠেন। করোনাকালীন সময়ে বিনোদনমূলক কন্টেন্ট নির্মাণের চিন্তা থেকে নিজের পারদর্শিতার বিষয় মিমিক্রি এবং পাপেট্রি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও আপলোড করে ব্যাপক সারা পেয়েছেন নানা মহলে। সম্প্রতি মিমিক্রি এবং পাপেট্রি নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মামুনূর রহমান হৃদয়।
জাগো নিউজ: মিমিক্রির পথ যাত্রা কীভাবে শুরু?
সামিহা অরপিতা: আমার মিমিক্রির যাত্রাটা মূলত তখন থেকে শুরু যখন আমি জানতাম না যে এটাকে মিমিক্রি বলে। ছোটবেলা থেকেই কার্টুন দেখতে ভীষণ ভালোবাসি। কার্টুন পাগল বললেই চলে। কার্টুনে যখন চরিত্রগুলো কথা বলত তখন বেশ আকর্ষণীয় লাগতো। পঞ্চম শ্রেণিতে থাকতে শিনচ্যান কার্টুনটা আমার বেশ প্রিয় হয়ে ওঠে। তখন প্রথম এই চরিত্রের কণ্ঠ অনুকরণ করি। প্রায় সময় বড় বোন, বন্ধুদের কাছে শিনচ্যানের কণ্ঠ শোনাতাম। সবার মাঝে নিজের চেয়ে বেশি শিনচ্যান নামে পরিচিত হয়ে উঠি। করোনাকালীন সব বন্ধ থাকায় বেশ অবসর ছিল। সেই সময় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নানা মানুষের প্রতিভা দেখতাম কিন্তু মিমিক্রি যে প্রতিভা হতে পারে তা ভাবিনি। একদিন হঠাৎ ভিন্ন কার্টুন চরিত্রের মিমিক্রি ভিডিও করি।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিবো না ভেবেও শেষ পর্যন্ত দেই। ভিডিওটিতে বেশ সাড়া পাই, অনেকেই অনুপ্রেরণা দেয়, প্রশংসা করে এটি চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেযন। তারপর নিজের একটি ফেসবুক পেজ খুলি ‘শিনচ্যান অরপিতা’ নামে । ওখানে মিমিক্রির ভিডিও করে পোস্ট করা শুরু করি। এভাবেই শুরু হয় আমার মিমিক্রির যাত্রা।
জাগো নিউজ: অনুপ্রেরণা কীভাবে পেয়েছেন?
সামিহা অরপিতা: শিনচ্যানের গলা অনুকরণ করার পর একদিন ভাবলাম আমি যদি এই চরিত্রের ভয়েস পারি তাহলে অন্যগুলোও পারতে পারি। তখন ইউটিউবে দেখি একজন ভয়েস আর্টিস্টের ভিডিও, যিনি নানা কার্টুনে ভয়েস দিয়ে থাকেন। ব্যাপারটা দেখে বেশ আকর্ষিত লাগলো। সেখান থেকে বেশ অনুপ্রেরণা পাই।
আরও পড়ুন
• বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত ৫ মাছ, খেলে নিশ্চিত মৃত্যু
জাগো নিউজ: ভয়েস অনুকরণ করা যে মিমিক্রির অংশ এটা জানলেন কবে?
সামিহা অরপিতা: প্রথম যখন ভয়েস অনুকরণ করি তখন নিজেও জানতাম না এটাকে মিমিক্রি বলে। পরে নানা প্ল্যাটফর্ম ও গণমাধ্যমে দেখে জানতে পারি এটাকে মিমিক্রি বলে।
জাগো নিউজ: কোন কোন চরিত্রের গলায় কথা বলতে পারেন? পছন্দের চরিত্র কোনটি?
সামিহা অরপিতা: শিনচ্যান, ডরেমন, মিনা কার্টুন, সিসিমপুরের ইকরি, টুকটুকি, নিনজা হাতোরি, ছোটা ভীম ইত্যাদি। প্রায় চল্লিশের অধিক কার্টুন চরিত্রের ভয়েস মিমিক্রি করার চেষ্টা করেছি। এদের মধ্যে আমার পছন্দের চরিত্র শিনচ্যান।
জাগো নিউজ: পরিবার আপনাকে কতটা উৎসাহ জুগিয়েছে?
সামিহা অরপিতা: পরিবার থেকে ভালোই উৎসাহ পেয়েছি। আমার বড় বোন আমার সাহস বেশি জুগিয়েছেন। প্রথমে বেশি পেয়েছি। এখন এসবের পাশাপাশি পড়াশোনার প্রতি বেশি মনোযোগের কথা বলে থাকেন পরিবার।
জাগো নিউজ: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সারা কেমন পেয়েছেন?
সামিহা অরপিতা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সারা পেয়েছি। আমার ভক্তদের ভালোবাসা ও সাপোর্টের জন্যই আমি আজকে এখানে বলে আমি মনে করি। মাঝে মাঝে বাধাও এসেছে কিন্তু বাধা কে অতিক্রম করে ইতিবাচক দিক নিয়ে কাজ চালিয়ে গিয়েছি।
জাগো নিউজ: মিমিক্রি করতে গেলে চর্চার বিষয় থাকে। শেখার জন্য কীভাবে অনুশীলন করা দরকার বলে আপনি মনে করেন?
সামিহা অরপিতা: মিমিক্রির করতে প্রধানত প্রয়োজন গলার আওয়াজ। অনুশীলন করতে ভয়েসের বিভিন্ন স্কেলে কথা বলার অনুশীলন করা ভালো। সেটাই আওয়াজে ভালো প্রভাব পরে।
জাগো নিউজ: মিমিক্রি করে এখন পর্যন্ত কী কী পুরষ্কার জিতেছেন?
সামিহা অরপিতা: মিমিক্রি বিষয়টা বাংলাদেশে খুব একটা প্রচলিত নয়। তাই মিমিক্রি সেগমেন্ট বেশ কম দেখা যায়। বিভিন্ন কম্পিটিশনে মিমিক্রি সেগমেন্টে পুরষ্কার জিতেছি। এছাড়াও নানা ইভেন্টে স্টেজ পারফরম্যান্স করে সম্মাননা পেয়েছি।
জাগো নিউজ: ‘মিমিক্রি’ থেকে ‘পাপেট্রিয়ার’ হয়ে উঠলেন কীভাবে?
সামিহা অরপিতা: মিমিক্রি করার সময় এক জায়গায় পাপেট শো দেখি। ব্যাপারটা বেশ মজাদার লাগে আমার কাছে। সেখান থেকেই ইচ্ছে জাগে পাপেট্রি করার। তখন একটা পাপেট পাই তার নাম রাখি চিরো। আমার ও চিরোর ছোটখাটো খুনসুটি কন্টেন্ট আকারে ফেসবুকে দিতে থাকি। নানা ইভেন্টে পারফর্মেন্স করতে গেলেও চিরো থাকে সঙ্গে। সেখান থেকে চিরো ব্যাপক পরিচয় পায় এবং শুরু হয় আমার পাপেট্রির যাত্রা।
জাগো নিউজ: ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
সামিহা অরপিতা: ছোটবেলা থেকে মহাকাশের প্রতি বেশ আগ্রহ। তাই অ্যাস্ট্রোনমি নিয়ে পড়তে চাই। যদিও বাংলাদেশে এটি প্রচলিত নয়। তবু চেষ্টা চালিয়ে যাবো। তার পাশাপাশি মিমিক্রি, পাপেট্রি এবং ভয়েস ওভারের কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। ভয়েস ওভার কাজটাকে একটা আধুনিক পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরও পড়ুন
• এটিএম মেশিন থেকে প্রথম টাকা তোলেন যিনি
• বাঁশ চটায় চলে বেদ সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকা
কেএসকে/জেআইএম