নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে স্মার্ট বাংলাদেশ
২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশকে রূপান্তরের রূপকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রতি বছর ১২ ডিসেম্বর পালন করা হয় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস’। এবারের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ দিবসে বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা নারীদের ভাবনা জানাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. জামিন মিয়া—
প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন নারী স্মার্ট বাংলাদেশকে বাস্তবে রূপ দেবে
সুরাইয়া আক্তার
অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্পের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ গড়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেক্টরে আজকে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি মনে করি, এটি একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। এরই মধ্যে আমরা দেখেছি ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন সফল হয়েছে। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার হলে নারী-পুরুষের বৈষম্য থাকবে না বলে আমার বিশ্বাস। কারণ প্রযুক্তি নারী-পুরুষ আলাদা করতে জানে না। ১৯৮৪ সালে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। সরকার নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। দেশের অর্ধেক নারী হওয়ায় তারা অর্থনীতিতে ভীষণ অবদান রেখে চলেছে। হার পাওয়ার প্রজেক্ট এবং মায়া, স্বস্তি প্রভৃতি ডিজিটাল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস ও অ্যাপের প্রযুক্তিগত সহায়তায় নারীকে গতিশীল করা হচ্ছে। এফ-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নারীরা ঘরে বসে সহজেই দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। বর্তমানে যারা এফ-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত আছেন তাদের ৭০ শতাংশই নারী। বতর্মানে দুহাজার ইউনিয়নে নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে ই-কমার্সে যুক্ত করার ব্যবস্থা এরই মধ্যে গৃহীত হয়েছে। পল্লী উন্নয়ন সেবা পৌঁছে যাওয়ায় নারীরা এর সুবিধা ভোগ করছেন। এভাবে তারা প্রাত্যহিক জীবনকে সহজ করে নিচ্ছেন। নারীদের যদি প্রযুক্তিগত সেবা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় তাহলে ২০৪১ সালের মধ্যে সহজেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিমার্ণ রূপকল্প বাস্তবে রূপান্তর করা সহজ হবে। এ বছরের ৮মার্চের প্রতিপাদ্য ছিল 'ইন্টারনেটের দুনিয়া সবার'।এই প্রতিপাদ্যেই হোক নারী উন্নয়নের মূল মন্ত্র।
আরও পড়ুন: অর্থের বিনিময়ে পছন্দমতো বউ কেনা যায় যে দেশে
নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে স্মার্ট বাংলাদেশ
ড. আকলিমা হোসেন কুহেলী
অধ্যাপক, সংগীত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ নারীর সাফল্য ও অর্জন বিশ্বজুড়ে নন্দিত। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের নারীদের অধিকার আদায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। যার পথ অনুসরণ করে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়ন, কর্মসংস্থান ও সমধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন নীতিমালা গ্রহণ করেছেন। আজ আমরা একটি নতুন যুগে দাঁড়িয়ে আছি। এমন একটি যুগ যেখানে ডিজিটাল দেশ স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে। এই রূপান্তরে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা থাকবে নারীর,যার অংশগ্রহণ ছাড়া সফলতা অনিশ্চিত। আমি মনে করি একজন আদর্শ নারী সমাজের মেরুদণ্ড। তারা একদিকে যেমন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল এবং গণিত শাখায় নেতৃত্ব দিচ্ছে অন্যদিকে তেমনি স্মার্ট অবকাঠামো, নগর পরিকল্পনা ও সম্পদ ব্যবস্থাপনায় অনন্য ভূমিকা রাখছে। তারা স্মার্ট অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সবার জন্য আর্থিক সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নের উন্মুক্ত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। নারীর শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্ব সমাজে অত্যন্ত প্রশংসিত। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নারীরা অনন্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে এবং তারই ধারাবাহিকতায় রচিত হবে স্মার্ট বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
নারীকে প্রযুক্তিক্ষেত্রে দক্ষ করতে হবে
আলো আরজুমান বানু
সহকারি অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে এক সাশ্রয়ী, টেকসই ও বুদ্ধিদীপ্ত জ্ঞানভিত্তিক উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নারীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার চারটি স্তম্ভ দেখে তা অনুধাবন করা যায়। সেগুলো হলো- ১.স্মার্ট সিটিজেন ২. স্মার্ট ইকোনমি ৩.স্মার্ট গর্ভমেন্ট ৪ স্মার্ট সোসাইটি। এই লক্ষ্যে নারীদের স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ করে তুলতে পারলে নতুন প্রজন্মের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পাশাপাশি উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ভিশন পূরণে তা অত্যন্ত ফলপ্রসু ভূমিকা রাখবে। তাছাড়া নেপোলিয়ান বোনাপার্টের উক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলা যায়-তোমরা আমাকে প্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ মা দাও, আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ উপহার দেব। প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে একজন নারী যত বেশি দক্ষ হবেন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তত বেশি ভূমিকা রাখতে পারবেন। সুতরাং প্রযুক্তিখাতে নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকারের নজর দেওয়া আবশ্যক।
আরও পড়ুন: প্রতিবন্ধী দিবস/বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি
বাংলাদেশের নারীগণ বিশ্বের প্রযুক্তি খাতের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম
নাহার কবির, কবি ও শিক্ষক
সম্প্রতি আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করলাম। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করার ঘোষণা দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে নারীগণকে অধিক হারে প্রযুক্তি খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। জনগণের অর্ধেককে প্রযুক্তি খাত থেকে দূরে রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ এখন সুবিদিত। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারীদের সম্পৃক্ত করার প্রথম পদক্ষেপ হবে বিজ্ঞান শিক্ষায় নারীদেরকে উৎসাহিত করা। নারীগণও একটু উৎসাহ পেলে একটু সুযোগ পেলে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাংলাদেশকে প্রযুক্তি খাতে নেতৃত্ব দিতে পারবে। বর্তমানে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, এই শিক্ষাকে গুণগত ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় রূপান্তরিত করে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বের প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের নারীগণ নেতৃত্ব দিতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। বর্তমানে আমাদের সামনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যে সব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা মোকাবেলায় এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভ করতে হলে নারী পুরুষ নির্বিশেষে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। তাহলেই আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো এবং স্মার্ট বাংলাদেশের সাফল্য সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে পারবো।বাংলাদেশে নারীগণ ফ্রিল্যান্সিং থেকে শুরু করে উচ্চপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হিসেবেও কাজ করছে এর সংখ্যা ও ব্যাপ্তি বাড়ানোর মধ্য দিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
কেএসকে/জেআইএম