আজকের এই দিনে
কথাসাহিত্যিক মনোজ বসুর জন্ম
মনোজ বসু ছিলেন বিংশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট বাঙালি কথাসাহিত্যিক। ১৯০১ সালের ২৫ জুলাই ব্রিটিশ ভারতের বর্তমান বাংলাদেশের যশোর জেলার কেশবপুর থানার ডোঙ্গাঘাট গ্রামের এক মধ্যবিত্ত একান্নবর্তী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
নিজ গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯১৯ সালে কলকাতার রিপন কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পাস করেন। এরপর খুলনার বাগেরহাট কলেজে ভর্তি হন। এখানে পড়ার সময়ই তিনি বিপ্লবী দল যুগান্তরের সংস্পর্শে আসেন ও স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯২২ সালে তিনি আইএ পাস করেন। ১৯২৪ সালে কলকাতার সাউথ সুবারবন কলেজ, বর্তমানের আশুতোষ কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। পরবর্তীতে আইন পড়া শুরু করলেও আর্থিক কারণে তা শেষ করতে পারেননি।
কলকাতার ভবানীপুরে সাউথ সুবারবন স্কুলে শিক্ষকতা নিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন এবং দীর্ঘদিন এখানে শিক্ষকতার পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তক রচনায় মনোনিবেশ করেন। প্রকাশনার জন্য পরবর্তীতে নিজের প্রকাশনা সংস্থা ‘বেঙ্গল পাবলিশার্স’ প্রতিষ্ঠা করেন। শেষে সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে শিক্ষকতা পেশা পরিত্যাগ করেন।
সাহিত্যের প্রতি তার অনুরাগ বাল্যকাল থেকেই ছিল। সাত বছর বয়স থেকে কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন। ছাত্রাবস্থায় সহপাঠীদের নিয়ে হাতে লিখে দেওয়াল পত্রিকা বের করতেন। পত্রিকায় প্রকাশিত তার লেখা প্রথম গল্প ছিল ‘গৃহহারা’। প্রকাশনা ও সম্পাদনা কাজের পাশাপাশি তিনি নিজে উপন্যাস রচনা শুরু করেন। তার প্রতিটি উপন্যাসে দেশ, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের মানুষের দৈনন্দিন খুঁটিনাটি সমস্যা, বাংলার নিসর্গ চিত্র, গ্রামীণ মানুষের জীবনাচরণ চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে।
মনোজ বসু ছিলেন একজন প্রথম শ্রেনীর ছোটগল্পকার। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো- ভুলি নাই, সৈনিক, আগস্ট, বাঁশের কেল্লা। গল্পগ্রন্থ- বনমর্মর, নরবাঁধ, দেবী কিশোরী, পৃথিবী কাদের, কাঁচের আকাশ, খদ্যোত, দিল্লি অনেক দূর। উপন্যাস ও অন্যান্য গ্রন্থ- আমি সম্রাট, সেই গ্রাম সেইসব মানুষ, নবীন যাত্রা, ওগো বধূ সুন্দরী, এক বিহঙ্গী, কিংশুক, মায়াকন্যা, একদা নিশীথকালে, জলজঙ্গল, বৃষ্টি বৃষ্টি, আমার ফাঁসি, রক্তের বদলে রক্ত, রূপবতী, বন কেটে বসত, শত্রুপক্ষের মেয়ে ইত্যাদি।
সাহিত্যকীর্তির জন্য স্বীকৃতি ও পুরস্কার লাভ করেছেন। ১৯৬৬ সালে তিনি বিখ্যাত ‘নিশিকুটুম্ব’ উপন্যাসের জন্য ভারতের সাহিত্য সম্মাননা-সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংহ পুরস্কারে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শরৎচন্দ্র পদক ও পুরস্কারে' সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৮৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর ৮৬ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
কেএসকে/জেআইএম