কোটিপতি হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি
জীবনে সাফল্য পেতে শুধু পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান যথেষ্ট নয়। এমনকি অনেক বড় ডিগ্রি না থাকলে যে আপনি সফল হতে পারবেন না এমন ধারণাও ভুল। ২১ বছরের ইনায়া ম্যাকমিলান তারই প্রমাণ দিলেন আরেকবার।
আমেরিকার মিসৌরির সেন্ট লুইসের ২১ বছর বয়সী ইনায়া। মাত্র ২০ বছর বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। অর্থাভাবে পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। পড়াশোনার পাশাপাশি আয়ার কাজও করেছেন তিনি। তবে বেশিদিন পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি তিনি।
সেভাবে কোনো বিশেষ ডিগ্রি তার কাছে ছিল না, যার জোরে ভালো চাকরি পেতে পারতেন। কিন্তু স্কুল ছাড়ার ছয় মাসের মধ্যেই নিজের পরিশ্রমে ৩০ লাখ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩২ কোটি ৬২ টাকা আয় করেন তিনি। এখন তিনি অন্যদের কীভাবে কোটিপতি হওয়া যায় সে ব্যাপারেই পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন: ১২ বছরে ১২ সন্তানের জননী তিনি
সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেলে নিজের উত্থানকাহিনি শেয়ার করেন ইনায়া। কেউ চাইলে কীভাবে তার দেখানো পথে হেঁটে প্রচুর আয় করতে পারেন, সে বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছেন ইনায়া। মাত্র ৯ মিনিটের এই ভিডিও এরই মধ্যে ৯ লাখ মানুষ দেখেছেন।
ভিডিওতে ইনায়া জানিয়েছেন, স্কুল ছাড়ার পর প্রথম প্রথম তিনি বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইট এবং শেয়ার বাজারের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতে বিশেষ সুবিধা হয়নি। শেষ পর্যন্ত অনেক ভেবে একটি বিশেষ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন ইনায়া। এরপরই আয়ের পথ খুঁজে পান তিনি।
ইনায়া যে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, তাদের কাজ মূলত শহরে বাইরে থেকে আগত অতিথিদের থাকার বন্দোবস্ত করে। এছাড়া যেসব মানুষ কয়েক দিন নিভৃতে কাটাতে চান, বিশেষ করে যুগলরা তাদের জন্য অত্যাধুনিক সুবিধাযুক্ত বিলাসবহুল ঘরের ব্যবস্থা করে ওই সংস্থা।
কেউ যদি ওই সংস্থায় নিজের বাড়ির নথিভুক্তিকরণ করেন, তাহলে সংস্থার পক্ষ থেকে সেখানে বসবাস করার জন্য লোক পাঠানো হবে। সেখান থেকে প্রাপ্ত ভাড়ার কিছু টাকা সংস্থা কেটে নিয়ে বাকি টাকা তুলে দেওয়া হবে বাড়ির মালিককে।
সেই সংস্থায় যোগ দিয়েই ছয় মাসে প্রায় ৩৩ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন ইনায়া। ইনায়া যখন ওই সংস্থার মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া দিতে শুরু করেন, তখন তার কাছে টাকা ছিল না। একটি মাত্র বাড়ি ছিল। কিন্তু এখন তার কাছে ওই ধরনের ১১টি ঘর রয়েছে। যেগুলো আমি ওই সংস্থার মাধ্যমে ভাড়া দিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা যায় করেন।
বর্তমানে কোটি কোটি টাকার মালকিন হলেও ইনায়ার যাত্রাপথ সহজ ছিল না। অনেক কঠিন সময় পার করতে হয়েছে জীবনে।কৃষ্ণবর্ণের এবং মুসলিম হওয়ার কারণে স্কুলে পড়ার সময় কেউ তার সঙ্গে কথা বলত না। যে কারণে তার কোনো বন্ধুও ছিল না। এমনকি পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার পর কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি।
আরও পড়ুন: ৬০ বছর ধরে ঘুমান না তিনি!
পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার পর সবাই একটু এড়িয়েই চলতো তাকে। কিন্তু এখন সবাই বেশ আগ্রহ দেখায় তার ব্যাপারে। কথা বলে, যোগাযোগ করেন এবং তার ব্যবসায় যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। সহজে টাকা রোজগারের ‘টোটকা’ জানতেও কেউ কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে।
এরপর ইনায়া সিদ্ধান্ত নেন, সৎ ভাবে অর্থ উপার্জনের উপায় বাকিদেরও শেখাবেন। তাই একটি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। তার কোচিং সেন্টারের ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই তার থেকে পরামর্শ নিয়ে এরই মধ্যে উপার্জন করতে শুরু করেছে।
ইনায়া ব্যবসার প্রতি প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তাই তিনি নিজের ভাইকেও ব্যবসায় যোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। নিজে পড়াশোনা শেষ করতে না পারলেও তিনি অন্যদের পড়াশোনা ছাড়ার পক্ষপাতী নন। পরিস্থিতির চাপে পড়ে তিনি নিজে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন। তাই ভাইকে ব্যবসায় যোগ দিতে উৎসাহিত করলেও পড়াশোনা ছাড়তে দেননি তিনি। ইনায়ার ভাই পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যাবসার কাজ করছে।
ইনায়া ব্যবসা থেকে এক মাসে ৬০ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করেছেন। ২০২২ সালের জুনে তিনি প্রথম এক লাখ ডলারের মালিক হন। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ইনায়ার উপার্জন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বর্তমানে তিনি ওই সংস্থার মাধ্যমে ঘর ভাড়া দিয়ে এবং পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছেন। যা থেকে আয় করছেন কোটি কোটি টাকা।
ইনায়ার যখন ১৬ বছর বয়স, তখন তার বাবা তাকে ডেল কার্নেগির লেখা ‘হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্স পিপল’ নামে একটি বই উপহার দিয়েছিলেন। সেই বই পড়েই তিনি জীবনে এগিয়ে যাওয়ার যাবতীয় অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তিনি। তার মতে, ভালো কাজ করার ইচ্ছা এবং ইতিবাচক মানসিকতা থাকলে যে কেউ তার মতো উপার্জন করতে পারবেন।
সূত্র: ডেইলি মেইল
কেএসকে/এএসএম