ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

আজকের এই দিনে

নির্মলেন্দু গুণের জন্ম

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ১১:২৩ এএম, ২১ জুন ২০২৩

নির্মলেন্দু গুণ একজন বাংলাদেশি কবি। কবিতার পাশাপাশি তিনি গদ্য এবং ভ্রমণকাহিনি লেখেন ও ছবি আঁকেন। তার কবিতায় মূলত নারীপ্রেম, শ্রেণি-সংগ্রাম এবং স্বৈরাচার বিরোধিতা- এসব বিষয়সমূহ প্রকাশ পেয়েছে।

পুরো নাম নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী। ১৯৪৫ সালের ২১ জুন নেত্রকোণার বারহাট্টার কাশবন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলা কেটেছে নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলার কাশবনে। তার পিতার নাম সুখেন্দু প্রকাশ গুণ এবং মাতা বীণাপাণি। মাত্র চার বছর বয়সে মাকে হারান।

সৎ মা চারুবালার কাছেই লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয় তার। প্রথমে বারহাট্টার করোনেশন কৃষ্ণপ্রসাদ ইন্সটিটিউটে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। ১৯৬২ সালে করোনেশন কৃষ্ণপ্রসাদ ইন্সটিটিউট অর্থাৎ বারহাট্টা সি. কে. পি. পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে দুই বিষয়ে লেটারসহ মেট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ পান। মেট্রিক পরীক্ষার আগেই নেত্রকোণা থেকে প্রকাশিত ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণের প্রথম কবিতা ‘নতুন কান্ডারী’৷

মেট্রিকের পর আই.এস.সি পড়তে চলে আসেন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে। মেট্রিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের সুবাদে পাওয়া রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপসহ পড়তে থাকেন এখানে। ১৯৬৪ সালের আই.এস.সি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের ১১৯ জন প্রথম বিভাগ অর্জনকারীর মাঝে তিনি ছিলেন একমাত্র নেত্রকোণা কলেজের।

পরবর্তীকালে বাবা চাইতেন তিনি ডাক্তার হন। কিন্তু তিনি চান্স পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগে। ভর্তির প্রস্তুতি নেন নির্মলেন্দু গুণ। হঠাত্ হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা শুরু হয় ঢাকায়। দাঙ্গার কারণে তিনি ফিরে আসেন গ্রামে। ঢাকার অবস্থার উন্নতি হলে ফিরে গিয়ে দেখেন তার নাম ভর্তি লিষ্ট থেকে লাল কালি দিয়ে কেটে দেওয়া। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে ফিরে আসেন গ্রামে।

আইএসসি-তে ভালো রেজাল্ট করায় তিনি ফার্স্ট গ্রেড স্কলারশিপ পেয়েছিলেন। মাসে ৪৫ টাকা, বছর শেষে আরও ২৫০ টাকা পেতেন। ১৯৬৯ সালে প্রাইভেটে বিএ পাস করেন তিনি। ১৯৬৫ সালে আবার বুয়েটে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

স্বাধীনতার পূর্বে তিনি সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সাংবাদিকতায়ও জড়িত ছিলেন। পাশাপ্সহি সাহিত্যচর্চা চালিয়ে যান। নির্মলেন্দু গুণ আধুনিকতার পথিকৃৎ জীবনানন্দ দাশের উত্তরসূরী নন। তার কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐতিহ্যের আবহে লালিত। বেশিরভাগ কবিতায় অত্যাধুনিক দৃষ্টান্তবাদিতা পরিলক্ষিত। তার নারীপ্রেমার্দ্র কবিতাগুলো ভারতীয় আবেগ-অনুভূতি সংলগ্ন। তার কবিতায় পাওয়া যায় কমনীয় ধ্বনি ও ছন্দ। নিজের অনুভূতিকে তিনি চিত্রিত করেন চিত্রময়তায়। অনেক ক্ষেত্রে ছন্দময়তার পরিবর্তে অবলম্বন করেছেন গদ্যকবিতার সহজ কাঠামো।

স্বদেশপ্রীতি তার কাব্যরচনার অন্যতম অনুপ্রেরণা। ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনের সঙ্গে আত্মিকভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। এর বাংলাদেশ স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে যখনই বিপর্যয় এসেছে ততবারই তিনি কলম তুলে প্রকাশ করেছেন তার ক্ষোভ ও দ্রোহ। শ্রেণীসংগ্রাম এবং স্বৈরাচার-বিরোধী কবিতা। নিহত হবার পর শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশে যে-ক’জন কবি ও লেখক সোচ্চার হয়েছেন, তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য।

১৯৭০ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রেমাংশুর রক্ত চাই প্রকাশিত হবার পর জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তার উল্লেখযোগ্য আরও কিছু রচনা- কাব্যগ্রন্থ: প্রেমাংগুর রক্ত চাই, না প্রেমিক না বিপ্লবী, কবিতা অমীমাংসিত রমণী, দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী, চৈত্রের ভালোবাসা, ও বন্ধু আমার, আনন্দ কুসুম, বাংলার মাটি বাংলার জল, তার আগে চাই সমাজতন্ত্র, চাষাভূষার কাব্য, অচল পদাবলী, দূর হ দুঃশাসন, শান্তির ডিক্রি, প্রথম দিনের সূর্য, চিরকালের বাঁশি, শিয়রে বাংলাদেশ, মুঠোফোনের কাব্য, নিশিকাব্য ইত্যাদি।

তার গল্পগ্রন্থ: আপন দলের মানুষ। ভ্রমণকাহিনি: ভলগার তীরে, গিনসবার্গের সঙ্গে। কিশোর উপন্যাস: কালো মেঘের ভেলা, বাবা যখন ছোট্ট ছিলেন। আত্মজীবনী: আমার ছেলেবেলা, আত্মকথা ১৯৭১, রক্তঝরা নভেম্বর ১৯৭৫, আমার কণ্ঠস্বর। কবিতা: হুলিয়া, বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা-এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো, আগ্নেয়াস্ত্র, মানুষ। তার স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো কবিতাটি বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা হুলিয়া কবিতাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরবর্তীতে এর উপর ভিত্তি করে তানভীর মোকাম্মেল একটি পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০০১ সালে একুশে পদক এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার পান।

কেএসকে/এএসএম

আরও পড়ুন