ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে চা বাগানের নারী ও শিশুরা

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ০২:৪১ পিএম, ১৫ জুন ২০২৩

রফিকুল ইসলাম জসিম

দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় চা শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্য, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা অপুষ্টিসহ নানা কারণে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে তারা এখনো সমাজের মূল ধারা থেকে অনেক পিছিয়ে। চরম দারিদ্র্য, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সচেতনতা ও জ্ঞানের অভাব, পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অবজ্ঞা, অস্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন, অশোভন কর্মপরিবেশে ও পরিমিত খাবারের অভাবে পুষ্টিহীনতার ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে অধিকাংশ চা বাগানে মা ও শিশুরা।

সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের ১৬০টি চা বাগানে কর্মরত প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার চা শ্রমিকের ৫১ শতাংশই নারী এবং পাতাতোলা শ্রমিকের ৯৫ শতাংশ নারী যারা চা শিল্পের সবচেয়ে কঠিন কাজটি করে থাকেন। নারী চা শ্রমিকরা বিশেষ করে যারা গর্ভবতী, তারা গর্ভাবস্থায় প্রচুর যন্ত্রণা ও ভোগান্তির শিকার হন। তারা বেশিরভাগই গর্ভাবস্থার প্রায় শেষ সময় পর্যন্ত ভারী এবং কঠোর পরিশ্রমের কাজ করেন।

কুষ্ঠরোগে বেশি ঝুঁকিতে চা শ্রমিকরা
চায়ের রাজধানী মৌলভীবাজারকে মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রোমাটোসিস ব্যাকটেরিয়া বা কুষ্ঠ রোগের রেড জোন চিহ্নিত করা হয়েছে। সচেতনতার অভাবে কুষ্ঠরোগে বেশি আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকরা। ১২ জুন জাগো নিউজের প্রতিবেদনে জানা যায়, হীড বাংলাদেশের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জিয়াউদ্দিন জানান, ‘মৌলভীবাজার জেলার চা বাগানগুলোতে গড় হিসাবে প্রতি ১০০ জন শ্রমিকের মধ্যে দুই জন কুষ্ঠরোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: গ্রামের তুলনায় শহরে ভূমিকম্পে ক্ষতি বেশি

মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘কুষ্ঠরোগে আক্রান্তদের পরিসংখ্যায় মৌলভীবাজার শীর্ষে। এই জেলায় কুষ্ঠরোগী আছেন ৬৬০ জন। এদের মধ্যে অপ্রাপ্ত বয়স্করাই বেশি। এই জেলাকে কুষ্ঠরোগের রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে আক্রান্তের ৯৮ শতাংশই চা বাগান অধ্যুষিত এলাকায়।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চা শ্রমিক নেতা দীপঙ্কর ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, ‘অধিকাংশ চা বাগানের শ্রমিকরা অজ্ঞ তারা কুষ্ঠরোগ সম্পর্কে সচেতন নয়। নিম্নমানের জীবনযাপন করেন তারা। এ কারণেই চা শ্রমিকরা কুষ্ঠরোগে বেশী সংক্রমিত হচ্ছেন।

অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত চা বাগানের শিশুরা
চা বাগান অঞ্চলের শিশুদের মধ্যে অপুষ্টিজনিত রোগের উচ্চ প্রকোপ রয়েছে। কারণ তারা পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাদ্য পায় না। এছাড়াও তাদের মধ্যে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ অনেক বেশি। দেখা গেছে, চা শ্রমিকদের বসবাসরত এলাকায় প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষই বিশুদ্ধ পানি পায় না। বাধ্য হয়েই তারা ঝুঁকিপূর্ণ ঝর্ণার পানি পান করেন। ফলে প্রতিনিয়তই নানা অসুখবিসুখ তাদের লেগে থাকে। এসব শিশুদের সামাজিক সুরক্ষারও অভাব রয়েছে। চা বাগানে কর্মরত পুরুষদের মধ্যে অধিকাংশই মাদকাসক্ত। যে কারণে এসবের প্রভাব পড়ে তাদের সন্তানদের উপর। অনেক সময় নানা কারণে নির্যাতনের শিকার হয় শিশুরা।

২০১৯ সালে সিলেট অঞ্চলের চা-বাগানগুলোর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম জরিপটি চালায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। এই জরিপে দেখা গেছে, অপুষ্টির কারণে চা-বাগানের ৪৫ শতাংশ শিশুই খর্বাকার, ২৭ শতাংশ শীর্ণকায়। স্বল্প ওজনের শিশু ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক লাজ্জাত এনাব মহছি জানান, চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। এক্ষেত্রে চা বাগানের মালিক বা কর্তৃপক্ষ কতটুকু করছে, তা পরিষ্কার না। এটা জানা দরকার। কুসংস্কারের কারণে তারা হাসপাতালে যেতে চান না। তারা কি আসলে হাসপাতালে যাওয়ার সময় পান! তাকে কি সময় দেওয়া হচ্ছে? আমরা বলছি, পুষ্টিকর খাবার দরকার। কিন্তু পুষ্টিকর খাবার কেনার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয়। তাদের মালিক কি সেই মজুরি দিচ্ছেন! যে টাকা মজুরি পান, প্রতিদিনের চাল কিনতেই তা শেষ হয়ে যায়। পুষ্টিকর খাবার কোথা থেকে আনবে? তারা যে অতিরিক্ত শ্রম দেন, তার জন্য কি তারা অতিরিক্ত টাকা পাচ্ছেন? যতটা বিশ্রাম দরকার, ততটা কি বিশ্রাম নিতে পারছেন? চা-শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নতি করতে হলে তাদের দিকে সবার আরও বেশি নজর দিতে হবে।

সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ নবজাতক, শিশু, নারী এবং কিশোর-কিশোরীদের জলবায়ু পরিবর্তনে দুর্যোগ ও জরুরি পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ও মানসম্পন্ন পুষ্টি পরিষেবা পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে চা বাগানের জনসচেতনতা বাড়াতে এবং অপুষ্টি প্রতিরোধে কাজ করা খুবই জরুরি।

ঝুঁকিতে চা বাগানে মাতৃস্বাস্থ্য ব্যবস্থা
চা বাগানের নারী চা শ্রমিকের একটি সাধারণ প্রবণতা হলো সন্তান প্রসবের পরে মাতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়া। প্রসবের ঠিক পূর্বে তারা তাদের অর্জিত অসুস্থতাজনিত ছুটি নেন এবং ২ থেকে ৩ সপ্তাহ বাড়িতে থাকেন। এ ধরনের চর্চার পরিণতি হলো অনেক ক্ষেত্রে গর্ভপাত এবং মৃত সন্তান প্রসব। তাছাড়া চা বাগানের বেশির ভাগ নারী তাদের বাড়িতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মেঝেতে করা বিছানায় সন্তান প্রসব করেন। ফলে মা এবং নবজাতক উভয়ই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন।

কম বয়সে বিয়ে নারীর স্বাস্থ্যের ওপর আরেকটি বাড়তি চাপ। সাধারণত নারীরাই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেন। সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড) ২০১৮ সালের এক সমীক্ষায় দেখেছে যে, ৬০ জন গর্ভবতী নারীর মধ্যে ২৯ জনের কম বয়সে বিয়ে হয়েছে এবং ২৯ জন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু তাদের স্বামীরা কেউই কখনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেননি। এসব এবং অন্যান্য আরও নানাবিধ কারণে চা বাগানে গর্ভপাত ও মাতৃমৃত্যুর হার জাতীয় গড় হারের চাইতে বেশি। ২০১৪ সালে স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী মৌলভীবাজার জেলায় ১২০টি মাতৃমৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে ৪৭টি মৃত্যুই চা বাগানসংলগ্ন এলাকায়, যা মাতৃমৃত্যুর প্রায় ৩৯ শতাংশ। চা বাগানের হাসপাতালে মাতৃস্বাস্থ্য ব্যবস্থা দেওয়া হলেও দক্ষ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর ঘাটতির কারণে সেবার মানকে উন্নত করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ওষুধ ও উপকরণের ঘাটতি রয়েছে।

আরও পড়ুন: চা পানে যেভাবে অভ্যস্ত হলো বাঙালি

চা বাগানে প্রায় ৫৪ শতাংশ মায়ের গর্ভকালীন সেবা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ মা কোনো গর্ভকালীন সেবা গ্রহণ করেননি। ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ মা তার সর্বশেষ গর্ভাবস্থায় একটি মাত্র গর্ভকালীন সেবা গ্রহণ করেছেন এবং মাত্র ৪ দশমিক ৭ শতাংশ মা তার সর্বশেষ গর্ভাবস্থায় চার বা ততোধিক সেবা গ্রহণ করেছেন। ৭৭ শতাংশ মায়ের প্রসব হয় বাড়িতে।

ইউনিসেফের সিলেট বিভাগীয় প্রধান কাজী দিল আফরোজা ইসলাম বলেন, মায়েদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে চা বাগানের মালিকদের সংযুক্ত করা প্রয়োজন। চা বাগানের মা ও শিশু যদি সুস্থ থাকে, তাহলে উৎপাদন অনেক বেড়ে যায়। এতে বাগানের মালিকেরাই লাভবান হন। ইউনিসেফ চা বাগানের মালিক-শ্রমিকদের সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছে।

মাতৃমৃত্যুর অনেক কারণ আছে। একজন মা যদি সব সুবিধা না পান, তবে মাতৃমৃত্যু কমবে না। শিক্ষা, সচেতনতা, পারিবারিক আয় এক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখে। ইউনিসেফ ও ইউএনএফপিএ কিছু বাগানে কাজ করছে। আমরা কিছু বাগানকে উদাহরণ হিসেবে দেখাতে পারি। এ উদাহরণ যদি সব বাগানমালিক ও শ্রমিক গ্রহণ করেন, তবেই উন্নতি সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে ডা. পার্থ সারথী দত্ত জানান, স্বাস্থ্যসেবা, প্রতিরোধমূলক সেবা ও চিকিৎসাসেবা-সুস্থ ও সবল থাকতে হলে এই তিন ধরনের সেবা প্রয়োজন। তবে সবার আগে অবশ্যই আমাদের প্রতিরোধমূলক সেবা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। চা-বাগানের প্রায় অধিকাংশ শ্রমিক কম লেখাপড়া জানেন। ফলে তাদের গর্ভবতী মা বা কিশোরী গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে কোনো ধারণা থাকে না। আমাদের উচিত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে চা বাগানে কর্মরত গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সচেতন করা এবং তাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রমুখী করা।

চা বাগান হাসপাতালে সেবা অপর্যাপ্ত
সিলেটে চা বাগান বেষ্টিত অঞ্চলে প্রত্যেক চা বাগানে নেই উন্নত মানের চিকিৎসার ব্যবস্থা। প্রত্যেক চা বাগানে স্থানীয় হাসপাতালে আছে নিম্নমানের একজন কম্পাউন্ডার ও একজন মিডওয়াইফ। ছোটখাটো জ্বর, কাশি কিংবা ডায়রিয়া হলে স্থানীয় হাসপাতালের কম্পাউন্ডারের শরণাপন্ন হতে হয়। এ থেকে বড় ধরনের অসুখ দেখা দিলে চা বাগানের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয় নিজ খরচে।

কিছুদিন আগে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, তেলিয়াপাড়া চা বাগান হাসপাতালে গণমাধ্যমকর্মীরা গিয়ে দেখেন কোনো ডাক্তার নেই সেখানে। উপস্থিত কম্পাউন্ডার রানু দত্ত জানান, প্রতি মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় ডাক্তার আসেন এবং ১০টায় চলে যান। ডাক্তার ছাড়া নার্স, ড্রেসার ও ধাত্রীসহ সাত জন স্টাফের মধ্যে একজন ধাত্রী ও দুই জন পুরুষ ড্রেসার ও একজন নারী ড্রেসারকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। হাসপাতালে ৪টি বেড থাকলেও সেখানে কোনো রোগী নেই। ঔষধ বলতে ড্রয়ারে অল্প কিছু প্যারাসিটামল ও হিস্টাসিন জাতীয় কিছু সাধারণ ঔষধ।

বাগান পঞ্চায়েত সেক্রেটারি লালন পাহান জানান, ৭৭৬ জন চা শ্রমিকের মজুরি থেকে প্রতিদিন সাড়ে সাত টাকা করে কেটে রাখা হয় চিকিৎসা বাবদ। সেই হিসেবে এক লাখ ৭৬ হাজার টাকা কেটে রাখা হয় প্রতি মাসে। অথচ চিকিৎসার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই এখানে। তাই বেশিরভাগ রোগী বাধ্য হয়েই চিকিৎসার জন্য বাইরে চলে যান। ধাত্রী আছে কিন্তু তার কাজের কোনো সরঞ্জাম বা কিট নেই। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় সিট থাকা সত্ত্বেও কোনো রোগী এখানে থাকে না। সপ্তাহে একদিন ডাক্তার জসিম ভূইয়া আসেন। তিনি নিয়মিত চুনারুঘাট সেবা ক্লিনিকের পাশে বসেন। মঙ্গলবার সকালে ৯টায় আসেন ১০টায় চলে যান।

৭৭৬ জন শ্রমিক থেকে চিকিৎসা খরচ বাবদ তাদের প্রতিদিনের মজুরি থেকে সাড়ে সাত টাকা করে কেটে নেওয়ার পর প্রতি মাসে চিকিৎসা তহবিলে পৌণে দুই লাখ টাকা জমা হওয়ার পরেও কেন পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা চা শ্রমিকদের দেওয়া হয় না এমন প্রশ্নের জবাবে ন্যাশনাল টি কোম্পানির আওতাধীন তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক দিপেন সিংহ জানান, চিকিৎসা বাবদ শ্রমিকদের কাছ থেকে কোনো টাকা কেটে রাখা হয় না।

বাংলাদেশ চা বোর্ড (বিটিবি)-এর ২০২০ সালের প্রতিবেদনে দেখা গেছে চা বাগানে মালিকপক্ষের পরিচালিত ৭৮টি হাসপাতাল এবং ১৬২টি ডিসপেনসারি রয়েছে। শ্রমিকরা অবশ্য এসব কেন্দ্র থেকে পাওয়া স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে খুবই অসন্তুষ্ট। এর কারণ এসব কেন্দ্র যক্ষ্মা ও ক্যানসারসহ গুরুতর রোগের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সেবা দিতে পারে না। প্রসব পূর্ব এবং প্রসব পরবর্তী সেবাও এসব স্থানে অপর্যাপ্ত।

সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কমিউনিটি পর্যায়ে পৌঁছালেও এবং স্বাস্থ্যসেবা দিতে বেসরকারি কিছু উদ্যোগ দৃশ্যমান হলেও তা চা বাগানের খুব কম মানুষের উপকারে আসছে। কারণ চা বাগানসমূহ এখনো বহুলাংশে বিচ্ছিন্ন এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে চা শ্রমিক ও তাদের গোষ্ঠীসমূহ সরকারি স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারছে না। বেসরকারি উদ্যোগসমূহের পরিধি এখনো সীমিত। আরও যেসব কারণে তাদের জীবন ও জীবিকার ওপর নানা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সেসবের মধ্যে অন্যতম অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা এবং মারাত্মক বৈষম্য যার কারণে তারা অপুষ্টির শিকার এবং নিম্ন সাক্ষরতার হার তাদের মধ্যে বেশি। এসব কারণে চা শ্রমিক পরিবার দেশে অন্যান্য নাগরিকদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। সমাজে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কারের জন্য অনেক ক্ষেত্রে চা বাগানের নারী শ্রমিকরা বৈষম্যের শিকার হন।

এক কথায় চা বাগানে স্বাস্থ্যঝুঁকি সমূহ:
১. প্রতি ১০০ জন চা শ্রমিকের মধ্যে দুই জন কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত।
২. অপুষ্টির কারণে চা বাগানের ৪৫ শতাংশ শিশুই খর্বাকার ও ২৭ শতাংশ শীর্ণকায়।
৩. ৫৪ শতাংশ মায়ের গর্ভকালীন সেবা সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই।
৪. চা বাগানে মাতৃমৃত্যুর প্রায় ৩৯ শতাংশ।
৫. বাগানে ৫০ শতাংশ মানুষই বিশুদ্ধ পানি পায় না।

চা বাগানে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সুপারিশ সমূহ:
১.চা বাগানের কুষ্ঠরোগ সম্পর্কে জনসচেতন বাড়াতে হবে।
২.চা শ্রমিক মায়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে।
৩.গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন।
৪.মা ও শিশুদের পুষ্টি কার্যক্রম জোরদার করতে হবে
৫.বাগানে নারীরাই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ জরুরি।

লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী

কেএসকে/এএসএম

আরও পড়ুন