শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে সফল সালমা
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে সফল নারী হিসেবে সমাজকে আলোকিত করেছেন। এই সফল নারীর নাম সালমা বেগম। জীবনের ৪১ বসন্ত পার করেছেন তিনি। নিজের ভাইয়ের দেওয়া জরাজীর্ণ একটি ঘরে বসবাস করলেও ভিক্ষাবৃত্তি বেছে না নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন সালমা বেগম।
জয়পুরহাট শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় পৌর মেয়রের দেওয়া উপহার ছোট একটি পানের দোকান, দুটি ছাগল ও কিছু মুরগি পালন করা এবং কিছু সেলাইয়ের কাজ দিয়েই চলছে তার জীবন সংসার। সংসারে একমাত্র মেয়ে হাবিবা এখন পড়াশোনা করছেন খনজনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে।
সালমা সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড চকশ্যাম গ্রামে বাবা, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে বসবাস করেন। বাবা মকবুল হোসেন ও মা রেখা বেগমের ছোট মেয়ে সালমা। বাবা মকবুল হোসেনও মারা যান গত বছর।
সালমার মা রেখা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সালমার যখন ৬ মাস বয়স; তখন তার প্রচণ্ড জ্বর হয়। কিন্তু চিকিৎসার অভাবে কোমর থেকে বাম পা অবশ হয়ে যায়। এভাবেই বেড়ে ওঠা সালমা পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হয় খনজনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। অত্যন্ত মেধাবী সালমা লাঠিতে ভর দিয়েই স্কুলে যেতো সহপাঠীদের সঙ্গে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ৮ম শ্রেণি পাস করার পর লেখাপড়া থেমে যায় সালমার। ২০০১ সালে আমদই ইউনিয়নের দন্ডপানি গ্রামের শাজাহান আলীর সঙ্গে বিয়ে হয় তার। তারপর তাদের সংসারে জন্ম নেয় হাবিবা। পরিবার-পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার কারণে আর সন্তান নেননি। স্বামীর এটি দ্বিতীয় বিয়ে হওয়ায় বাবার বাড়িতে ফিরে আসতে হয় তাকে।’
আরও পড়ুন: রত্নগর্ভা মণিপুরী মা মঞ্জুশী সিনহা
চকশ্যাম গ্রামের সালমা বেগমের ভাবি ও তার ফুপা মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা তাকে ছোট থেকেই দেখছি। সে কখনো মানুষের কাছে হাত পাতেনি। বরং নিজে সব সময় পরিশ্রম করতো। আমরা দেখি সে বাড়িতে ছাগল পালন করে, মুরগি পালন করে। আবার কখনো কখনো সেলাইয়ের কাজ করে নিজের সংসার চালায়।’
তারা বলেন, ‘সালমা বেগম আমাদের সমাজের জন্য বোঝা না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। এটা আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি। আমাদের চাওয়া সে যেহেতু ভাইয়ের বাড়িতে থাকে। তাকে যদি সরকার একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিতো। তাহলে সে তার মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতে পারতো।’
সালমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছয় মাস বয়স থেকেই আমি প্রতিবন্ধী। তারপরও ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। প্রতিবন্ধী বলে যখন কেউ বিয়ে করতে চায় না, ঠিক সেই মুহূর্তে সদর উপজেলার দন্ডপানি গ্রামের শাজাহান আলী আমাকে বিয়ে করে। যদিও তার সেখানে অন্য একটা পরিবার আছে। তারপরও সে আমাকে বিয়ে করে। তার সংসারের অবস্থা তেমন ভালো না হওয়ায় সেখানে যাওয়া হয়নি। আমি ভাইয়ের বাড়িতে থেকেই কিছু করার চেষ্টা করছি। যাতে আমাকে ভিক্ষা করা কিংবা মানুষের কাছে হাত পাততে না হয়।’
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থী মায়েদের গল্প
তিনি বলেন, ‘২০০৬ সালে আমাকে সরকার প্রতিবন্ধী ভাতারও ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সেই টাকা দিয়ে আমি ছাগল ও মুরগি পালন করি। আমার এই পরিস্থিতি দেখে জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক আমাকে একটি দোকানের ব্যবস্থা করে দেন। সেই দোকানে আমি পানসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করি। সেখান থেকে আল্লাহর রহমতে যা পাই, তা দিয়ে আমার সংসার চলে যায়।’
সালমা বেগমের চাওয়া, তার আশপাশে খাসজমি আছে অনেক। সেখান থেকে এক টুকরো জমির জন্য ২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের কাছে একটি আবেদন করলেও তার ভাগ্যে এখন পর্যন্ত একটি ঘরের ব্যবস্থা হয়নি। সালমা বেগম আর তার ভাই-ভাবির সঙ্গে বোঝা হয়ে থাকতে চান না।
কেএসকে/এসইউ/এএসএম