ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

শিক্ষার্থী মায়েদের গল্প

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২:৩৩ পিএম, ১৪ মে ২০২৩

‘মা’ হওয়া কেবল অনুভূতি নয়, অবিশ্বাস্য সুন্দর, নিঃশর্ত ও পবিত্র ভালোবাসার অভিজ্ঞতা। দেশের প্রেক্ষাপটে মাতৃত্বের কথা আসলেই এক বিপ্লবী-রণ-ক্লান্তের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। শিক্ষার্থী জীবনে এই মাতৃত্বের স্বাদ আরও ব্যতিক্রম।

ক্লাস,পরীক্ষা, এসাইন্টমেন্ট ঠেলে অনেকেই পালন করছেন এই গুরুদায়িত্ব। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষারত বিপ্লবী মায়েদের গল্প তুলে ধরেছেন সানজিদা জান্নাত পিংকি-

একজন ‘সিঙ্গেল মাদার’ হওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং
মুসৌরা আহমেদ, আইন বিভাগ
মা হওয়ার পর নতুন একটা দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনকে দেখতে শিখেছি, নতুন করে বাঁচতে শিখেছি। ‘যখন নিজের সন্তান হবে তখন বুঝবে’ এই কথাটা এখন পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারি। মাতৃত্বের শুরু থেকে, ‘সিঙ্গেল মাদার’ হওয়াটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সমাজব্যবস্থা কুসংস্কারে বিশ্বাসী এবং না জেনেই কাউকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। এই ধরনের অভিজ্ঞতার কারণে অনেক সময়ই হতাশ হই। কিছু বিষয় থাকে যা কাটিয়ে ওঠা সহজ নয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাই। তবে বাবা-মা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সমর্থনকারী। একমাত্র সন্তান হিসেবে বাবা-মার স্বপ্ন পূরণ করা আমার কর্তব্য। এছাড়াও শিশুরা বড়দের অনুসরণ করে। আমার সন্তানের জন্য নিজেকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। সন্তান সামলানোর সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা এক তিক্ত-মিষ্টি অভিজ্ঞতা। এ যাত্রায় আমার বাবা-মায়ের পাশাপাশি আমার শিক্ষকগণ ও সহপাঠীরা সবসময় পাশে থেকেছেন। আমি চাই ভবিষ্যতে আমার ছেলে সেরহান যেন একজন সৎ, দায়িত্বশীল এবং সহানুভূতিশীল ব্যক্তি হয়।

ক্লাসের সময় ডে-কেয়ার সেন্টারই ভরসা
সাবিনা আক্তার, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ
মা হওয়ার মাঝে স্বর্গীয় সুখ আছে। আমার সন্তান পেটে আসা থেকে শুরু করে ওর জন্ম পর্যন্ত প্রতিটি দিন আমি নতুন করে অনুভব করতে পারি। প্রথম পেটের ভেতরে বাবুর লাথি অনুভব করা ও প্রথমবার সন্তানের মুখ দেখার মাঝে জাদুকরী এক অনুভূতি রয়েছে। যা দুনিয়ার সব দুঃখ কষ্টকে হার মানায়। মা হওয়া যেমন সুখের তেমন কঠিন এক দায়িত্বের কাজ। আর মায়ের দায়িত্ব ও পড়াশোনা; দুটো বিষয় পাশাপাশি থাকলে তা বেশ জটিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আমি ভর্তি হই তখন আমি ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সে সময়ে আমি একটি পার্টটাইম চাকরিও করতাম। ফলে সেসময়ের যাত্রাটাও বেশি কঠিন ছিল আমার জন্য। তবে কখনো পিছুপা হইনি, স্বামীর উৎসাহে এবং তার সার্বিক সহযোগিতায় আমি পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছি। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডে-কেয়ার সেন্টার আমার কাছে আমার পরিবারের মতো। মূলত তাদের সাহায্যের জন্যই আমি যথাযথভাবে ক্লাস করতে পেরেছি। যখন ক্লাস করতে যেতাম, বাবুকে ওখানে রেখে যেতাম। ডে-কেয়ার সেন্টারের মানুষগুলো অমায়িক। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি চাই আমার সন্তানকে যেন আল্লাহ তায়ালা একজন মানুষের মতো মানুষ ও ইসলামী আলেম হওয়ার তৌফিক দান করেন।

আরও পড়ুন: আদর্শ মা থেকে সেরা শিক্ষক

ছেলের জন্যই পড়াশোনায় ফেরা
শারমিন আক্তার, সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগ
মা হওয়াটা নিঃসন্দেহে জীবনের সেরা এক অনুভূতি। আমার পড়াশোনার পাশাপাশি সন্তান সামলানোর জার্নিটুকু বেশ অদ্ভুত ছিল। আমি আমার ছেলেকে চার বছর সময় দিয়েছি। এ সময়টা আমি পড়াশোনাসহ যাবতীয় সবকিছু থেকে দূরে ছিলাম। সে সময়টাতে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলাম। পরবর্তীতে মনে হয়েছে আমার ছেলের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য হলেও আমাকে শিক্ষিত মা হওয়া প্রয়োজন। এই উৎসাহ থেকেই ফের পড়াশোনা শুরু করা। এখন আমি চেষ্টা করি দুদিকই সামলে নেওয়ার। প্রতিদিন ছেলেকে খাবার খাওয়ানোর পর ক্লাসে যাই, আবার ক্লাস শেষে দ্রুত বাসায় ফিরি। এই অনুভূতিটাও দারুণ। ওকে আমি পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার চেষ্টা করি সবসময়। অনেক সময় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু পরমুহূর্তেই মনে হয় ‘আমি তো মা’। ওর জন্য আমাকে সবই করতে হবে। তবে ‘মা’ হওয়া বলাটা সহজ হলেও এর বাস্তবায়ন খুবই কঠিন। এক্ষেত্রে আমার স্বামী আমাকে সর্বদা সাহায্য করেছেন। ভবিষ্যতে ছেলেকে আমি সাফল্যের চূড়ায় দেখতে চাই। তবে আমার কোনো সিদ্ধান্ত আমি ওর উপর চাপিয়ে দেব না। আমি ছেলের চোখেই আমার পৃথিবী দেখতে চাই।

মাতৃত্ব আমাকে শক্তিশালী করেছে
জাহানারা আক্তার নিপা, আইন বিভাগ
প্রথমবার নারীত্ব ও মাতৃত্ব এক হওয়ার অনুভূতি পৃথিবীর সব কিছুকে হার মানায়। মা হওয়ার পর মনে হয় আমি সত্যিই একজন পরিপূর্ণ নারী। তবে পড়াশোনার পাশাপাশি সন্তান সামলানোর জার্নিটা আমার জন্য সহজ ছিল না। বেশ খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে মায়েরা যে সব সহ্য করতে পারে। সারাদিনের নানা ব্যস্ততার মাঝে খুঁজে নিতে হয়েছে পড়ার সময়। সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার পরই পড়ার জন্য সময় বের করি। যেদিন নিজের মধ্যে আরও একজনের অস্তিত্ব টের পাই সেদিন মাতৃত্বের অনুভবে হৃদয় আত্মতৃপ্তিতে ভরে উঠেছিল। তবে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে মা হওয়াটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। বহু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে প্রতিনিয়ত। রোজ শুনতে হয়েছে, ‘বাচ্চা হওয়ার পর মেয়েদের পড়াশোনা করে কি লাভ?’ তবে কটু কথায় আমি থেমে থাকিনি। মা-বাবার উৎসাহে আমি আমার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। মা হওয়ার পর আমি নিজের মাকে অনুভব করেছি। মায়েদের সব পারতে হয়। আমি ভালো একজন আইনজীবী হতে চাই। ভবিষ্যতে আমি চাই আমার মেয়ে ‘মেহেরিমা’ একজন ডাক্তার হোক। আমার যে স্বপ্ন আমি পূরণ করতে পারিনি, আমার মেয়ে তা করুক।

লেখক: শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়

কেএসকে/জেএমআই

আরও পড়ুন