বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ৫ ভূমিকম্প
শুক্রবার (৫ মে) সকাল ৫টা ৫৭ মিনিট ৮ সেকেন্ডে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূকম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল প্রথমে ঢাকার দোহার উপজেলা উল্লেখ করা হলেও পরবর্তী সময়ে জানা যায় নারায়ণগঞ্জের রূপপুরে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে এ ভূমিকম্প ঘটেছে।
আরও পড়ুন: জীব-জন্তু কি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারে?
এই ভূমিকম্পে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে দেশে বিভিন্ন শতকে এমন অনেক ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, যেগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। এখনো সেই স্মৃতি এখনো জড়িয়ে আছে দেশের ইতিহাসে। চলুন জেনে নেওয়া যাক দেশের ভয়াবহ ৫ ভূমিকম্প সম্পর্কে-
১৭৬২ সাল, টেকনাফ
টেকনাফ থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কিলোমিটার জায়গায় যে ফল্ট লাইন রয়েছে সেখানে ৮.৫ মাত্রার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। এর ফলে সেন্টমার্টিন আইল্যান্ড তিন মিটার উপরে উঠে আসে। এর আগে সেন্টমার্টিন আইল্যান্ড ছিল ডুবন্ত দ্বীপ।
মিয়ানমারের একটি দ্বীপ ছয় মিটার ওপরে উঠে আসে। একই ভূমিকম্পে সীতাকুন্ড পাহাড়ে কঠিন শিলা ভেদ করে নিচ থেকে কাদা বালুর উদগীরণ হয়। এই ভূমিকম্পের কারণে বঙ্গোপসাগরে সুনামি হয়। এই সুনামির কারণে ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর ধারে বাড়িঘর ভেসে গিয়ে সে সময় ৫০০ মানুষের প্রাণহানি হয়।
১৮৬৯, শিলচড়
এটি ইতিহাসে ‘কাচার আর্থকোয়াক’ নামে পরিচিত। ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৫। ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল শিলচড়, জৈন্তা পাহাড়ের উত্তর অংশে। জায়গাটি সিলেটের খুব কাছে। ভূমিকম্পটি ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে অনুভূত হয়েছিল। সিলেটের পূর্বাঞ্চল, শিলচড়, নওগাং, ইম্পাল এলাকার অনেক কংক্রীটের কাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছিল। প্রাণহানির পরিমাণ ছিল অল্প, সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্প থেকে বাঁচতে আগেই যা করবেন
১৮৮৫ সাল, মানিকগঞ্জ
১৮৮৫ সালের ১৪ জুলাইয়ের সেই ভূমিকম্প ইতিহাসে পরিচিত ‘বাংলা আর্থকোয়াক’ নামে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায়। অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এটি এতো শক্তিশালী ছিল যে ভারতের সিকিম, বিহার, মনিপুর এবং মিয়ানমারে অনুভূত হয়েছিল। ঢাকা, বগুড়া, ময়মনসিংহ, শেরপুর এবং পাবনায় প্রাণহানির খবর পাওয়া গিয়েছিল।
১৮৯৭ সাল, শিলং
এটি ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়াক’ নামে পরিচত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৭। ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল শিলং, মেঘালয়। সরকারি হিসাবমতে এই ভূমিকম্পে প্রণহানির সংখ্যা ১৫৪৩। এর মধ্যে সিলেটে ৫৪৫ জন, রাজশাহীতে ১৫ জন। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের ৩০ হাজার বর্গ মাইলের মধ্যে অবস্থিত পাথর এবং কংক্রীটের সব ভবন ধ্বংস হয়েছিল। এই ভূমিকম্পে সিলেটের দুই-তৃতীয়াংশ ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ময়মনসিং এবং উত্তরাঞ্চলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশে এই ভূমিকম্পের ফলে অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছিল। অসংখ্য জায়গায় ফাটল সৃষ্টি হয়েছিল। সুরমা এবং ব্রক্ষ্মপুত্রের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল।
১৯১৮ সাল, শ্রীমঙ্গল
১৯১৮ সালের সেই ভয়াবহ ভূমিকম্পটি ‘শ্রীমঙ্গল আর্থকোয়াক’ নামে পরিচিত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল শ্রীমঙ্গলের বালিছেড়া। এই ভূমিকম্পে শ্রীমঙ্গল এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। প্রাণহানির কোনো খবর জানা যায়নি।
এছাড়াও ১৫৪৮ সালে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রথম বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর ফলে বর্তমানে চট্টগ্রাম ও সিলেটের অবস্থান যেখানে, এই অঞ্চলে নানা জায়গায় মাটি ফেটে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। সেখান থেকে দুর্গন্ধযুক্ত কাঁদা-পানি বেরোনোর তথ্যও পাওয়া যায়। তবে এই ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো তথ্য লিপিবদ্ধ হয়নি। এরপর ১৬৪২ সালে এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে সিলেট জেলার অনেক দালান-কোঠা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কেএসকে/এএসএম