নব্বই দশকের জনপ্রিয় যত কার্টুন সিরিজ
মামুনূর রহমান হৃদয়
নব্বই দশকের কথা। স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের প্রচলন তখনো ব্যাপক আকারে শুরু হয়নি। বিটিভি ছিল চিত্তবিনোদনের একমাত্র মাধ্যম। আর ছোটদের কাছে বিটিভি ছিল এক টুকরো রঙিন স্বপ্ন। দুপুরে স্কুল থেকে ফিরেই বসে পরত টেলিভিশনের সামনে। বিকাল ৩টা থেকে শুরু হতো কোনো না কোনো কার্টুন সিরিজ। নিত্যদিনের পড়াশোনার ফাঁকে সে সময় এই আধা ঘণ্টার কার্টুন সিরিজটিই ছিল জীবনের স্বস্তি। শত চ্যানেলের ভিড়ে বিটিভি দেখা কমলেও, শৈশবের জনপ্রিয় কার্টুন সিরিজগুলো আজও স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেছে।
মিনা কার্টুন
উচ্ছল, প্রাণবন্ত, সাহসী ও প্রগতিশীল মেয়ে মীনা। সে স্কুলে যায় নতুন কিছু শিখতে, নতুন কিছু জানতে। বাবা-মায়ের আদরের মেয়েটি সমাজের নানা বৈষম্য ও অন্ধ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলে। ছোট ভাই রাজু, টিয়াপাখি মিঠু, ছোট বোন, বাবা, মা, দাদি, বন্ধুবান্ধব, গ্রামবাসী নিয়েই মিনার জীবন। বাল্যবিবাহ বন্ধ করা, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ল্যাট্রিন নির্মাণ ও ব্যবহারে উৎসাহিত করা, মেয়েদের স্কুলে পাঠানো, অপরিণত মেয়েদের বিয়ে নয়, যৌতুক বন্ধ করা, ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য সমান পুষ্টি ও সুযোগ-সুবিধা ও সম-অধিকার এমনসব গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয় মীনা।
আরও পড়ুন: কেবলই স্মৃতিময় অতীত!
গডজিলা
মানবিক পরিবেশ বা বাস্তুসংস্থানের সংরক্ষণে ভূমিকা রাখা এক দল গবেষককে তুলে ধরা হয়েছে গডজিলা সিরিজটিতে। দর্শক আদৌ কি ভুলতে পারবে দানবাকৃতির প্রাণীগুলোর অনিষ্ট থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া গডজিলাকে! কিংবা বলিষ্ঠ চরিত্রের ড. নিককে? সঙ্গে এলসি চ্যাপম্যান, ম্যান্ডেল ক্র্যাভেন, র্যান্ডি হার্নান্দেজ, মনিকা দুপ্রে অথবা বিশ্লেষণধর্মী রোবট নাইজেল দর্শকের মনে আনন্দের শিহরণ বইয়ে দিয়ে যেত।
ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট
কোনো বিপদে পড়লে পাঁচ আংটির ক্ষমতা মিলিয়ে ডেকে আনা হতো এই গ্রহের দলনেতা ক্যাপ্টেন প্ল্যানেটকে। পাঁচ প্ল্যানেটিয়ার্স বা মর্ত্যবাসীর আংটি থেকে বের হওয়া পাঁচ ধরনের ক্ষমতা ‘আর্থ, ফায়ার, উইন্ড, ওয়াটার ও হার্ট’ একত্রিত হয়ে হাজির হওয়া ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট আর তার মুখ নিঃসৃত সেই বাণী ‘আই অ্যাম ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট’ কার্টুনপ্রেমীদের উত্তেজনা বাড়িয়ে দিত! বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ দূষণ ও বাস্তুসংস্থানের জন্য হুমকি স্বরূপ কার্যক্রম বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েই নির্মিত ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট। সিরিজটির দর্শকপ্রিয়তার কারণে বাধ্য হয়ে ১৯৯৩ সালে সিরিজটির সিক্যুয়াল ‘দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চারস অব ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট’ বানানো হয়।
সামুরাই এক্স
সে সময় একাধিক টিভি চ্যানেল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মাঙ্গা সিরিজ অথবা জাপানিজ অ্যানিমে ছিল না। তাই রাজত্বটা ছিল রুরৌনি কেনশির দখলে। নবুহিরো ওয়াৎসুকির লেখা এই সিরিজটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ১৮৭৮ সালের জাপানিজ মেইজি পিরিয়ডের কথা। সে সময়ের দুর্ধর্ষ তলোয়ার যোদ্ধা কেনশি জাপানের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। শান্তি, সংঘর্ষ, প্রেম সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ এই সিরিজটি দেখলে অ্যানিমেশন চরিত্র কেনশির প্রতি মায়া জন্মাবেই।
আরও পড়ুন: সাপের রাজা টাইটানোবোয়া
জুমানজি
নব্বই দশকের শিশু-কিশোরদের বুধবারের বিকালটা কাটত অ্যালেন, জুডি আর পিটারের সঙ্গে! প্রতি পর্বেই থাকত তাদের নিত্য নতুন অভিযানের গল্প। জুমানজি সিনেমার চেয়েও অ্যানিমেশন সিরিজটাই বেশি মজার ছিল বলে মনে করেন অনেকে। শত্রুগুলোও ছিল বেশ শক্তিশালী। ভ্যান পেল্ট, ট্রেডার স্লিক, প্রফেসর ইবসেন তাদের কথা কখনো ভুলার নয়। অন্য সব কার্টুন সিরিজের সঙ্গে জুমানজির পার্থক্যটা ভিন্ন। এর শেষ পর্ব ছিল অসাধারণ। সেখানে দেখা গেছে, শেষ পর্যন্ত অ্যালেন তার সব সূত্র সমাধান করে জুমানজির জাদুর দুনিয়া থেকে বাস্তব দুনিয়ায় ফেরত আসে।
উডি উডপেকার
হাস্যরসে টইটুম্বুর কার্টুন সিরিজের কথা বলতে গেলে যে নামটিতে চোখ আটকে যেত, তা হলো ‘উডি উডপেকার’। মিকি মাউজ কিংবা বাগস বানির মতো জনপ্রিয় না হলেও বিটিভির এই কার্টুন দর্শকদের মনে দাগ কেটেছে। উডির সেই বিখ্যাত হাসিটি কারও কারও কাছে অস্বস্তিকর মনে হলেও এই হাসিটি ছিল শৈশবের রঙিন স্বপ্নের মতো।
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী
কেএসকে/এমএস