আজকের এই দিনে
নবাব খাজা হাবিবুল্লাহর জন্ম
নবাব খাজা হাবিবুল্লাহ বাহাদুর ছিলেন ঢাকার পঞ্চম ও শেষ নবাব। তার পিতা ছিলেন নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ বাহাদুর। ১৮৯৫ সালের ২৬ এপ্রিল ঢাকার নওয়াব বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। হাবিবুল্লাহ বাল্যকালে দার্জিলিং-এর সেন্ট পল স্কুলে এবং পরে ইংল্যান্ডের সেন্ট ভিন্সেন্ট ও ইস্টবোর্ণে শিক্ষালাভ করেন।
১৯১৫ সালে পিতার মৃত্যুর পর জ্যেষ্ঠ পুত্র হিসেবে তিনি ঢাকার খাজা পরিবারের কর্তৃত্ব ও নওয়াব উপাধি লাভ করেন। ১৯১৮ সালে তিনি ব্রিটিশদের পক্ষে বিশ্বযুদ্ধে বাঙালি পল্টনে যোগ দেন এবং অবৈতনিক লেফটেন্যান্ট হিসেবে মেসোপটেমিয়ার যুদ্ধাঞ্চলে গমন করেন। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোর্ট, ঢাকা জেলা বোর্ড ও মিউনিসিপ্যালিটির সদস্য। ১৯১৮ সালের এপ্রিল মাসে তার সভাপতিত্বে ঢাকায় ‘আঞ্জুমান-ই-ইসলামিয়া’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকার পঞ্চায়েত প্রধানরূপে মহল্লার সর্দারদের ওপর তার ব্যাপক প্রভাব ছিল।
তবে নওয়াব হাবিবুল্লাহ তার পূর্ব পুরুষদের ন্যায় বিচক্ষণ ও অধ্যবসায়ী ছিলেন না। তার আমলে ঢাকা নওয়াব এস্টেট সরকারের কোর্ট অব ওয়ার্ডসের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এবং নওয়াব একটি সাক্ষিগোপালে পরিণত হন। তার অযোগ্যতার দরুন এস্টেটের ওয়াকফ্কৃত ও খাস জমিগুলোও অব্যবস্থায় পতিত হয়। ফলে আহসান মঞ্জিলের বিলাস বৈভবে ভাটা পড়ে। ইন্দ্রিয়পরায়ণ হাবিবুল্লাহ একাধিক বিয়ে করেন এবং এ কারণে তিনি অনেকের বিরাগভাজন হন।
তার শাসনামলেই ঢাকার নবাব পরিবারের সম্পদ ও জৌলুশ কমতে থাকে এবং ১৯৫২ সালে ইস্ট পাকিস্তান এস্টেট অ্যাকিউজিশন অ্যাক্ট দ্বারা যা চূড়ান্তভাবে বর্জন করতে হয়। নবাব হাবিবুল্লাহ বার বার চেষ্টা করেন তার পিতার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্য খাজা খায়রুদ্দিন এবং স্যার খাজা নাজিমুদ্দিনের শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি ভিত্তির কারণে তিনি ব্যর্থ হন।
নবাব হাবিবুল্লাহ এসেম্বলি নির্বাচনে বাংলা থেকে স্বতন্ত্রপার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু তিনি তারই আত্মীয় এবং মুসলিম লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত খাজা খায়রুদ্দিনের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। শেষের দিকে অসুস্থতার কারণে তিনি রাজনীতি থেকে দূরে সরে আসেন। তিনি আহসান মঞ্জিলের প্রাসাদ ছেড়ে দেন এবং ঢাকার পরিবাগে অবস্থিত গ্রীন হাউস নামে নবাবদের আরেক বাসস্থানে বাস করা শুরু করেন। এখানেই ১৯৫৮ সালের ২১ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়। বেগম বাজারে নওয়াবদের পারিবারিক কবরস্তানে পিতার কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
কেএসকে/জেআইএম