আজকের এই দিনে
ফতেহ লোহানীর প্রয়াণ দিবস
ফতেহ লোহানী ছিলেন একজন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, গীতিকার, অনুবাদক, লেখক ও সাংবাদিক ছিলেন। তার পুরো নাম আবু নজীর মোহাম্মদ ফতেহ আলী খান।
১৯২০ সালের ১১ মার্চ তৎকালীন বৃহত্তর পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমায় (বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলায়) এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আবু সাঈদ মোহাম্মদ সিদ্দিক হোসেন খাঁ, যিনি আবু লোহানী নামে অধিক পরিচিত একজন সাংবাদিক ও সাহিত্যিক ছিলেন।
মাত্র আট বছর বয়েসে পিতার আকস্মিক মৃত্যুর পর মায়ের তত্ত্বাবধানে কলকাতায় ছেলেবেলা ও শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়। লোহানী কলকাতার সেইন্ট মেরিজ ক্যাথেড্রাল মিশন হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, রিপন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পাস করেন। এরপর ১৯৫০ সালে তিনি লন্ডনে পাড়ি জমান এবং ওল্ডভিক থিয়েটার স্কুলে নাট্য প্রযোজনা বিষয়ে দুবছরের কোর্স সম্পন্ন করেন। সে সময় ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের সদস্য হিসেবে তিনি চলচ্চিত্র বিষয়েও অধ্যয়ন করেন।
কলকাতার স্কুলে অধ্যয়নকালে তিনি প্রথম অভিনয়ের সাথে সম্পৃক্ত হন। তিনি কৌতুকাভিনয় ও আবৃত্তি করতেন। রিপন কলেজে পড়ার সময় লোহানী বেশকিছু বাংলা ও ইংরেজি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। পরবর্তীতে তিনি শৌখিন নাট্যগোষ্ঠী ও সাধারণ রঙ্গমঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হন। সেসময় তিনি সিরাজউদ্দৌলা নাটকটি পরিচালনা ও এতে অভিনয় করেন।
১৯৪৬ সালে হিমাদ্রি চৌধুরী (ওবায়েদ-উল হক) রচনা, প্রযোজনা ও পরিচালনায় দুঃখে যাদের জীবন গড়া চলচ্চিত্রে প্রতিনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ১৯৪৭ সালে কলকাতায় অখিল নিয়োগী পরিচালিত মুক্তির বন্ধন চলচ্চিত্রে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন।
দেশবিভাগের পরে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫৭ সালে চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (এফডিসি) প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে আসেন। ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিনেতা হিসেবে ফতেহ লোহানীর অভিষেক ঘটে ১৯৬৪ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত রাজা এলো শহরে এর মাধ্যমে। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ এর মধ্যে লোহানী বিশের অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি ৪৪ টি চলচ্চিত্রে ও অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেন।
তার উল্লেখযোগ্য সিনেমা-হামরাহী, দুঃখে যাদের জীবন গড়া, মুক্তির বন্ধন, এইতো জীবন, রাজা এলো শহরে, ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো, মহুয়া, বেহুলা, আপন দুলাল, আগুন নিয়ে খেলা, জুলেখা, পরশমণি, তানসেন, দর্পচূর্ণ, অন্তরঙ্গ, রাঙ্গা বউ, মোমের আলো, অচেনা অতিথি ইত্যাদি।
দক্ষ আবৃত্তিকার হিসেবেও প্রশংসিত ছিলেন। ফতেহ লোহানী ১৯৪৭ এর ১৪ আগস্টের পর ঢাকা বেতার কেন্দ্রে সংবাদ পাঠক হিসেবে যোগ দেন। এসময় তিনি নিয়মিত বেতারের অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করতেন। এতে নাটক ও আবৃত্তিতে অংশ নিতেন।
কর্মজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ লোহানী অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। এর মধ্যে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, পাকিস্তানের নিগার পুরস্কার, পাকিস্তানের মজিদ আলমাক্কী পুরস্কার, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার এবং এফডিসি-র রজত জয়ন্তী পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। ১৯৭৫ সালের ১২ এপ্রিল চট্টগ্রামের কাপ্তাইয়ে কুয়াশা চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণের সময় লোহানী মৃত্যুবরণ করেন।
কেএসকে/এএসএম