ডাইনোসরের অস্তিত্ব থাকলে পৃথিবী কেমন হতো?
নব্বই দশকের কথা। সপ্তাহে সোমবার দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেই বিটিভির পর্দায় দেখা যেত অ্যানিমেটেড টেলিভিশন সিরিজ ‘গডজিলা’। সেই গডজিলাকে দেখে অনেকেই হয়ত ছোট বয়স থেকে ভাবতে শুরু করেছিলেন গডজিলা বা ডাইনোসর বলতে আসলেই কিছু আছে। একটু বোঝার বয়স হতেই ছোট বাচ্চাগুলোর ভুল ভাঙে। তবে একটা সময় পৃথিবীতে ডাইনোসরের অস্তিত্ব আসলেই ছিল। তারা দাপিয়ে বেড়াতো পুরো পৃথিবী।
বিশালাকার মেরুদণ্ডী প্রাণীগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম হলো এই ডাইনোসর। অনেক আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে এই বিশাল আকার প্রাণীটি। কিন্তু এই প্রাণী বিলুপ্ত না হলে হয়তো পৃথিবীতে বাঘ, সিংহ দেখে নয় বরং ডাইনোসর দেখেই পালাত সবাই। নিজেকে ঘোষণা করত বনের রাজা!
শুধু ডাইনোসরকে ঘিরেই পৃথিবীতে তৈরি অসংখ্য সিনেমা। মিচেল ক্রিকটনের উপন্যাস অবলম্বনে ডাইনোসরের পুনরুত্থান নিয়ে স্টিফেন স্পিলবার্গের ‘জুরাসিক পার্ক’ সিনেমাটি বিশ্বের সব প্রান্তে দারুণ জনপ্রিয়। সিনেমাটিতে দেখা যায়, জিনপ্রযুক্তির উন্নতির সাধনের পর ডাইনোসরকে আবার জাগিয়ে তোলা হয়। উদ্দেশ্য একটি দ্বীপে জুরাসিক পার্ক নামে থিমপার্ক বানিয়ে সেখানে ডাইনোসরগুলোকে প্রদর্শন করে অর্থ কামানো। এসব ডাইনোসর শান্ত স্বভাবের হবে, এটাই পরিকল্পনা। কিন্তু পরিকল্পনা আর বাস্তবের পার্থক্য বোঝা গেল তখনই, যখন ডাইনোসর মানুষকে আক্রমণ করতে লাগল। এছাড়াও জুরাসিক ওয়ার্ল্ড, শিন গডজিলা, গডজিলা ভারসেস কং ইত্যাদি ডাইনোসর ভিত্তিক অন্যতম সফল সিনেমা।
আরও পড়ুন: ১৪ দেশে ১০৫ বিয়ে করে বিশ্বরেকর্ড
পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের প্রাগৈতিহাসিক অধিবাসী ডাইনোসর। বিজ্ঞানীদের মতে প্রভাবশালী জন্তুটি প্রায় ১৬ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, আনুমানিক ২৩ কোটি বছর পূর্বে প্রথমে ডাইনোসরের আবির্ভাব ঘটে। তারা মনে করেন, ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষ প্রহরে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর পূর্বে মহাপ্রলয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায় ডাইনোসর। ডাইনোসরদের বিলুপ্তির অনেক অনেক বছর পর মানুষের হাতে পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ আসে।
সাড়ে ৬ কোটি বছর পূর্বে বিপর্যয় না ঘটলে কী হতে পারতো সেসব বিষয় নিয়ে নতুন এক দিগন্ত খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের একদল বিজ্ঞানী। তাদের ধারণা অনুযায়ী, যদি সেই বিপর্যয় শুধু আটলান্টিক মহাসাগরেই সীমাবদ্ধ থাকতো তাহলে সব ডাইনোসর বিলুপ্ত নাও হতে পারত। আজও পৃথিবীর বুকে বিরাজ থাকতো ডাইনোসররা। তবে ডাইনোসর টিকে থাকলে মানুষ কি আদৌ বর্তমানে এই অবস্থানে থাকতে পারতো? তা নিয়ে গবেষকরা গবেষণা করছেন। অনুমান নির্ভর ওই গবেষণায় তারা অনুমান করার চেষ্টা করছেন যে, এখন ডাইনোসর থাকলে তার বিবর্তন কোন পর্যায়ে হতো, মানুষের নিয়ন্ত্রণে ডাইনোসর থাকতো নাকি ডাইনোসরের অধীনে মানুষ?
অবশ্য এক গবেষক ডাইনোসর সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, যদি সে সময় মহাবিপর্যয় নাও ঘটতো তাহলেও আজ পৃথিবীর বুকে ডাইনোসরের কোনো অস্তিত্বই থাকতো না। কারণ ডাইনোসর যে তাপমাত্রার মধ্যে পৃথিবীতে টিকে ছিল এখন সেই তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা বহুগুণ বেড়েছে। তাই তিনি মনে করেন, স্তন্যপায়ী প্রাণিদের বুদ্ধি ও দক্ষতার কাছে হার মানত ডাইনোসররা।
আরও পড়ুন: রিকশা চালিয়ে পড়ার খরচ জোগাচ্ছেন ডলার
তবে মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক টম হল্টসের ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ওই সময়ে ডাইনোসররা বিলুপ্ত না হলে বর্তমান তাপমাত্রাতে নিজেকে ঠিকই গুছিয়ে নিতো এই জন্তুগুলো। ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের গবেষক স্টিফেন ব্রুস্যাটেও টমের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তার ধারণা, ডাইনোসরদের অভিযোজন ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে খুবই ভালো। সে কারণেই তারা ১৬ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে রাজত্ব করতে পেরেছিল। তাদের মতে, ওই বিপর্যয় না হলে এখনো হয়তো পৃথিবীর রাজত্ব ডাইনোসরদের হাতেই থাকত। তবে এসব বিষয় নিয়ে কেউই দালিলিক ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না যে আসলে পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত ডাইনোসর থাকলে পৃথিবীর পরিস্থিতি কেমন থাকত!
১৬৭৭ সালে ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী রবার্ট প্লট প্রথম বার ডাইনোসরের হাড়ের সন্ধান পান। অবশ্য সে সময় প্রাণীটি সম্পর্কে কারও কোনো ধারণা ছিল না। এরপর আরেক ব্রিটিশ জীবাশ্মবিদ উইলিয়াম বাকল্যান্ড ১৮১৯ সালে সেই হাড় থেকেই ডাইনোসরের সন্ধান পান। এরপর অনেক জায়গাতেই মিলেছে ডাইনোসরের অস্তিত্ব। কয়েক বছর আগে চীনের জিয়ানজি প্রদেশের গুয়ানঝু অঞ্চলে ডাইনোসরের প্রায় ৩০টি ডিমের জীবাশ্ম পাওয়া যায়। পরীক্ষার পর গবেষকরা জানান, এগুলো ডাইনোসরের ডিমের জীবাশ্ম বলেই মনে হচ্ছে। প্রন্ততাত্ত্বিকরা ডিমগুলো পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, এগুলোর বয়স কমপক্ষে ১৩০ মিলিয়ন অর্থাৎ ১৩ কোটি বছর।
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী
কেএসকে/এএসএম