ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

আজকের এই দিনে

বুদ্ধদেব বসুর প্রয়াণ দিবস

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ১০:১২ এএম, ১৮ মার্চ ২০২৩

বুদ্ধদেব বসু বিংশ শতাব্দীর একজন প্রভাবশালী বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, কথাসাহিত্যিক, অনুবাদক, সম্পাদক ও সাহিত্য-সমালোচক ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর বিশ ও ত্রিশের দশকে আধুনিক কবিতার যারা পথিকৃৎ তিনি তাদের একজন। তিনি বাংলা সাহিত্য সমালোচনার দিকপাল ও কবিতা পত্রিকার প্রকাশ ও সম্পাদনার জন্য তিনি বিশেষভাবে সমাদৃত।

১৯০৮ সালের ৩০ নভেম্বর মাতামহের বাড়ী কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৮ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সচ্চিদানন্দ ইনস্টিটিউশনে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে ১৯২১ সালে ১৩ বছর বয়সে তিনি ঢাকায় আসেন। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম বিভাগে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন। ১৯২৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে ঢাকা কলেজ) থেকে প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আই. এ. পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ইংরেজিতে ১৯৩০-এ প্রথম শ্রেণিতে বি. এ. অনার্স এবং ১৯৩১-এ প্রথম শ্রেণিতে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ছিলেন মেধাবী এক ছাত্র। বি. এ. অনার্স পরীক্ষায় তিনি যে নম্বর লাভ করেন তা একটি রেকর্ড এবং অদ্যাবধি এ রেকর্ড অক্ষুণ্ণ আছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপনার মাধ্যমেই তার কর্মময় জীবন শুরু করেন তিনি। জীবনের শেষাবধি তিনি নানা কাজে-কর্মে ব্যাপৃত রেখেছেন। শিক্ষকতাই ছিল জীবিকা অর্জনে তার মূল পেশা। এছাড়াও তিনি উচ্চ মানের সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন।

ছাত্রজীবনে ঢাকায় তিনি যে নিরীক্ষা শুরু করেন প্রৌঢ় বয়সেও সেই নিরীক্ষার শক্তি তার মধ্যে প্রত্যক্ষ করা যায়। তার প্রথম যৌবনের সাড়া এবং প্রাক-প্রৌঢ় বয়সের তিথিডোর উপন্যাস দু'টি দুই ধরনের নিরীক্ষাধর্মী রচনা। তার চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের রচনাগুলোর মধ্যে গ্রিক, ল্যাটিন, সংস্কৃত নানা চিরায়ত সাহিত্যের উপমার প্রাচুর্য দেখা যায়। অতি আধুনিক উপন্যাসের গীতিকাব্যধর্মী উপন্যাস রচনা করেছিলেন বুদ্ধদেব বসু। রচনার অজস্রতা এবং অভিনব অথচ সুললিত রচনাশৈলীর কারণে তিনি খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তার উপন্যাসে যে ঘাত-প্রতিঘাত ও মানবিক প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করেছেন, তাতে মনঃস্তত্ত্বের বিশ্লেষণের পরিবর্তে কাব্যোচ্ছ্বাসের প্রাধান্য বিদ্যমান। অকর্মণ্য, রডোড্রেনড্রন গুচ্ছ, যেদিন ফুটল কমল প্রভৃতি উপন্যাসে বুদ্ধদেব বসু কাব্যপ্রবণতার পরিচয় দিয়েছেন। তিথিডোর, নির্জন স্বাক্ষর, শেষ পাণ্ডুলিপি ইত্যাদি উপন্যাস নতুন জীবন-সমীক্ষা-রীতির পরিচয়বাহী।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সৃজনশীল সাহিত্যের সঙ্গে সমালোচনামূলক সাহিত্যে তার সাফল্য সমপর্যায়ের। তিনি বাংলা গদ্যরীতিতে ইংরেজি বাক্যগঠনের ভঙ্গি সুপ্রসিদ্ধ করেছেন। পরিমার্জিত সঙ্গীতমগ্নতা ও পরিশীলিত স্বতঃস্ফূর্ততা বুদ্ধদেব বসু'র গদ্যের বৈশিষ্ট্য। কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, সমালোচনা, নাটক, কাব্যনাটক, অনুবাদ, সম্পাদনা, স্মৃতিকথা, ভ্রমণ, শিশুসাহিত্য ও অন্যান্য বিষয়ে বসু'র প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৫৬টি।

বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার পত্তনে যে কয়েকজনের নাম সর্বাগ্রে স্মরণীয়, বুদ্ধদেব বসু তাদের মধ্যে অন্যতম। তাকে কল্লোল যুগ-এর অন্যতম প্রধান কাণ্ডারি হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলা কবিতায় আধুনিক চিন্তা-চেতনা এবং কাঠামো প্রবর্তনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে পশ্চিমা সাহিত্যের সঙ্গে তার সম্যক পরিচয় ছিল। ফলে ইউরোপীয় এবং মার্কিন সাহিত্যের কলা-কৌশল বাংলা সাহিত্যে প্রবর্তনে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। কলকাতায় তার বাড়ির নাম রেখেছিলেন কবিতাভবন যা হয়ে উঠেছিল আধুনিক বাংলা সাহিত্যের তীর্থস্থান। ১৯৩০-এর দশক থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েকটি দশক সাহিত্য পরিমণ্ডলে তার প্রভাব ছিল অবিসংবাদিত। সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় তিনি কাজ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম- কাব্যগ্রন্থ: মর্মবাণী, বন্দীর বন্দনা, একটি কথা, পৃথিবীর প্রতি, কঙ্কাবতী, দময়ন্তী, দ্রৌপদীর শাড়ি, শ্রেষ্ঠ কবিতা। উপন্যাস: একদা তুমি প্রিয়ে, সাড়া, সানন্দা, লাল মেঘ, বাসরঘর, পরিক্রমা, কালো হাওয়া, তিথিডোর, নির্জন স্বাক্ষর, নীলাঞ্জনের খাতা। গল্প: রজনী হ'ল উতলা, অভিনয়, অভিনয় নয়, রেখাচিত্র, হাওয়া বদল, শ্রেষ্ঠ গল্প, একটি জীবন ও কয়েকটি মৃত্যু, হৃদয়ের জাগরণ, ভাসো আমার ভেলা, প্রেমপত্র। প্রবন্ধ: হঠাৎ-আলোর ঝলকানি, কালের পুতুল, সাহিত্যচর্চা, রবীন্দ্রনাথ: কথাসাহিত্য, স্বদেশ ও সংস্কৃতি, সঙ্গ নিঃসঙ্গতা ও রবীন্দ্রনাথ, কবি রবীন্দ্রনাথ, সমুদ্রতীর, আমার ছেলেবেলা। ভ্রমণ কাহিনি: সব-পেয়েছির দেশে, জাপানি জার্নাল, দেশান্তর।

বুদ্ধদেব বসু ১৯৭০ সালে পদ্মভূষণ উপাধি লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে তপস্বী ও তরঙ্গিণী কাব্যনাট্যের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে স্বাগত বিদায় গ্রন্থের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন। ১৯৭৪ সালের ১৮ মার্চ ভারতে মৃত্যুবরণ করেন।

কেএসকে/এমএস

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন