ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

ই-কমার্সে ঊর্মির ইচ্ছাপূরণ

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী | প্রকাশিত: ১২:৫৮ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

‘এসএসসি এবং এইচএসসি ফুল ব্যাকগ্রাউন্ট কমার্স থাকায় উদ্যোক্তা শব্দটার সঙ্গে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। খুব ইচ্ছা ছিল নিজ প্রচেষ্টায় কিছু করার। কিন্তু পড়াশোনার চাপে কখনো সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তবে সেই সুযোগটা পেয়েছিলাম করোনাকালীন ই-কর্মাসের মাধ্যমে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমার অনেক দিনের ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। কারণ সংসারের বড় মেয়ে হওয়ায় ইচ্ছা ছিল পরিবারের জন্য কিছু করার। আর তা সম্ভব হয়েছে ই-কর্মাসের মাধ্যমে।’ এভাবেই ই-কমার্সের মাধ্যমে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুটা বলছিলেন নুসরাত জাহান ঊর্মি।

মাদারীপুর সদর উপজেলার হাজীর হাওলা ২নং ব্রিজ এলাকার মো. আমিনুল ইসলাম হাওলাদারের মেয়ে ঊর্মি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ এর চর্তুথ বর্ষের ছাত্রী তিনি। অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন করোনার সময় থেকে। ব্যাবসার শুরু সর্ম্পকে ঊর্মি বলেন, ‘একটা সময় সারাদিন ফেসবুকিং করতে করতে খুব বিরক্ত লাগতো। এরই মাঝে কয়েকটা ই-কমার্স গ্রুপে অ্যাড হয়েছি। তারমধ্যে সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম উই গ্রুপ উল্লেখযোগ্য। সেখানে দেখতাম নারীরা কত ধরনের উদ্যোগ নিতে পারেন। এসব দেখে দেখে নিজের মধ্যেও আত্মবিশ্বাস জন্মালো। ভাবলাম আমিও তো কিছু করতে পারি। কিন্তু কী করবো, কোনটা ভালো হবে, এসবের ভালো-খারাপ দিক নিয়েও ভাবতে থাকতাম। এর মধ্যেই খুঁজে দেখলাম মাদারীপুরের অনেক উদ্যাক্তা আছেন কিন্তু তাদের কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। এদের নিয়েও কাজ করার ইচ্ছা হলো। পরে চাচাতো বোনদের সহায়তায় মাদারীপুর ই-কমার্স ফোরাম খুললাম। সেখানে যুক্ত হয়ে নিজের আগ্রহ আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেল। আমার কিছু করতেই হবে এমনটাই মনে হচ্ছিল। কিন্তু বাসা থেকে চায় আমি পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করি। তাই তারা আমার উদ্যোগে পাশে থেকে ফিনান্সিয়াল সাপোর্ট দিবে না।

এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশনের জন্য কোচিং সেন্টার খুললাম। সেখান থেকে বেশ কিছু টাকা পেয়েছি। ২০১৯ সালের নভেম্বরে কোচিং শেষ হওয়াতে ওই টাকাগুলো থেকে নিজের খরচে কিছু রেখে বাকি ১০ হাজার টাকা দিয়ে নিজের কাঙ্খিত স্বপ্নপূরণ করতে কাজ শুরু করে দিলাম। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শুরু করে দিলাম কিছু হোমমেড প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসা। ফেসবুক পেজের নাম দেই ইচ্ছেতরী। করোনা মহামারিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বাড়িতে চলে আসি। তাই সেসময়ে ব্যবসায় বেশি সময় দিতে পারি। অল্পদিনের মধ্যেই অনলাইনে গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করায় দ্রুত ব্যবসা বাড়তে থাকে।

নুসরাত জাহান ঊর্মি প্রথমদিকে হোমমেড আনসল্টেড বাটার, শ্রীমঙ্গলের চা পাতা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে হোমমেড মোজারেলা চিজ, এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল, খাঁটি গাঁওয়া ঘি, গুঁড়া দুধ, ট্যাং, প্রাকৃতিক চাকের মধু, সরাসরি সৌদি থেকে আমদানিকৃত খেজুর দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। ব্যবসা জমে উঠলে পরিকল্পনা করেন ৬৪ জেলার বিখ্যাত কিছু প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করবেন। সেই ভাবনা থেকে শ্রীমঙ্গলের চা পাতা, নঁওগার প্যারা সন্দেশ, অষ্টগ্রামের পনির, রাজশাহীর আমও যোগ হয় তার অনলাইন ব্যবসায়।

মাদারীপুর জেলাসহ প্রায় ৬৪ জেলাতে তার পণ্য কুরিয়ারের মাধ্যমে গ্রাহকরা কিনছেন। শুরুর দিকে একা একা কাজ করলেও এখন তার সঙ্গে তার মা, বোন, প্রতিবেশী সহ প্রায় ১০ জন নারী কাজ করছেন। কাজের চাহিদা অনুযায়ী কর্মচারীরদের সংখ্যা বাড়ে-কমে। সেই সঙ্গে মাদারীপুরে হোম ডেলিভারী ও কুরিয়ারের জন্য একজন কাজ করছেন তার এখানে। প্রতিমাসে তার বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এর থেকে লাভ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মতো।

নুসরাত জাহান ঊর্মি আরও বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আমি শুরু থেকেই অক্লান্ত পরিশ্রম করে খুব সফলভাবে আগাতে পেরেছি। প্রথমদিকে পরিবারের সাপোর্ট না পেলেও এখন তারা আমাকে সব কাজেই সাহায্য করছেন। আমি বলবো মেয়েদের ঘরে বসেই ইনকাম করা সম্ভব। তাই অন্যের উপর নির্ভর না হয়ে নিজেই নিজের আত্মকর্মসংস্থান করা উচিত।

প্রতিবেশী আমেনা বেগম, শিউলি বেগম, ফাতেমা আক্তার কাজ করেন ঊর্মির সঙ্গে। তারা জানান, ঊর্মির এই কাজে সহযোগিতা করে তাদের বেশ ভালো আয় হয় মাসে। ফলে ঘরে বসে এমন আয় তাদের সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছে।

ডেলিভারী ম্যান মো. আল-আমিন জানান, ইচ্ছেতরীর সঙ্গে কাজ করে আয় করতে পারছেন তিনি। অটোবাইক চালানোর পাশাপাশি ডেলিভারীর কাজ করে বাড়তি টাকা আয় হচ্ছে তার। এতে করে কিছুটা হলেও ভালোভাবে পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারছেন তিনি।

মাদারীপুরের উন্নয়নকর্মী ফারজানা আক্তার মুন্নি বলেন, ই-কর্মাসের ব্যাপারে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করলে উদ্যোক্তারা আরও ব্যাপকভাবে কাজ করতে পারবেন।

মাদারীপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মাহমুদা আক্তার কণা বলেন, মেয়েরা এখন অনেক এগিয়ে। তারা জানে কীভাবে ঘরে বসে আয় করতে পারবে। ই-কর্মাসের মাধ্যমে মেয়েরা অনেক এগিয়ে যাচ্ছেন। মাদারীপুরের ঊর্মি আমাদের উদাহরণ।

কেএসকে/এএসএম

আরও পড়ুন