আজকের এই দিনে
শাহ আবদুল করিমের জন্ম
ওস্তাদ শাহ আবদুল করিম একজন বাংলাদেশি কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও সংগীত শিক্ষক। তিনি বাউল সংগীতকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। কর্মজীবনে তিনি পাঁচশো-এর বেশি সংগীত রচনা করেছেন। বাংলা সংগীতে তাকে ‘বাউল সম্রাট’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়।
১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খুব ছোটবেলায় তার গুরু বাউল শাহ ইব্রাহিম মাস্তান বকশ থেকে সংগীতের প্রাথমিক শিক্ষা নেন। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সব অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরূদ্ধে। তিনি তার গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহ এর দর্শন থেকে। যদিও দারিদ্র তাকে বাধ্য করে কৃষিকাজে তার শ্রম ব্যয় করতে কিন্তু কোন কিছু তাকে গান সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তিনি বাউলগানের দীক্ষা লাভ করেছেন সাধক রশীদ উদ্দীন, শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশ এর কাছ থেকে। তিনি শরীয়তী, মারফতি, দেহতত্ত্ব, গণসংগীতসহ বাউল গান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চাও করেছেন।
স্বশিক্ষিত বাউল শাহ আব্দুল করিম এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ শতাধিক গান লিখেছেন এবং সুরারোপ করেছেন। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও কয়েক বছর আগেও এসব গান শুধু ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন।
তার বিখ্যাত কিছু গান হলো-বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, গাড়ি চলে না, রঙের দুনিয়া তরে চায় না, তুমি রাখ কিবা মার, ঝিলমিল ঝিলমিল করেরে ময়ুরপংখী নাও, তোমার কি দয়া লাগেনা, আমি মিনতি করিরে, তোমারও পিরিতে বন্ধু, সাহস বিনা হয়না কভু প্রেম, মোদের কি হবেরে, মানুষ হয়ে তালাশ করলে, আমি বাংলা মায়ের ছেলে, মন মিলে মানুষ মিলে, সময় মিলেনা, সখী তুরা প্রেম করিওনা, কাছে নেওনা, দেখা দেওনা, মন মজালে,ওরে বাউলা গান
আমার মাটির পিনজিরাই সোনার ময়নারে ইত্যাদি।
বাউল শাহ আবদুল করিমের এখন পর্যন্ত ৭টি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে। একুশে পদক, কথা সাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরি পদক, রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার, লেবাক অ্যাওয়ার্ড, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার আজীবন সম্মাননা, সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস আজীবন সম্মাননা, বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি সম্মাননা, খান বাহাদুর এহিয়া পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা, হাতিল অ্যাওয়ার্ড, এনসিসি ব্যাংক এনএ সম্মাননা পেয়েছেন। ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
কেএসকে/জেআইএম