মাত্র আড়াই বছরে সফল ক্যালিগ্রাফার জিহাদ
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
একবার বান্ধবীর জন্মদিনে আর্ট পেপারে হ্যাপি বার্থডে ও তার নাম সহ বিভিন্ন ফুলের স্কেচ করে উপহার দেন। বান্ধবী খুশি হয়ে বলেছিল, ‘তুই তো খুব ভালো ক্যালিগ্রাফি করিস। আমি চাই তুই অনেক বড় একজন ক্যালিগ্রাফার হও’। হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় সেই বান্ধবী মারা যায়। বান্ধবীর সেই কথাগুলো মনে পড়তে থাকে তার। তারপর থেকে চালিয়ে যান ক্যালিগ্রাফি সাধনা।
মাত্র আড়াই বছরে তিনি একজন সফল ক্যালিগ্রাফার হন তিনি। দেশে মুষ্টিমেয় যে কয়েকজন ক্যালিগ্রাফিকে সফলভাবে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে টিকে আছেন তাদের মধ্যে তিনি একজন। দেশ ও দেশের বাইরে তার ক্যালিগ্রাফি আলো ছড়াচ্ছে। সফল এই তরুণ ক্যালিগ্রাফারের নাম জিহাদ বিন ফয়েজ।
জিহাদ চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় কোরানিক সাইন্স অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজের অর্নাস প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
পাশাপাশি ক্যালিগ্রাফি করেন। এ পর্যন্ত ৪ টি প্রদর্শনীতে তিনি অংশ নিয়েছেন। বিশ্বের ৩৪ টি দেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের নিয়ে আয়োজিত ভারতে আন্তর্জাতিক কুরআন ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী ২০২১-এ তার ছবি নির্বাচিত হয়। ইরানের ৪৩ তম ইসলামি বিপ্লব বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত, ইন্দো-ইরান আন্তর্জাতিক আর্ট ও ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে তার ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং নজর কাড়ে সবার। এছাড়াও সিটি ইসলামিক নিবেদিত, ইসলামিক ক্যালিগ্রাফির খোঁজে প্রায় ৭০০ এর অধিক প্রতিযোগীর মধ্যে সেরা পঞ্চম হিসেবে নির্বাচিত হন জিহাদ। অক্ষর শিল্পী আয়োজিত বাংলা ক্যালিগ্রাফি ও পেইন্টিং প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থানটি ছিল তার।
জিহাদের মতে, ক্যালিগ্রাফি শিল্পটি হলো গুরু বিদ্যা, গুরু ছাড়া কারও পক্ষেই ক্যালিগ্রাফি পরিপূর্ণভাবে শেখা সম্ভব না। তিনি ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ক্যালিগ্রাফার শিল্পী মাহবুব মুর্শেদ, বিশিষ্ট ক্যালিগ্রাফার শিল্পী সিকান্দার মেহেদী স্বনামধন্য পেইন্টার শিল্পী আলী আহমদসহ অনেকের কাছে ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং শিখেছেন।
আরও পড়ুন: ঘরের খাবার অনলাইনে বিক্রি করে স্বাবলম্বী সায়মা
ফেসবুকে জিহাদের একটি পেজ আছে। ‘জাহিদ'স আর্ট’ নামের সেই পেজে যে কেউ ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিংয়ের অর্ডার দিতে পারেন। কখনো নিজের ডিজাইন, কখনো ক্রেতার পছন্দমত ডিজাইনে ক্যালিগ্রাফি করেন জিহাদ। আরবি, বাংলা, ইংরেজি সব ভাষাতেই ক্যালিগ্রাফি করেন। আরবি ক্যালিগ্রাফিতে থাকে কোরআনের আয়াত, আরবি কবিতা অথবা যে কোনো একটি বর্ণ ক্যালিগ্রাফির বেলায় বেছে নেন কোনো মনীষীর উক্তি, কোরআনের আয়াতের বাংলা অর্থ বা কবিদের কবিতার লাইন বাংলা। এছাড়া মসজিদের দেয়ালেও ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং করেন জিহাদ।
তার করা এসব ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিংয়ের মূল্য সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী, কাজের সাইজ, কি লেখা হবে, ফ্রেম ইত্যাদির উপর মূল্য নির্ভর করে। গড়ে তার মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকা। তবে ইসলামিক লোগো ডিজাইনের কাজে আয় বেশি হয়। ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিংয়ের জন্য জল রং ও এক্রেলিক রং ব্যবহার করেন। বাংলা বর্ণমালা দিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র পেইন্টিংও এঁকেছেন। যা ব্যাপক জনপ্রিয় তার পেজে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ফকির বলেন, জিহাদের কাজগুলো অসাধারণ, তার কাজের মধ্যে সৃজনশীলতা প্রকাশ পায়। লেগে থাকলে একজন সফল শিল্পী হওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন: যেভাবে সফল ফ্রিল্যান্সার হলেন ফাহিম
ভালো কাজ করলে তা সহসাই মানুষের নজর কাড়ে। প্রশংসা পায়। জিহাদের বেলাও তেমনই হয়েছে। জিহাদের কাজগুলো আমি খুব পরখ করে দেখি, প্রতিটা কাজের মধ্যেই একটা সৃজনশীলতা প্রকাশ পায়, কিছুটা লুকানো অথচ গভীরভাবে শৈল্পিক কিছু কারু কাজের ছোঁয়া থাকে যা একদিন খুব বড় হতে সাহায্য করবে, এভাবেই বলেছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্যালিগ্রাফার ও পেইন্টার বাংলাদেশের আধুনিক ক্যালিগ্রাফি শিল্পের রূপকার শিল্পী মাহবুব মুর্শেদ।
ক্যালিগ্রাফির পাশাপাশি জিহাদ ক্যালিগ্রাম শিল্প নিয়েও কাজ করেন। ক্যালিগ্রাম হলো-কোনো নির্দিষ্ট ভাষার বর্ণ ও লেখার মাধ্যমে কোনো বস্তুর আকৃতি ফুটিয়ে তোলাকে ক্যালিগ্রাম বলে। ‘মধ্যবিত্ত পরিবার’ তার অসম্ভব জনপ্রিয় একটি ক্যালিগ্রাম। মধ্যবিত্ত লেখার মাধ্যমে তিনি একটি বটবৃক্ষের ছবি ফুটিয়ে তোলেন। কারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বপ্নগুলো বটবৃক্ষের মতো বড় তবে পূরণ করার মতো সাধ্য নেই। লেখার মাধ্যমে তিনি নারীর অবয়ব ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘নারী’ নামের তার ক্যালিগ্রামটি প্রশংসিত হয়েছে শিল্পপ্রেমীদের কাছে।
ক্যালিগ্রাফি নিয়ে জিহাদের রয়েছে অনেক পরিকল্পনা। তার ইচ্ছা ক্যালিগ্রাফি শিল্প বিষয়ে তুরস্কে পড়াশোনা করতে যাবেন।আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে যান এই শিল্পকে। ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে নিজের দেশকে চেনাতে চান বিশ্বকে।
কেএসকে/এমএস