কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর জন্ম
কুমড়ো ফুলে ফুলে
নুয়ে পড়েছে লতাটা,
সজনে ডাঁটায়
ভরে গেছে গাছটা,
আর, আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি।
খোকা তুই কবে আসবি!
কবে ছুটি?
চিঠিটা তার পকেটে ছিল ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা।
কবিতার রচয়িতা কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। তার পুরো নাম আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ খান। বিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের পঞ্চাশের দশকের একজন মৌলিক কবি। তার দুটি দীর্ঘ কবিতা ‘আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি’ এবং ‘বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা’ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারে অভূতপূর্ব সংযোজন।
১৯৩৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলার এর বাবুগঞ্জের বাহেরচরের ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন একজন উচ্চপদস্থ সরকারি আমলা। ১৯৫৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ইংরেজিতে মাস্টার্স করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯৫৭ সালে অধ্যাপনা পেশা ছেড়ে তিনি যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে। ১৯৮২ সালে তিনি সচিব হিসেবে অবসর নেন এবং রাষ্ট্রপতি এরশাদের সরকারে মন্ত্রীসভায় যোগ দেন। কৃষি ও পানি সম্পদ মন্ত্রী হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করে ১৯৮৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
পরবর্তী কালে ১৯৯২ সালে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে যোগ দেন বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থায়। ১৯৯৭ সালে তিনি একই সংস্থা থেকে পরিচালক হিসেবে অবসর নেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি ঢাকায় ফিরে একটি বেসরকারি সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবেও বেশ কয়েকদিন দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি লোকজ ঐতিহ্যের ব্যবহার করে ছড়ার আঙ্গিকে কবিতা লিখেছেন। প্রকৃতির রূপ ও রঙের বিচিত্রিত ছবিগুলো তার কবিতাকে মাধুর্যমণ্ডিত করেছে। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো-সাত নরী হার, কখনো রং কখনো সুর, কমলের চোখ, আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি, সহিষ্ণু প্রতীক্ষা, প্রেমের কবিতা, বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা, আমার সময়, নির্বাচিত কবিতা, আমার সকল কথা, মসৃণ কৃষ্ণ গোলাপ, খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ইত্যাদি। তিনি একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছেন। ২০০১ সালের ১৯ মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
কেএসকে/এমএস