ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

আকাশে কত তারা?

শেখ আনোয়ার | প্রকাশিত: ১০:৫৯ এএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

আমরা যখন খালি চোখে আকাশ দেখি তখন সত্যি সত্যিই যে অসংখ্য তারা দেখতে পাই, তা কিন্তু নয়। মাত্র সীমিত সংখ্যক তারা চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। আমাদের দৃষ্টি বিভ্রম ঘটায়। মনে হয়, আকাশের সব তারা যেন গুনে শেষ করা যাবে না। প্রকৃতপক্ষে একজন স্বাভাবিক সুস্থ দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ খালি চোখে দেখতে পান পাঁচ হাজারের মতো তারা। এর বেশি নয়। বরং কিছু কম হতে পারে। কিছু মানুষ পাওয়া যায়, যাদের দৃষ্টিশক্তি অসাধারণ তীক্ষ্ণ। তাদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটি অবশ্য অনেক বেশি হতে পারে। কিন্তু সে হিসেবে আকাশের তারার সংখ্যা মোট ছয় হাজারের বেশি নয়। তারাদের এ হিসাবটি অবশ্য সারা বছর ধরে মানমন্দিরে আকাশ পর্যবেক্ষণ করার হিসেব। অর্থাৎ ঋতুভেদে আকাশে যে ভিন্ন ভিন্ন তারার দল দেখা দেয়, তাদের সবাইকে ধরে এ হিসাব করা হয়। নয়তো, কোনো এক রাতে কোনো এক সময়ে দেখা তারার সংখ্যা হয় অনেক কম। ২-৩ হাজারের মতো।

তবে এ হিসাব পৃথিবীর নিরক্ষীয় এবং এর নিকটবর্তী অঞ্চলগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমাদের পৃথিবীর মেরু অঞ্চল থেকে আমরা যদি আকাশের তারা গুনতে যাই তবে সারা বছর ধরে আকাশ দেখেও বিশেষ কোনো সুবিধা হবে না। কোনো এক রাতে যদি ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজারের মতো তারা দেখা যায়, তবে সেখানকার প্রতি রাতে ঐ একই পরিমাণ তারা দেখা যাবে। এর চেয়ে হয়তো কিছুটা কম-বেশি হতে পারে। তার চেয়ে বড় কোনো পার্থক্য হওয়া মোটেই সম্ভব নয়। এতক্ষণ যে আলোচনা হলো তাতে জানা গেল খালি চোখে আকাশ দেখার কথা। দূরবীণ বা মানমন্দির ব্যবহার করলে আকাশের তারার সংখ্যা কিন্তু অনেক বেড়ে যায়। মানমন্দিরের দূরবীণের শক্তি বৃদ্ধি অনুসারে মহাকাশের তারার সংখ্যাও বেড়ে যায় অনেক অনেক। মানমন্দির, দূরবীণ দিয়ে সরাসরি দেখা ছাড়া বিজ্ঞানীরা তারা দেখতে একাধিক পরোক্ষ কৌশলও ব্যবহার করেন। যেমন দূরবীণযুক্ত ক্যামেরার সাহায্যে আলোকচিত্র গ্রহণ করেন। এতে চোখের পর্দায় সাড়া জাগাতে পারে না, এমন অনেক ক্ষীণ তারাও ধরা পড়ে যায়।

আরও পড়ুন: খুনি শামুকের কামড়ে মরতে পারে মানুষও

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সবরকম কৌশল অবলম্বনে প্রাপ্ত তারার সংখ্যা নির্দেশ করা দুঃসাধ্য। আর কৌশল যতো উন্নততর হচ্ছে, ততই আবিষ্কৃত তারার সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে যে, মানুষের অনাবিষ্কৃত অনেক তারা থাকার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব নিশ্চিত করে বলা যায়, তারার সংখ্যা অসংখ্য। পৃথিবীর থেকে সূর্যের দূরত্ব পর্যায়ক্রমে সময় বিশেষে কম-বেশি হয়ে থাকে। পৃথিবীর থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব প্রায় ১৪.৯৬ কোটি কিলোমিটার বা ১৫ কোটি কিলোমিটার। এমন বিশাল সংখ্যার ব্যবহার অসুবিধাজনক। তাই জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এক কৌশল অবলম্বন করেন। তারা বলেন যে, আলোর গতিবেগ হলো এক সেকেন্ডে তিন লাখ কিলোমিটার। আলো সূর্য থেকে পৃথিবীতে আসতে সময় নেয় প্রায় আট মিনিট। আসুন, এবার তারাদের সঙ্গে কিছুটা পরিচয়-পরিচিতি হই।

সবচেয়ে কাছের তারা
সূর্যকে বাদ দিলে আমাদের নিকটতম তারা হলো ‘প্রক্সিমা সেন্টরাই’। ওখান থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে ৪.২৮ বছর। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পরিভাষায় এ হলো ৪.২৮ আলোকবর্ষ দূরত্ব। আমাদের নিত্য ব্যবহার্য এককে এ দূরত্ব হলো প্রায় ৪০৫৫৫৩৬,৮০,০০,০০০ কিলোমিটার। ‘প্রক্সিমা সেন্টরাই’ থেকে কিছুটা দূরে অন্য দু’টো তারা রয়েছে। এদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আলফা সেন্টরাই ‘এ’ এবং ‘আলফা সেন্টরাই ‘বি’। পরস্পরের খুব কাছাকাছি রয়েছে বলে এ দু’টো তারারই দূরত্ব পৃথিবী থেকে সমান-৪.৩৮ আলোকবর্ষ। এদের দু’টোকেই পৃথিবীর (সূর্যকে বাদ দিয়ে) দ্বিতীয় নিকটতম তারার মর্যাদা দেওয়া হয়। পৃথিবী থেকে শেষোক্ত তারা দু’টোর দূরত্ব ‘প্রক্সিমা সেন্টরাই’য়ের চেয়ে প্রায় ০.১ আলোকবর্ষ বেশি। অর্থাৎ ৯৬,০০০ কোটি কিলোমিটারের মতো বেশি। তবু কিন্তু ‘প্রক্সিমা সেন্টরাই’কে খালি চোখে দেখা যায় না। এটি দেখতে শক্তিশালী দূরবীণ যন্ত্রের প্রয়োজন। অথচ অপর এই দু’টো তারাকে খালি চোখে দেখা তো যায়ই, বরং বেশ উজ্জ্বলভাবে আমাদের নজরে আসে।

সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা
মহাবিশ্বের সবচেয়ে উজ্জ্বল যে তারাটি রয়েছে, তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘পিস্তল তারা’। কেননা এটি দেখতে অনেকটা পিস্তলের মতো। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা উন্নত মানমন্দির, দূরবীণের সাহায্যে এর অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন। তবে আমাদের দুর্ভাগ্য হলো আমরা খালি চোখে এ তারাটিকে দেখতে পাই না। শুধু হাবল স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে দেখতে পারি। আমাদের সূর্য যতখানি উজ্জ্বল, এ তারাটি তার চেয়ে এক কোটি গুণ বেশি উজ্জ্বল। বিজ্ঞানীরা অংক করে প্রমাণ করেছেন, আমাদের সৌরজগতের নক্ষত্র সূর্য এক বছরে যে পরিমাণ শক্তি নির্গত করে থাকে, এ নক্ষত্র বা তারাটি মাত্র ছয় সেকেন্ডে সেই পরিমাণ শক্তি বের করে! এ থেকেই বোঝা যায় তারাটি কি প্রচণ্ড ক্ষমতাসম্পন্ন। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, এ তারাটি পৃথিবী থেকে ২৫,০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এ তারাটি সূর্যের তুলনায় ৩২৫ গুণ বড়, ব্যাস-৮,৬৪,৯১০ নবীন তারা। আর সেজন্য এটি বেশ জ্বলজ্বলে, এর বয়স ১০ থেকে ৩০ লাখ বছরের মধ্যে। সে অনুযায়ী আমাদের সূর্যের বয়স শুনলে চোখ কপালে ওঠে, সূর্যের বয়স ৫ কোটি বছর।

আরও পড়ুন: তীক্ষ্ণ চোখের ৯ ফুটের সাগর ঈগল

খালি চোখে দেখা সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা
আমাদের পৃথিবী থেকে দেখা সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটির নাম হলো ‘ডগস্টার’ বা ‘কুকুর তারা’। এ তারাটির বিজ্ঞানসম্মত নাম হলো ‘সিরিয়াস’ অথবা ‘আলফা ক্যানিস ম্যাজেরিস’। পৃথিবী থেকে এ তারাটির দূরত্ব হলো ৮.৬৪ আলোকবছর। আমরা জানি ১ সেকেন্ডে আলো ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল বা ৩ লাখ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে। এ প্রচণ্ড গতিবেগে আলো এক বছরে যতটুকু পথ অতিক্রম করে তাকে আলোকবছর বা আলোকবর্ষ বলা হয়। সে হিসেবে এক আলোক বছরে আলো ১ কোটি ৮০ লাখ মাইল বা ২ কোটি ৮০ লাখ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে। আমাদের পৃথিবী থেকে ‘সিরিয়াস’ নামের তারাটির দূরত্ব হলো ৫০ মিলিয়ন মাইল বা ৮০ মিলিয়ন কিলোমিটার। ‘সিরিয়াস’-য়ের মধ্যে যে পরিমাণ ভর রয়েছে, তা সূর্যের ভরের ২.১৪ গুণ বেশি। সূর্যের থেকে এ তারাটি ২৪ গুণ বেশি উজ্জ্বল। এ তারাটির তাপমাত্রা ১৭,৫০০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেডের কাছাকাছি।

সবচেয়ে নিকটবর্তী তারকাপুঞ্জ
পৃথিবী থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী তারকাপুঞ্জের নাম হলো ‘হাইভেস তারকাপুঞ্জ’। ‘তারাস’ নামের তারকা অঞ্চলের মধ্যে এটির অবস্থান। আমাদের সৌরজগতের মধ্যে সবচেয়ে কাছাকাছি এটির অবস্থিতি। এ তারকাপুঞ্জের মাঝে ৩০০টি তারা রয়েছে। পৃথিবী থেকে ১৫০ আলোকবছর দূরে অবস্থিত এ তারকাপুঞ্জ। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, এ তারকাপুঞ্জের তারাগুলো ৬ কোটি ২৫ লাখ বছরের পুরনো।

লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক। এম.ফিল স্কলার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

কেএসকে/এএসএম

আরও পড়ুন