ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

আবাসিক হলের মাঠ যেন এক টুকরো ব্রাজিল

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ০২:৪৯ পিএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০২২

ইমন ইসলাম
আবাসিক হলের মধ্যে ছোট্ট একটি মাঠ। সেই মাঠের সবুজ ঘাসের মাঝে শোভা পাচ্ছে হলুদ রঙে আঁকা ব্রাজিলের পতাকা। দেখে মনে হবে মাঠ তো নয়, যেন এক টুকরো ব্রাজিলেরই প্রতিচ্ছবি। প্রিয় দলের পতাকার আদলে এভাবেই খেলার মাঠকে রং তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে তুলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাওলানা ভাসানী হলের শিক্ষার্থীরা।

ব্রাজিল নামটি শুনলেই মনে পড়বে ফুটবলের কথা। ফুটবল বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি এই দেশ সম্পর্কে কে না জানেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সীরাই ব্রাজিল ফুটবল জাদুতে মুগ্ধ। তাদের ফুটবল নৈপুণ্যে বরাবরই সমর্থকদের মনে উৎসাহ উদ্দীপনার সঞ্চার ঘটিয়েছে।

ব্রাজিল মানেই সাম্বার তালে তালে দর্শক মাতানো খেলা। সাম্বা নৃত্যের সঙ্গে শৈল্পিক ফুটবলের সংমিশ্রণ ব্রাজিলকে দিয়েছে অনন্য এক উচ্চতা। এই অনন্য উচ্চতা নিয়ে যাওয়া কারিগরদের মধ্যে অন্যতম রোনালদো, রোনালদিনহো, কাকা, রবার্তো কার্লোস থেকে শুরু করে হালের ক্রেজ নেইমারও রয়েছেন। যাদের হাতে রচিত হয়েছিল ব্রাজিলের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। সর্বোচ্চ পাঁচবার বিশ্বকাপ নেওয়া এই দলটির খেলোয়াড়দের ফুটবল জাদুতে বার বার মেতে উঠেছে ফুটবল প্রেমীরা, দিশেহারা হয়েছে প্রতিপক্ষ।

সময়ের ধারাবাহিকতায় কেটে গেছে অনেক দিন অনেক সময়। ফুটবল খেলায় এসেছে পরিবর্তন, বিদায় ঘটেছে অনেক কিংবদন্তির। তবুও থেমে নেই ফুটবল উৎসব। নতুন প্রজন্মের ফুটবলারদের সৃজনশীল পারফরম্যান্স প্রচেষ্টা ফুটবল খেলাকে নিয়ে গেছে অন্য এক মাত্রায়।

ব্রাজিল এমন একটি ফুটবল দল যাদের খেলায় একটা শিল্প থাকে, ছন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। ফুটবলের সব সৌন্দর্য যেন নেমে এসেছে তাদের খেলায়। যেখানে রয়েছে নেইমারের মতো ফুটবল জাদুকর। যার ফুটবল নৈপুণ্যে ব্রাজিল সমর্থকদের করেছে উল্লাসিত।

ব্রাজিল যুগে যুগে বিশ্বকে উপহার দিয়েছে অসংখ্য কিংবদন্তি ফুটবলার। যাদের ভেলকিতে ফুটবল শিল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ফুটবলের নান্দনিকতা, সৌন্দর্য বর্ধনে ব্রাজিল ফুটবল যোগ করেছে নতুন মাত্রা। পেলে, গ্যারিঞ্জা, জর্জিনহো, বেবেতো, ভাবা, দিদি, লিওনিডাস, কাফু, দুঙ্গা, জিকো, সক্রেটিস, কাকা, রবার্তো কার্লোস, রোনালদো, রিভালদো, রোমারিও, নেইমার, রোনালদিনহোর মতো কালজয়ী ফুটবলারদের আবির্ভাব ফুটবল খেলাকে করেছে আরও সমৃদ্ধ।

ফুটবল পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের কাছে জনপ্রিয় একটি খেলা। এ খেলা অতিক্রম করেছে ভাষা ও সংস্কৃতির ভিন্নতার বাধাকে। ফুটবলের মাঠে ভিন্ন ভিন্ন দেশের, সংস্কৃতির, ভাষাভাষীর মানুষের এ অপূর্ব মেলবন্ধনই ফুটবলকে আরও বেশি জনপ্রিয় করে তুলতে পারে।

ফুটবল বিশ্বকাপ এলেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মেতে ওঠে ফুটবল আনন্দে। ফুটবলপ্রেমী শিক্ষার্থীদের প্রিয় দলের পতাকা ও জার্সিতে ছেয়ে যায় পুরো ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাস এসময় ফুটবল বিশ্বের অন্যতম দুই পরাশক্তি আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। প্রিয় খেলোয়াড় নেইমার-মেসির গুনগানে ভরে ওঠে ক্যাম্পাস আঙিনা।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার মুখে মুখে প্রিয় দল ও খেলোয়াড়ের নাম শোভা পেতে থাকে। ক্লাসরুম থেকে শুরু করে চায়ের দোকান সব জায়গাতেই চলে ফুটবল টকশো। কখনো বা উত্তেজিত হয়ে ওঠা কখনো বা হাসি তামাশায় মেতে ওঠা এভাবেই কাটতে থাকে সময়ের পর সময়। শুধু তাই নয়, প্রিয় দলের সমর্থকদের নিয়ে এসময় গড়ে ওঠে নতুন নতুন কমিটি। যে কমিটিতে জায়গা পায় অদৃশ্য সভাপতি ও সেক্রেটারির মতো ফুটবলপ্রেমীদের। যারা নিজেদের দলের প্রচার প্রচারণার পাশাপাশি প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকদের প্রিয় দল ও খেলোয়াড় নিয়েও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে থাকে।

শুধু রঙ্গমঞ্চ নয় এ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও চলতে থাকে ফুটবল তর্ক যুদ্ধ। পছন্দের দলের ছবি, খেলোয়াড়দের ছবি পোস্ট করা, প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকদের উদ্দেশ্য উষ্কানিমূলক পোস্ট করা, প্রিয় দলের জার্সি পরে স্টাইলিশ ছবি পোস্ট করেও উল্লাস করেন ফুটবল সমর্থক তারুণ্যে।

আবাসিক হলের মাঠ যেন এক টুকরো ব্রাজিল

এসময় সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে ওঠে আবাসিক হলগুলো। আকাশ চূম্বী বিশাল বিশাল পতাকায় ছেয়ে যায় হলের দেয়াল গুলো। খেলা শুরু হলেই টিভি রুমগুলো ভরে ওঠে ফুটবলপ্রেমীদের পদচারণায়। খেলা শেষে কেউবা কান্নায় চোখ ভেজায়, কেউবা আবার উল্লাস উদ্দীপনায় ফেটে পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ টি হলের মধ্যে মাওলানা ভাসানী হল অন্যতম। এই হলে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৭০০ শিক্ষার্থীর আবাস। এদের মধ্যে আছে দুটি ভাগ। একটি অংশ আর্জেন্টিনা সমর্থক আর অন্যটি ব্রাজিলের। তারা প্রিয় দলকে ভালোবেসে বিভিন্ন রকমের চিত্রকর্ম, পোষ্টার এঁকে ভালোবাসা প্রকাশ করছেন।

এদের মধ্যে ব্রাজিল সমর্থকরা ব্যতিক্রমী এক চিত্রকর্ম এঁকেছেন প্রিয় দলকে ভালোবেসে। আবাসিক হলের মাঠকেই বানিয়ে ফেলেছেন প্রিয় ফুটবল দলের পতাকা। উপর থেকে দেখে মনে হবে যেন এক টুকরো ব্রাজিল নেমে এসেছে সবুজ জমিনে। এই দৃশ্য দেখতে অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরাও ভিড় জমাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শোভা পাচ্ছে এই মাঠের ছবি ও ভিডিও।

এবারের কাতার বিশ্বকাপের ২২ তম আসরে রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল করেছে শুভ সূচনা। নেইমার ছাড়াও রিচার্লিসনের দূর্দান্ত জোড়া গোল ফুটবল সমর্থকদের মন ছুঁয়ে নিয়েছে। ম্যাচ শেষে তাদের হৈ হুল্লোড়ে পুরো হল এলাকা পুলকিত হয়ে ওঠে। প্রিয় খেলোয়াড় নেইমারের ইনজুরিতেও ব্রাজিল সমর্থকদের উল্লাস থামেনি। নেইমার বিহীন দলটি ঠিকই সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে যায়।

ক্যাম্পাসের ব্রাজিলিয়ান সমর্থকরা জানান, একমাত্র দেশ হিসেবে ব্রাজিল বিশ্বকাপের সব আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। যে কৃতিত্ব অন্য কোন ফুটবল দলের নেই। তাদের ছন্দময় খেলার ধরন প্রমাণ করে ব্রাজিল ছাড়া বিশ্বকাপ অসম্ভব।

আর বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দল ব্রাজিল। সর্বোচ্চ পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে ব্রাজিল। অনেকে বলেন আমরা কাপ দেখে দল করি না বরং খেলা দেখে দলের সমর্থন করি। তাদের জানা উচিত ভালো খেলা ব্যতীত কখনো বিশ্বকাপের মতো মর্যাদার শিরোপা অর্জন করা সম্ভব নয়।

যারা ফুটবলকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে, তারা অবশ্যই ব্রাজিলের নান্দনিক খেলা দেখে ফুটবলের প্রেমে পড়েছে। শুধু শিরোপা জয়ে নয় ড্রিবলিং, পাসিং, এটাকিং, নিখুঁত ফিনিসিং এবং পায়ের দক্ষ কারুকাজ দেখে ফুটবলপ্রেমীরা ব্রাজিলকে ভালোবাসে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

কেএসকে/জেআইএম

আরও পড়ুন