ভিনদেশি পতাকা ওড়ানোর নিয়ম
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো দেশেও চলছে বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা। সবাই নিজের পছন্দের ফুটবল দলের জার্সি কিনছেন পতাকা টানিয়ে দিচ্ছেন ছাদে বা বারান্দায়। তবে ভিনদেশি পতাকা ওড়ানোর নিয়ম জানেন কি? আমাদের দেশে যেমন পতাকা ওড়ানোর নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে তেমনি সকারের পক্ষ থেকে ভিনদেশি পতাকা ওড়ানোর রয়েছে আলাদা বিধি।
কেউ কেউ আছেন শুধু ভিনদেশি পতাকা একটি খুটির সঙ্গে বেঁধে দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার একই খুটিতে জাতীয় পতাকার সঙ্গে ভিনদেশি পতাকা উড়াচ্ছেন। এই নিয়ম পুরোপুরি ভুল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, ১৯৭২-এর বিধি অনুযায়ী বিদেশী পতাকা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
তবে যে কোনো বিদেশী পতাকা উত্তোলন করতে হলে সঙ্গে একটি জাতীয় পতাকাও ওড়াতে হবে। দুটি পৃথক স্তম্ভে উত্তোলন করতে হবে দুটি পতাকা। এক্ষেত্রে জাতীয় পতাকার নিচে থাকবে ভিনদেশি পতাকাটি। পতাকার সাইজটা একই সমান হতে হবে এবং বাংলাদেশের পতাকা ডানদিকে থাকবে। সূর্যাস্তের আগেই আবার পতাকা নামিয়ে ফেলতে হবে।
এছাড়াও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের রয়েছে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন। জাতীয় পতাকা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নির্দেশ করে। সব সরকারি ভবন, অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকার নির্ধারিত ভবনে প্রতি কর্মদিবসে পতাকা উত্তোলনের বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশ পতাকা রুলস, ১৯৭২-এর ৪ ধারায় কোন কোন দিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যাবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় দিবস যেমন-মহানবী হজরত মুহাম্মদের (স.) জন্মদিনে (ঈদে মিলাদুন্নবী), স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও সরকার ঘোষিত অন্য যে কোনো দিবসে বাংলাদেশের সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন এবং কনস্যুলার অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা বাধ্যতামূলক। তাছাড়া শহীদ দিবস ও জাতীয় শোক দিবসে বা সরকার ঘোষিত অন্যান্য দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার বিধান করা হয়েছে।
জাতীয় পতাকা সর্বত্র প্রদর্শন করা যায় না। জাতীয় পতাকা প্রদর্শনের একটা নিয়ম রয়েছে। ইচ্ছে করলেই যে কেউ গাড়িতে পতাকা ব্যবহার করতে পারেন না। কেননা আইনে বলা হয়েছে, কোনো অবস্থায়ই গাড়ি কিংবা কোনো যান, রেল কিংবা নৌকার খোলে, উপরিভাগে বা পেছনে পতাকা ওড়ানো যাবে না। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন ও দফতর, যেমন- রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধানমন্ত্রীর ভবন, জাতীয় সংসদ ভবন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময় এবং কিছু নির্ধারিত ভবনসমূহে সব কর্মদিবসে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। এসব ক্ষেত্রে শুধু সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত পর্যন্ত পতাকা উত্তোলিত রাখতে হবে। এটাই নিয়ম।
তবে বিশেষ কারণে রাতে ভবনসমূহে পতাকা উত্তোলিত রাখা যেতে পারে। যেমন- সংসদের রাতের অধিবেশন, রাষ্ট্রপতি বা মন্ত্রীগণের শপথ অনুষ্ঠান চলাকালীন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে, নৌযানে ও বিমানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যাবে। এ ছাড়া স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা, মন্ত্রী সমমর্যাদার ব্যক্তি, বিদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনের অফিস ও কনস্যুলার পোস্টসমূহে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হয়। বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের প্রধানের গাড়িতে ও তাদের নৌযানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন। প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, উপমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাজধানীর বাইরে ভ্রমণকালে গাড়িতে ও নৌযানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
বাংলাদেশের পতাকার ওপরে অন্য কোনো পতাকা বা রঙিন পতাকা ওড়ানো যাবে না। অন্য দেশের পতাকার সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হলে প্রথমে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হবে। নামানোর সময়ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সর্বশেষে নামাতে হবে।
কেএসকে/জেআইএম