ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

হাই হিল পরতেন পুরুষরা, নারীদের হলো যেভাবে

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৫:২১ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০২২

নারীদের ফ্যাশনের অন্যতম এক অনুষঙ্গ হচ্ছে জুতা। তবে শাড়ি হোক কিংবা সেলোইয়ার কামিজের সঙ্গে হাই হিল বেশ মানিয়ে যায়। ফ্যাশন সচেতন নারীরা ২ থেকে শুরু করে ৬ ইঞ্চি হিলও পরেন। বিশেষ করে যারা র্যাম্পে হাঁটেন, তাদের খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই। তাদের হাই হিল পরে স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটা মুগ্ধ করে অনেককেই। তবে জানেন কি? নারীরা হাই হিল পরলেও একসময় পুরুষের ফ্যাশনের অনুষঙ্গ ছিল হাই হিল।

হ্যাঁ, এক সময় নারীরা নন, পুরুষরাই পরতেন হাই হিল। হাই হিল পরা ছিল উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন পুরুষের আভিজাত্যের প্রতীক। সমাজে যার যেমন অবস্থান তার হিলের উচ্চতাও তত বেশি। এমনকি হাই হিল সেসময় প্রকাশ করত পুরুষের ক্ষমতা ও শক্তি।

বিভিন্ন শতাব্দীর ইতিহাসে পুরুষদের হাই হিল পরতে দেখা গেছে। ১০ম শতাব্দীতে, পারস্য সেনাবাহিনীরা যে বুট পরতেন সেটিতেও ছিল হাই হিল। অর্থাৎ গোড়ালির অংশ ছিল উঁচু। যুদ্ধের সময় তারা এই বুট ব্যবহার করতেন। ঘোড়ার পিঠে চড়ে থাকা অবস্থায় রেকাবে পা রেখে দাঁড়িয়ে যেতে হতো এবং তীর ছুঁড়তে হতো। এ সময়ে হাই হিল পরা থাকলে রেকাবে পা আটকে রাখা সহজ হতো। শুধু এ কারণেই যুদ্ধের সময় তীরন্দাজরা হাই হিল পরতেন।

১৫৯৯ সালে পারস্যে হাই হিল পরার প্রচলন ছিল সম্রাট এবং সমাজের উঁচু শ্রেণির পুরুষদের। পারস্য প্রতিনিধিরা যখন রাশিয়া, জার্মানি এবং স্পেনে আসতেন। সে সময় তাদের সঙ্গে হাই হিলের ফ্যাশন চলে আসে ইউরোপে। ১৬শ শতকের দিকে ইউরোপে হাই হিল পরার চল শুরু হয় পুরুষদের। তবে পারস্যের রাজা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিরা যেহেতু এই হিল পরতেন তাই ইউরোপেও সেই প্রথাই চালু হয়। সমাজের ধনী শাসক গোষ্ঠীর পুরুষেরা নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতে হাই হিল পরা শুরু করেন।

ইতিহাসের বিভিন্ন সম্রাটের পোর্টেটে খেয়াল করলেই হাই হিল পরার প্রমাণ পাওয়া যায়। ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই ছিলেন হাই হিল পরার ব্যাপারে সবচেয়ে বিখ্যাত। এই রাজা সবসময় চার ইঞ্চি উচ্চতার হিল পরতেন। হিল পরার প্রচলন আসায় তার কিছুটা সুবিধাই হয়েছিল বলা যায়। কারণ তার উচ্চতা ছিল মাত্র পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি। তাই নিজের উচ্চতা বাড়াতেই কখনো চার ইঞ্চি আবার কখনো তারও বেশি উচ্চতার হাই হিল পরতেন।

হাই হিলের ফ্যাশন ইউরোপ থেকে ছড়িয়ে পরে ইংল্যান্ডের রাজন্যবর্গের মাঝেও। রাজা চতুর্দশ লিউ ১৬৬১ সালে রাজ্য অভিষেকের দিন লাল রঙের একটি হিল পরেছিলেন। লাল রঙের হিল ছিল তার খুব পছন্দের। এমনকি ১৬৭০ সালে তিনি নিয়ম করে দেন, শুধু তার রাজসভার সদস্যরাই লাল রঙের হিল পরতে পারবেন। দেশের অন্য সব পুরুষের জন্য লাল হিল নিষিদ্ধ।

তবে ধীরে ধীরে পুরুষদের হাই হিল পরা কমে যেতে থাকে। হাই হিল পরার কারণে নানান শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল পুরুষদের মধ্যে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমস্যা হচ্ছে পিঠে ব্যথা, মেরুদণ্ডের সমস্যা। নখের সমস্যাসহ নানান শারীরিক অসুবিধা। আসলে হাই হিল পরলে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতেও সমস্যা হত তাদের।

অন্যদিকে সমাজের নিম্ন মর্যাদার মানুষের হাই হিল পরে বসে থাকার অবকাশ ছিল না। সমাজে যারা উচ্চ মর্যাদার মানুষ তাদের কোনো রকমের পরিশ্রম করতে হতো না। তারাই শুধু হাই হিল পরার মতো বিলাসিতা করতে পারতেন। তাই নিচু শ্রেণির পুরুষ এবং যাদের খুব হাঁটাহাঁটি করতে হত তারা হাই হিল পরা ছেড়ে দিতে থাকেন।

পুরুষের হিল নারীদের কাছে এসেছিল মূলত প্রতিশোধের অস্ত্র হয়ে। ১৬৩০ সালের দিকে নারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং পুরুষের কর্তৃত্ব খর্ব করার জন্য তাদের মতো পোশাক আশাক পরা শুরু করে। ধূমপান, পুরুষালী টুপি পরা, চুল ছোট করা, পোশাকে অ্যাপিউলেট লাগানো শুরু করে এবং তার পাশাপাশি হাই হিলও পরা শুরু করেন। নিম্ন মর্যাদার মানুষের মাঝেও ফ্যাশন হিসেবে হাই হিল পরা শুরু হয়।

এদিকে উঁচু শ্রেণি আর নিচু শ্রেণির মানুষের জুতা একই রকম হয়ে গেলে উঁচু শ্রেণীর মানুষের মর্যাদা খর্ব হবে! নারী এবং নিম্ন শ্রেণির মানুষের চাইতে নিজেদেরকে আলাদা করে তুলতে পুরুষেরা নিজেদের হিলের উচ্চতা বাড়িয়ে তোলে। আবার পুরুষ এবং নারীর হাই হিলের মধ্যেও পার্থক্য তৈরি করে দেওয়া হয়। নারীরা পরত চিকন হিল এবং পুরুষেরা পরতো মোটা হিল।

পুরুষরা মনে করছিলেন নারীরা হাই হিল পরে এর পুরুষালী আবেদন কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে হাই হিল পরার ওপর থেকে পুরুষেরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ১৭৪০ সালের দিকে পুরুষের হাই হিল পরার চল একেবারেই উঠে যায়। এমনকি ফরাসি বিপ্লবের পরে হাই হিলের চল নারীদের মাঝে থেকেও উঠে যায়।

হাই হিল নারীদের ফ্যাশনে ফিরে আসে ১৯ শতকের মাঝামাঝি। সেসময় ফটোগ্রাফির একটা ঝোঁক দেখা যায় সবার মাঝে। তখন আবার হাই হিল নারীদের মাঝে জনপ্রিয় হতে শুরু করে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের হিল পরার অভ্যাস চালু আছে নারীদের মাঝে। একসময় সামাজিক মর্যাদা বোঝাতে যে হাই হিল পরতেন পুরুষেরা, এখন সেই সামাজিক মর্যাদা যাতে ক্ষুণ্ণ না হয় এজন্য হাই হিল পরেন না কোনো পুরুষ।

সূত্র: অ্যানসাইন্ট অরিজিন

কেএসকে/এএসএম

আরও পড়ুন