সমবায় কী এবং কেন করবেন?
সমবায় একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। যা একদল সদস্য তাদের সম্মিলিত কল্যাণের জন্য পরিচালনা করেন। ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য একদল মানুষের যৌথ উদ্যোগকে সমবায় বলা হয়। এলাকার সার্বিক উন্নয়নে সমবায় কর্মসূচির ভালো দিক জনগণের সামনে তুলে ধরা ও সমবায় কর্মসূচিতে জনগণের আগ্রহ সৃষ্টি করা ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব।
সমবায় কী?
আন্তর্জাতিক সমবায় মৈত্রী তাদের সমবায় পরিচিতি নির্দেশিকায় সমবায়ের সংজ্ঞা দিয়েছে এভাবে, সমবায় হলো সমমনা মানুষের স্বেচ্ছাসেবামূলক একটি স্বশাসিত সংগঠন, যা নিজেদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে। এ লক্ষ্যে অংশীদারত্ব ভিত্তিতে গণতান্ত্রিকভাবে নিয়ন্ত্রিত ব্যবসা পরিচালনা করে।
সমবায় অর্থনীতি কী?
একটি সমবায় প্রতিষ্ঠান এমনও হতে পারে, যেখানে ব্যবসাটি এর সুবিধাভোগী সবাই সমভাবে নিয়ন্ত্রণ করে অথবা তারাই এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। সমবায় ভিত্তিক ব্যবসা নিয়ে শিক্ষার যে ধারায় পড়ানো হয় তা ‘সমবায় অর্থনীতি’ নামে পরিচিত।
ইতিহাস
সমবায় সমিতির ইতিহাস প্রায় মানবসভ্যতার ইতিহাসের মতো প্রাচীন। বর্তমানের সমবায় সমিতির সাংগঠনিক রূপ প্রতিষ্ঠিত হয় ইউরোপের শিল্পবিপ্লবের কিছু আগেই। ১৭৬১ সালে সর্বপ্রথম ফেনউইক উইভারস সোসাইটি গঠন করা হয় স্থানীয় তাঁতীদের ঋণসুবিধা, শিক্ষা ও অভিবাসন সুবিধা দেওয়ার জন্য। পরে শুধু ইংল্যান্ডেই এক হাজারের বেশি সমবায় প্রতিষ্ঠান কর্মকাণ্ড শুরু করে।
লক্ষ্য-উদ্দেশ্য
ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও শক্তিকে সংঘবদ্ধ করে যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আর্থসামাজিক মুক্তি এনে দেওয়া সমবায়ের লক্ষ্য।
সমবায় কেন করবেন?
সমবায় শুধু একটি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নয়। সমবায়ের মূলমন্ত্র হচ্ছে ‘সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’।সমবায় সংগঠন বা সমিতি সমবায় সংগঠন ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও শক্তিকে এক করার মাধ্যমে দেশের দরিদ্র মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি করে।
সমবায় নীতিমালা
বাংলাদেশের কোনো সমবায় সংগঠন সাধারণত ৭টি নীতিমালা অনুসরণ করে:
১. স্বতঃস্ফূর্ত এবং অবাধ সদস্যপদ
২. সদস্যের গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ
৩. সদস্যের আর্থিক অংশগ্রহণ
৪. স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা
৫. শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং তথ্য
৬. আন্তঃসমবায় সহযোগিতা
৭. সামাজিক অঙ্গীকার।
আইনগত ভিত্তি
২০০১ সালে প্রথমবারের মতো বাংলায় সমবায় আইন জারি করা হয়। ২০০২ সালে ২০০১ সালের সমবায় আইনের কতিপয় ধারা সংশোধন করে সংশোধিত আইন ২০০২) জারি করা হয়। সমবায় সমিতি আইন ২০০১ ও সংশোধিত আইন ২০০২ এর সমর্থনে ২০০৪ সালে সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ জারি করা হয়। দারিদ্রমুক্ত আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ায় সমবায় উদ্যোগকে উৎসাহ প্রদান এবং গণমুখী সমবায় আন্দোলনের দিকনির্দেশনার প্রয়োজনে ১৯৮৯ সালে প্রণীত সমবায় নীতিমালাকে যুগোপযোগী করে ‘জাতীয় সমবায় নীতিমালা-২০১২’ প্রণয়ন করা হয়। ২০১৩ সালে সমবায় আইনকে অধিকতর সংশোধন করে সংশোধিত সমবায় আইন ২০১৩ জারি করা হয়।
কার্যাবলি
১. সমবায় নীতিতে উদ্বুদ্ধকরণ ও নিবন্ধন প্রদান।
২. সমবায় নিরীক্ষা, পরিদর্শন ও তদারকির মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
৩. সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ বা উচ্চতর প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টির মাধমে পেশাগত মান বৃদ্ধি করা।
৪. সমবায় সদস্যদের প্রায়োগিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং মূলধন সৃষ্টি ও আত্ম-কর্মসস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস করা।
৫. সমবায় নেটওয়ার্কিং জোরদার করার লক্ষ্যে সমবায় মূল্যবোধের প্রচার, প্রকাশনা, সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করা।
৬. পুঁজি গঠন ও বিনিয়োগের মাধ্যমে মূলধন সৃষ্টি এবং সমবায় ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।
৭. সমবায় ভিত্তিক প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়ন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন।
৮. সমবায় পণ্য ব্র্যান্ডিং ও বাজার সংযোগ প্রতিষ্ঠা করা।
৯. অভিলক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় নীতিমালা, উন্নয়ন কর্মসূচি এবং উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব
জনগণ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সমবায় সমিতি গঠন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ সেবা পাওয়ার অধিকার রাখে। গ্রাম উন্নয়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ সমবায় সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করে থাকে।
তথ্যসূত্র
১. সমবায় অধিদপ্তর
২. উইকিপিডিয়া
৩. জেলা সমবায় কার্যালয়, কুমিল্লা।
এসইউ/এএসএম