৮৫ বছর বয়সেও সফল উদ্যোক্তা তিনি
বয়স একটি সংখ্যা মাত্র, তার আবারো প্রমাণ দিলেন ৮৫ বছরের গুজরাতের বাসিন্দা রাধাকৃষ্ণ চৌধুরী। যদিও এই নামে তিনি তাকে খুব কম মানুষই চিনবেন। তিনি বেশি পরিচিত ‘নানাজি’ নামে।
দীর্ঘ জীবন চাকরি করছেন। অবসরের পর বাড়িতেই বসে থাকতেন। জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন ব্যস্ততার মধ্যে। তাই অবসর সময় যেন কাটছিলই না। বই পড়ে আর স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করেই দিন কাটছিল। একদিন তার মেয়ে তাকে জানান যে, তার প্রচুর চুল পড়ছে। কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। মেয়ের এমন অকালে চুল পড়া দেখে নানাজিও চিনতিৎ হয়ে পড়েন।
মেয়ের এই পরিণতি দেখে স্বভাবতই চিন্তায় পড়েন ওই বৃদ্ধ। চুল পড়ার সমস্যা নিরসনে রীতিমতো পড়াশোনা শুরু করেন। প্রায় এক বছর ধরে এ বিষয়ে পড়াশোনা করার পর আয়ুর্বেদিক তেলের একটি মিশ্রণ বানান। তাতেই বাজিমাত হয়। এরপরই স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, ‘হেয়ার কেয়ার কোম্পানি’ তৈরি করবেন।
তেলের গুণমান নিয়ে নিঃসংশয় হতে প্রথমে সে তেল নিজের মাথার চুলে দিয়েছিলেন। ইতিবাচক ফল পাওয়ায় তারপর তা তিনি দিয়েছিলেন নিজের আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধবকে। সবাই তার তেলের প্রশংসা করায় তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তার পরিশ্রম বৃথা যায়নি।
তার তৈরি তেলের কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তার পরিচিতরাই। যার ফলে তার হাতে তৈরি তেলের চাহিদা বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত করোনা অতিমারির সময়ে তার তেলের কথা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসা এতটাই সফল হয় যে ৮৫ বছর বয়সে এসে জীবনের প্রথম গাড়িটি কেনেন। নিজের ইনস্টাগ্রামে সেই কথা এবং ছবিও শেয়ার করেন।
বরাবরই আয়ুর্বেদে আগ্রহ ছিল রাধাকৃষ্ণ চৌধুরীর। তা নিয়ে নিরন্তর চর্চাও করেছেন। শেষ পর্যন্ত মেয়ের মাথার চুল পড়তে দেখে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের ছয় মাস আগে নিজস্ব তেল প্রোডাক্ট ‘আভিমি হার্বাল’ বাজারে এনেছিলেন। যার কথা এখন অনেকের মুখে-মুখে। এমনকি যার থেকে বাদ নেই অভিনেতা শাহিদ কাপুরের স্ত্রী মীরা কাপুরও। তিনিও ব্যবহার করেছেন নানাজির তৈরি বিশেষ এই হার্বাল তেল।
পথচলা শুরুর মাত্র ছ’মাসের মধ্যেই সাফল্য পায় নানাজির সংস্থা ‘আভিমি হার্বাল’। সাফল্যের চূড়ায় উঠতে তাঁর সময় লেগেছে ২৫ বছর। তবে এই সাফল্যের নেপথ্যে নানাজির স্ত্রীর অবদানও রয়েছে। তেল তৈরির পুরোটা সময় এবং তার পরবর্তীকালেও নানাজি-র ছায়াসঙ্গী হিসেবে ছিলেন তার স্ত্রী শকুন্তলা চৌধুরী। বর্তমানে যিনি নানাজি-র বিজনেস পার্টনার।
তবে অনেকের ভালবাসা, সমর্থন পেলেও একদম নিষ্কণ্টক থাকেনি নানাজির যাত্রা। কারণ অনেক পক্ষ থেকে তার তেল নিয়ে বিরুপ মন্তব্যও এসেছে। বিভিন্ন সমালোচনা, তির্যক মন্তব্য কিছুই তাকে দমাতে পারেনি। বরং তিনি তার দৃষ্টিভঙ্গিতে অটল, স্থির।
তিনি বিশ্বাস করেন স্বপ্নের কোনো বয়স হয় না! তবে স্বপ্ন দেখে তাকে বাস্তব করে তুলতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। সমালোচনা, বিরুদ্ধতা জীবনে তো থাকবেই। কিন্তু তা স্বপ্নের থেকে কখনোই বড় নয়। রাধাকৃষ্ণ চৌধুরী এখন হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর অনুপ্রেরণার নাম।
সূত্র: ইকোনোমিক টাইমস
কেএসকে/এএসএম