যে কারণে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করা হয়
রাস্তায় চলতে পথে প্রায়ই চোখে পড়ে ছোট শিশুদের ভারী কাজ করার দৃশ্য। হোটেল থেকে শুরু করে লেগুনা হেলপার, ইট কিংবা কনস্ট্রাকশনের কাজেও যুক্ত আছে শিশুরা। শিশুদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো নতুন নয়। তবে আইন করেই বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে শিশুশ্রম। তারপরও কমছে না শিশুশ্রম।
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এ শিশুদের ন্যূনতম বয়স ১৪ আর কিশোরদের বয়স ১৪-১৮ নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে ১৪ বছরের কম বয়সীদের কাজে নিয়োগ করা যাবে না। শিশুর অভিভাবক কাজ করানোর জন্য কারো সঙ্গে কোনো প্রকার চুক্তি করতে পারবেন না। তারপরও রোধ করা যাচ্ছে না শিশুশ্রম। তবে শুধু আমাদের দেশেই নয়, শিশুশ্রমের চিত্র দেখা যায় বিশ্ব অনেক দেশেই।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্ব জুড়ে ৮৪ মিলিয়ন শিশুশ্রমের সঙ্গে যুক্ত। শিশুশ্রমের দিক দিয়ে আফ্রিকা ও এশিয়া বিশ্বের শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। আফ্রিকা এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলোতে প্রতি ১০ শিশুর মধ্যে ৯ জনই শিশুশ্রমের জড়িত।
আমেরিকায় (১১ মিলিয়ন), ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়া (৬ মিলিয়ন) এবং আরব রাজ্যগুলোতে (১ মিলিয়ন) শিশু শিশুশ্রমের সঙ্গে জড়িত। স্বল্প-আয়ের দেশগুলোতে শিশুশ্রমিকদের পরিমাণ সর্বাধিক হলেও, মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
ইউনিসেফ এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী শিশু শ্রমিকে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ মিলিয়নে। বিগত ৪ বছরের তুলনায় ৮.৪ মিলিয়ন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে। এই উদ্বেগজনিত হারে শিশুশ্রম বৃদ্ধির জন্য মূলত দরিদ্রতাকেই দায়ী মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে অশিক্ষা, অনিশ্চয়তা আর অসচেতনতাও এর জন্য দায়ী অনেকাংশে। পেটের ক্ষুধা নিবারণে এমনকি পরিবারের দেখাশোনার দায়িত্ব ঘাড়ে নিয়ে অনেক শিশুরাই ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিযুক্ত হয়। খাবার জোগার করতে গিয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে না অনেক শিশুই।
শিশুশ্রম বন্ধ করতে আজ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী দিবস। ১৪ বছরের কম বয়সীদের দিয়ে কাজ না করিয়ে তাদের শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যেই পালিত হচ্ছে দিনটি। ২০০২ সাল থেকে প্রতি বছর ১২ জুন দিনটি পালিত হল শিশুশ্রম বিরোধী দিবস হিসেবে।
প্রতি বছর এই দিন নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য বিষয় গ্রহণ করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সামাজিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করি, শিশুশ্রম বন্ধ করি’। শিশুশ্রম বন্ধ করার প্রসঙ্গে সচেতনতা গড়তেই এই দিনটি পালন করা হয়।
এমন অনেক শিশু আছে যারা খুব অল্প বয়সে শৈশব হারিয়ে ফেলে। চায়ের দোকানে কিংবা রাস্তার ধারের ছোট খাটো দোকানে কাজ করতে দেখা যায়। অর্থ রোজগার করতে গিয়ে পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এই সব শিশুকে রক্ষা করাই হলো আজকের দিনের উদ্দেশ্য।
প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন বিষয়বস্তু স্থির করা হয়। ২০১৯ সালের প্রতিপাদ্য ছিল শিশুদের খেতের কাজে নয়, বরং স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কাজ করা উচিত। ২০২০ সালের প্রতিপাদ্য ছিল, কোভিড ১৯ শিশুশ্রম থেকে শিশুদের রক্ষা করুন। এখন এর প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। ২০২১ সালের প্রতিপাদ্য ছিল, করোনাভাইরাস পর্বে শিশুদের সুরক্ষা।
আমাদের দেশে এই ধরনের শ্রম আইনের প্রয়োগ কার্যত অসম্ভব কারণ শতকরা ৯৩ ভাগ শিশুশ্রমিক অনানুষ্ঠানিক খাতে যেমন ছোট কারখানা এবং কর্মশালা, রাস্তায়, গৃহ ভিত্তিক ব্যবসা এবং গার্হস্থ্য কর্মসংস্থানে নিযুক্ত।
বাংলাদেশে শিশুশ্রমের ব্যাপকতা সত্ত্বেও শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে আইন বৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়াও দেশটি জাতিসংঘের কনভেনশন অন দ্য রাইটস অব চাইল্ড দ্বারা অনুমোদন পান। জাতিসংঘ শিশু জরুরি তহবিল (ইউনিসেফ) শিশুশ্রমকে এমন কোনো কার্যকলাপ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে, যা শিশুর স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে প্রভাবিত করে।
এছাড়া আরও বলা হয় শিশুশ্রম এমন একটি কাজ, যা শৈশব কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত করে, শোষণ এবং অপব্যবহার করে। শিশুরা তাদের শারীরিক, মানসিক, বা উন্নয়নমূলক স্বাস্থ্য বা নিরাপত্তার ক্ষতি করতে পারে। ইউনিসেফ ছাড়াও দেশীয় বিভিন্ন সংস্থা সমাজের এই সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাদের লক্ষ্য হাতুরি নয়, শিশুদের হাতে থাকুক কলম, খাতা।
কেএসকে/জেআইএম