পরিবেশ দূষণ রোধে করণীয়
আজ ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ১৯৭২ সালে জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) উদ্যোগে প্রতি বছর সারাবিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে ৫জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘একটাই পৃথিবী: প্রকৃতির ঐক্যতানে টেকসই জীবন’।
পরিবেশ দিবসের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষকে সচেতন করা। পরিবেশ দূষণ রোধ করে আরও বনায়ন বৃদ্ধি করা। পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় বৃক্ষের ভূমিকা অনেক। তবে বনায়ন কমে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ।
প্রকৃতি আমাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হয়তো অনেকেই করোনা অতিমারীর পর কিছুটা বুঝতে পেরেছেন। পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে বহু বছর ধরে। তবে এখন অনেকেই এড়িয়ে চলেন সেই সচেতন বার্তা।
অজীব উপাদান, যেমন- মাটি, পানি, আলো, বাতাস, জলাশয়, হাওর, নদ-নদী, সাগর-মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত, হিমবাহ, মরুভূমি, বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল, মেঘমালা, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদি এবং সজীব উপাদান, যেমন- উদ্ভিদ, প্রাণি, অণুজীব ইত্যাদির সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। বিভিন্নভাবে দূষণ হচ্ছে পরিবেশ। চলুন জেনে নেওয়া যাক পরিবেশ দূষণ রোধে সবার করণীয়-
> বাতাসে অক্সিজেন ব্যতীত অন্যান্য গ্যাস ও ধূলিকণার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বায়ু দূষিত হয়। পৃথিবীর সব প্রাণি শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে। অপর দিকে বৃক্ষরাজি কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ ও অক্সিজেন ত্যাগ করে। পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নির্বিচারে সবুজ বৃক্ষ নিধন করার কারণে বৃক্ষ হ্রাস পাচ্ছে। এজন্য বৃক্ষরোপণ করতে হবে। ইট-পাথরের শহরে গাছ লাগানোর জায়গার অভাব। বারান্দায় কিংবা ছাদে গাছ লাগাতে পারেন।
> পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো সাধারণত জলাশয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে শহর, হাট-বাজার, বাসাবাড়ির ময়লা-আর্বজনা, বিভিন্ন প্রাণীর মলমূত্র, খাল, বিল ও নদীতে পড়ে পানি দূষিত হচ্ছে। প্রতিটি শিল্পকারখানার সঙ্গে শোধনাগার বা অ্যাফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) স্থাপন বাধ্যতামূলক। এছাড়াও বাড়ির ময়লা আবর্জনা পানিতে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। এতে পানি ও বায়ু দুটোই দূষণ রোধ হবে।
> বাস-ট্রাক, রেলগাড়ি, লঞ্চ-স্টিমারের হাইড্রোলিক হর্নের শব্দ, বিমানের বিকট শব্দ, শিল্পকারখানার শব্দ, ইট-পাথর ভাঙার শব্দ, মাইকের শব্দ, পটকার শব্দ, হাটবাজার, যানজট, জনসভায় মানুষের কোলাহলের শব্দ, ঢাক-ঢোলের শব্দ, ঝড়-তুফান, সাইক্লোন, বজ্রপাত ও সমুদ্রের গর্জন শব্দ দূষণের উন্নতম কারণ। শব্দ দূষণের কারণে শ্রবণশক্তি হ্রাস, মাথাব্যথা, হৃদরোগ, স্নায়ুবিক বৈকল্য, শিশুর মানসিক বিপর্যয়, অনিদ্রা, বিরক্তিভাব, মনোযোগ নষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। তাই শব্দ দূষণ হচ্ছে এমন কাজ পরিহার করুন।
> শুষ্ক ঋতুতে অনেকেই আবর্জনা সংগ্রহ করে তা পুড়িয়ে নষ্ট করেন। বিশেষ করে বনের শুকনো পাতা এভাবে নষ্ট ল্করা হয়। এ থেকে তৈরি ধোঁয়া পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এছাড়া ধূমপান বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ।
> এয়ার কন্ডিশনার পরিবর্তে ফ্যান ব্যবহার করুন। এসি ব্যবহারে প্রচুর শক্তি লাগে এবং প্রচুর তাপ নির্গত হয় যা পরিবেশের জন্য খারাপ। পাখার তুলনায় এসি কাজ করতে অনেক শক্তি বেশি নেয়।
> চিমনির জন্য ফিল্টার ব্যবহার করুন। ঘরবাড়ি এবং কারখানার ফায়ারপ্লেস থেকে যে গ্যাস নির্গত হয় তা বায়ু দূষণের জন্য দায়ী। ফিল্টারের ব্যবহার যেমন খরচ কমাবে তেমনি পরিবেশও দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
> পটকা বা বাজি ফাটানো এড়িয়ে চলুন। যে কোনো উৎসবে পটকা বা বাজির ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এটি যেমন শব্দ দূষণ করছে। তেমনি বায়ু দূষণের জন্যও দায়ী। এছাড়াও এ থেকে দুর্ঘটনাও ঘটছে অনেক।
> অন্যদিকে কীটনাশক ব্যবহার পরিহার করতে হবে। জমিতে পোকা দমনের জন্য যে কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে তা মাটি, বায়ু ও পানি তিন ক্ষেত্রকেই দূষিত করছে। যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
> কমাতে হবে প্লাস্টিকের ব্যবহার। এটি পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। মাটি, পানি এবং বায়ু সব ক্ষেত্রেই দূষণ করছে প্লাস্টিক বর্জ্য।
কেএসকে/জেআইএম