তামাকমুক্ত পৃথিবী ও তরুণ সমাজ
ডা.রিফাত আল মাজিদ
মাদকদ্রব্যের যতগুলো ধরন ও উপাদান আছে তার মধ্যে তামাক কিছুটা ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রম শুধু এর কেমিক্যাল গঠনের কারণে নয়। এটি অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও সংস্কৃতির একটা অংশ।
অনেক আগে থেকেই এ দেশের মানুষ তামাকের বিভিন্ন রকমের ব্যবহারে অভ্যস্ত। গ্রামে, শহরে এর প্রভাব, জনপ্রিয়তা, প্রচার কোনো দিক থেকেই কম নেই। এটি এমন একটি মাদক যা প্রকাশ্যে সবাই গ্রহণ করেন কিন্তু লজ্জিত হন না বরং আরও গর্ব করে তামাক জাতীয় মাদকদ্রব্য সেবন করেন। এটিকে অনেকটা বাহাদুরির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন অনেকে।
অনেকে আবার আগবাড়িয়ে একে মাদকদ্রব্য মানতেই নারাজ! এ নিয়ে বিজ্ঞান মহল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানেও চলে বিস্তর বিতর্ক এবং যুক্তি পাল্টা যুক্তির ঢেউ। তামাক যে এক প্রকার মাদক বা তার চেয়েও খারাপ কিছু এতে সন্দেহ নেই। তবে আমাদের সমাজে বহুকাল থেকেই এটি সহজলভ্য এবং সুপরিচিত।
তরুণরা একটু বড় হলেই তামাকের তৈরি সিগারেট বা বিড়ি মুখে নিতে উদগ্রীব থাকে। নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন ও নতুন কিছুর স্বাদ নিয়ে তারা বুঝাতে চায় যে আজ বড় হয়েছে। পরিবারে বাবা চাচা মামাদের দেখে আসছে কীভাবে তারা এসব সেবন করছেন!
এরকম সামাজিক সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠা তরুণ সমাজকে এসব ক্ষতিকর দ্রব্য থেকে দূরে রাখা কিংবা তাদেরকে এসবের ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যত ক্ষতির ভয় দেখিয়ে বিরত রাখা অসম্ভব। তবে যারা সচেতন অভিভাবক কিংবা যাদের পরিবারের পরিবেশ সুন্দর, পরিবারে নীতি নৈতিকতার চর্চা আছে তাদের জন্য ব্যপারটা খুব সহজ।
এসব পরিবারের ছেলেমেয়েরা এ ধরনের বাজে বস্তুর নেশায় খুব একটা আসক্ত হন না। আবার হলেও তাদেরকে সেখান থেকে সঠিক পথে আনা সম্ভব হয়। কিন্তু অভিভাবক সচেতন না হলে কিংবা তিনি যদি নিজেই ধূমপায়ী বা মাদকসেবী হন তাহলে তার নিজের সন্তানকে এসব থেকে দূরে রাখার নৈতিক শক্তি ও মনোবল হারাবেন।
তাই এসব মাদক বা তামাকজাত পণ্য যেন তরুণদের গ্রাস করতে না পারে সেজন্য সবাইকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে তামাক পণ্যের কর বৃদ্ধি, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যুগোপযোগী করন, পাঠ্যসূচিতে তামাক ও মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সমূহের বিস্তারিত বিরবণসহ নিবন্ধন যুক্ত করা এবং তামাক কোম্পানিগুলোর প্রক্রিয়াজাত, বাজারজাতসহ সব ক্ষেত্রে আইনের কঠোর প্রয়োগ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
তাই রাষ্ট্রীয়,সামাজিক,পারিবারিক ও ব্যক্তিগতভাবে সবার উচিত আমাদের তরুণদের স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে তামাকের ভয়াবহ ভবিষ্যত এই মহামারি থেকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করে যাওয়া এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা।
লেখক: সদস্য, ডরপ ইয়ুথ ফোরাম, কো-অর্ডিনেটর, র্যামফিট কনসাল্টেশন এন্ড সাইকিয়াট্রি সেন্টার, মগবাজার, ঢাকা জনস্বাস্থ্য বিভাগ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ।
কেএসকে/জিকেএস