ফুল ডেলিভারি করে কোটিপতি দুই বোন
যশোদা ও রেহা কারতুরি দুই বোন। একজন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন অন্যজন তখনো কলেজ ছাত্রী। ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন তারা। প্রতিদিন সকালে মাকে পূজা করতে দেখেন। তবে মায়ের একটি অনুযোগ শোনেন প্রতিদিনই ‘আজও পূজার জন্য ভালো ফুল পাওয়া গেল না’।
এই কথাটিই যেন জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল দুই বোনের। সময়টা ২০১৯ সাল। মাকে পূজার জন্য প্রতিদিন সকালে তাজা ফুলের যোগান দিতে খুলে ফেলেন ফুলের ব্যবসা। শুরুতে ঘরের এবং প্রতিবেশীর চাহিদা মেটাতেই এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
তারা প্রতিবেশীদের মাসিক চুক্তির ভিত্তিতে প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি ফুল পৌঁছে দেওয়া শুরু করলেন। সহজ কথায়, প্রতিদিন সকালে যেমন পত্রিকা কিংবা দুধওয়ালা এসে দুধ দিয়ে যায় তেমনি যার যেদিন ফুল দরকার সেদিন তাকে সেই ফুল বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা। সেই ব্যবসাতেই তাদের বার্ষিক আয়ের অঙ্ক ছুঁয়েছে ৮ কোটি টাকা!
বেঙ্গালুরুর দুই বোন যশোদা ও রেহা কারতুরি ২০১৯ সালে যৌথভাবে একটি ফুল বিক্রয়কারী সংস্থা খোলার সিদ্ধান্ত নেন, সংস্থার নাম রাখেন ‘হূভু’। কন্নড় ভাষায় হূভু শব্দের অর্থ ফুল। ২৭ বছর বয়সী যশোদা জানিয়েছেন, ব্যবসা শুরুর কথা মাথায় আসার পর প্রথমেই ফুলের বাজার নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। তাতেই বুঝতে পারেন, ফুলের চাহিদা আর জোগানের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক।
১০ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে শুরু হয় তাদের যাত্রা। ঠিক যেভাবে দুধ কিংবা খবরের কাগজ রোজ সকালে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যায়, ঠিক সেভাবেই মাসিক চুক্তির ভিত্তিতে ক্রেতার পছন্দসই ফুল রোজ তারা পৌঁছে দেন তাদের বাড়িতে।
তবে ফুলের ব্যবসা যশোদা ও রেহার কাছে নতুন নয়। ফুলের ব্যবসা রয়েছে তাদের রক্তেই। যশোদা ও রেহার বাবা রাম কারুতুরির ভারত, কেনিয়া ও ইথিওপিয়াতে গোলাপের ক্ষেত রয়েছে। নব্বইয়ের দশকে কেনিয়ার এই গোলাপ খেতটিই ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গোলাপ খেত। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করা যশোদা জানান আগের কয়েক দশকের তুলনায় অনেকটাই বদলে গিয়েছে ফুলের ব্যবসা।
আগে ফুলের তোড়ার প্রচলন বেশি থাকলেও বর্তমানে ঘরে ফুলের ব্যবহার বেড়েছে। রোজ পূজা দেওয়ার জন্য এখন বাজার থেকেই ফুল কেনেন মানুষ। পাশাপাশি, ঘর ও গাড়ি সাজাতেও বাড়ছে ফুলের ব্যবহার। তাই এই নতুন সংস্থার মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি ফুল পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছেন তারা।
তবে তার মতে, ভারতীয় ফুলের বাজারের একটি বড় অংশই এখনো অসংগঠিত। তারা এই অসংগঠিত ক্ষেত্রটিকে সংগঠিত করতে চান বলেও জানান। এরই মধ্যে কর্নাটক, তামিলনাড়ু ও কেরলার ৫০ জন ফুলচাষীর সঙ্গে চুক্তি করেছেন তারা।
বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় দেড় লাখ অর্ডার পাচ্ছেন তারা। বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, চেন্নাই, মহীশূর, পুনে, মুম্বাই, গুরুগ্রাম এবং নয়ডা থেকেই বেশি আসে অর্ডার।
তাদের রয়েছে ফেসবুক পেজ থেকে শুরু করে নিজস্ব ওয়েবসাইড। যেখানে গিয়ে যে কেউ দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ফুল অর্ডার করতে পারবেন। ২৪ ঘণ্টাই তাদের এই সার্ভিস চালু থাকে। এছাড়াও ফুল দীর্ঘ সময় তাজা রাখার বিভিন্ন টিপস দিয়ে থাকেন ক্রেতাদের। সম্পূর্ণ বিষমুক্ত এবং প্রাকৃতিক উপায়ে তারা ফুল চাষ করে থাকেন।
দুই বোনের এই কাজে তারা যেমন সফল হয়েছেন। তেমনি কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েকশ মানুষের। তাদের সংস্থায় কাজ করছেন নারী-পুরুষ উভয়ই। এমনকি এতদিন ওইসব এলাকার ফুল চাষীদের ফুল নিয়ে যে দুশ্চিন্তা ছিল, তাও দূর হয়েছে।
সূত্র: দ্য বেটার ইন্ডিয়া
কেএসকে/এমএস