পুরুষ থেকে সুন্দরী নারী হয়েছেন তারা
একটি শিশু জন্ম নেয় নারী কিংবা পুরুষ হয়ে। সময়ের সঙ্গে সে যত বড় হতে থাকে ততই তার মস্তিষ্ক গঠন হতে থাকে নারী এবং পুরুষের ভিন্নতা নিয়ে। তবে অনেকেই আছেন জন্মসূত্রে পাওয়া সেই সত্ত্বাকে ঠিক নিজের করে উঠতে পারেন না। পরিবর্তিত হতে চান ভিন্ন লিঙ্গে।
সমাজে এমন মানুষ অহরহই দেখা যায়, যাদের শারীরিক গঠন পুরোপুরি পুরুষের মতো হলেও আচরণে, অঙ্গভঙ্গিতে নারীদের মতো থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আবার অনেক নারীকে দেখা যায় পোশাক-আশাক বা ব্যবহার অনেকটা পুরুষের মতো। এরা আসলে কেউই তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া নন।
সত্যি কথা বলতে ব্যাপারটি খুবই স্বাভাবিক। যারা আধুনিক চিন্তাভাবনা করেন তাদের মতে, শুধু যৌনাঙ্গ দেখেই নারী কিংবা পুরুষ নির্ধারণ করা উচিত নয়। একজন জন্মগতভাবে পুরুষ যদি নিজেকে নারী ভাবেন তাহলে তার লিঙ্গ পরিচয় হওয়া উচিত নারী, ঠিক তেমন কোনো নারী যদি নিজেকে পুরুষ ভাবতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তবে তার পরিচয় হওয়া উচিত পুরুষ হিসেবেই। অর্থাৎ মানুষের লিঙ্গভিত্তিক পরিচয় মানুষ নিজেই ঠিক করবে, সমাজ বা অন্য কেউ নয়।
লিঙ্গ রূপান্তরের এই অদম্য ইচ্ছা থেকেই অনেকেই ‘সেক্স রিএসাইনমেন্ট সার্জারি’ বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে লিঙ্গ পরিবর্তন করে থাকেন। পশ্চিমা বিশ্বে আজকাল অহরহই জেন্ডার ট্রান্সফরমেশন হচ্ছে। সারাবিশ্বে ট্রান্সজেন্ডার নারী, পুরুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। নারী থেকে পুরুষ হয়েছেন, কেউবা হয়েছেন পুরুষ থেকে নারী।
এরজন্য সামাজিক এবং পারিবারিক নানান বাধা থাকলেও তা উপেক্ষা করেছেন নিজের মনোবল দিয়ে। এমনই কয়েকজন নারীর কথা বলছি। যারা সুন্দরী নারী হয়েই নতুন জীবন উপভোগ করছেন। পুরুষের সত্ত্বা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তবে জানেন কি ইতিহাসের প্রথম লিঙ্গ পরিবর্তনকারীর নাম লিলি এলবে। তিনি একজন ড্যানিশ চিত্রকর সর্বপ্রথম এই সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
লিলির পুরুষজীবনের নাম ছিল এইনার ওয়েগনার। তিনি ছিলেন তখনকার কোপেনহেগেনের বিখ্যাত ল্যান্ডস্কেপ আর্টিস্ট। তার স্ত্রী গেরদা ওয়েগনার ছিলেন একজন পোর্ট্রেট আর্টিস্ট। ভালোই চলছিল এই চিত্রকর দম্পতির দাম্পত্যজীবন। ১৯২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে একদিন গেরদা একজন নারীর বিশেষ অঙ্গভঙ্গির পোর্ট্রেট আঁকছিলেন।
একদিন মডেলের আসতে দেরি হওয়ায় গেরদা তার স্বামী এইনারকেই মডেলের জামাকাপড় গায়ে চাপিয়ে ওই বিশেষ অঙ্গভঙ্গিতে বসিয়ে দেন। এই ব্যাপারটিই পুরুষ এইনারের ভেতরে সুপ্ত থাকা আজন্ম নারীসত্ত্বাকে জাগিয়ে দেয়। এইনারের মধ্যে একজন নারী হিসেবে পরিচয় পাবার অদম্য ইচ্ছা জাগ্রত হয়। সে নিজের নাম দেয় লিলি এলবে। এইনারের এই হঠাৎ পরিবর্তন দিশেহারা করে দেয় গেরদাকে। কিন্তু একসময় গেরদাও এইনারের মধ্যে থাকা লিলিকে মেনে নেয়।
আন্দ্রেজা পেজিক
বিখ্যাত একজন মডেল তিনি। একই বছর নারী এবং পুরুষ উভয় ফ্যাশন শোতে অংশ নিয়েছেন। ২৩ বছর বয়সী আন্দ্রেজা সফল একজন মডেল এখন। তবে নিজের পুরুষ থেকে নারী হওয়ার পর নিজের নাম রেখেছেন আন্দ্রেজা। পুরুষ থেকে নারী হওয়ার পর বিখ্যাত ম্যাগাজিন ভোগের প্রচ্ছদেও ঠাঁই পেয়েছেন তিনি।
ল্যাভার্ন কক্স
ল্যাভার্ন কক্স একজন আমেরিকান অভিনেত্রী, নৃত্যশিল্পী এবং রিয়েলিটি টেলিভিশন তারকা। তিনি নেটফ্লিক্স কমেডি-ড্রামা সিরিজ অরেঞ্জ ইজ দ্য নিউ ব্ল্যাক-এ সোফিয়া বারসেটের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সর্বাধিক পরিচিত। এরজন্য তিনি এমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। তিনিই প্রথম ট্রান্সজেন্ডার যিনি এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
কিম পেট্রাস
মাত্র ১২ বছর বয়সে তার লিঙ্গ পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন এই জার্মান শিল্পী। এজন্য পেট্রাস টক অব দ্য টাউন হয়ে ওঠে সেসময়। জার্মান এই পপ শিল্পী তার নিজের গান রচনা করতে পছন্দ করেন। তিনি জার্মান হেয়ার সেলুনগুলোর জন্য কিছু মডেলিংও করেছেন।
অমিয় স্কট
অমিয় স্কট একজন মডেল, অভিনেত্রী। পরিবর্তনের পর রিয়েলিটি শো দ্য রিয়েল হাউসওয়াইভস অব আটলান্টায় তার সদ্য অর্জিত সৌন্দর্য দিয়ে সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি একজন সফল মডেল ও অভিনেত্রী। তার ভক্ত ও অনুসারীর সংখ্যাও কম নয়। নিজের সৌন্দর্য দিয়ে সব সময় চর্চায় থাকেন এই ট্রান্সজেন্ডার নারী।
জেনা তালাকোভা
জেনা তালাকোভা কানাডিয়ান মডেল হিসেবে পরিচিত। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার আয়োজকদের বিরুদ্ধে মামলা করে। যদিও জেনা প্রতিযোগিতা জিততে পারেনি। কারণ ট্রান্সজেন্ডার নারীদের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অনুমতি নেই।
কারমেন ক্যারেরা
ক্রিস্টোফার রোমান স্টেজ নারী হওয়ার পর নিজের নাম রাখেন কারমেন ক্যারেরা। তিনি আমেরিকান টেলিভিশন তারকা এবং মডেল। তিনি লোগো রিয়েলিটি টেলিভিশন সিরিজ রুপলের ড্র্যাগ রেসের তৃতীয় সিজনে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। ক্যারেরা একজন ট্রান্সজেন্ডার অধিকার কর্মীও। তার সৌন্দর্য হরণ করেছে বহু পুরুষের হৃদয়।
সূত্র: ব্রাইড সাইড
কেএসকে/এএসএম