জন্ম নিবন্ধনে ভুল থাকলে যেভাবে সংশোধন করবেন
জন্ম নিবন্ধন করা সবার জন্যই জরুরি। জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যেই শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। যদি না করা হয় তাহলে পরবর্তীতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। বিশেষ করে নতুন বছরে সন্তানের স্কুলে ভর্তি করতে জন্ম নিবন্ধন অবশ্যই এখনই রেডি করে রাখতে হবে।
অনেকেই সশরীরে হাজির হয়ে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন। আবার অনেকেই ঘরে বসে অনলাইনে ফরম পূরণ করেন। তবে জন্ম সনদ করার সময় অসতর্ক কিংবা অসচেতন থাকায় ভুল হয়ে যায়।
দেখা যায়, কারও নামের বানানে ভুল আছে কিংবা বাবা-মায়ের বানান ঠিক নেই। আবার জন্ম তারিখ, মাস বা সাল ভুল আছে ইত্যাদি হতে পারে। পরবর্তীতে এই ভুল সংশোধনের জন্য আবার অনেক ঝামেলা পোহাতে।
কোথায় গিয়ে ও কীভাবে জন্ম নিবন্ধনের ভুল সংশোধন করবেন, এ বিষয়ে দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েন অনেকেই। তবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। অনলাইনের মাধ্যমে আপনি জন্ম নিবন্ধনের ভুল সংশোধন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ১০-১৫ কার্যদিনের মধ্যেই আপনি সঠিক সনদটি হাতে পাবেন।
এক্ষেত্রে যেসব কাগজপত্র সঙ্গে রাখবেন
>> আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন (যা অনলাইনে নিবন্ধিত থাকতে হবে)
>> পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধন (যা অনলাইনে নিবন্ধিত থাকতে হবে)
>> শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ/টিকা সনদ অথবা তথ্য প্রমাণের জন্য অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো সনদ।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন যাচাই
>> আপনার মাতা/পিতার নাম সংশোধন করতে হলে তাদের জন্ম নিবন্ধনের নম্বর দিয়ে আপনার জন্ম নিবন্ধনটির তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে।
>> দ্বিতীয় পর্যায়ে, যদি আপনার জন্ম নিবন্ধন করার সময় মাতা/পিতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর প্রথমে দিয়ে থাকেন, তাহলে তাদের নাম সংশোধন করার পরে, আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ পুনর্মুদ্রিত হলে সেখানে মাতা/পিতার সংশোধিত নাম দেখা যাবে।
>> ৩য় পর্যায়ে যদি, জন্ম নিবন্ধন করার সময় আপনার মাতা/পিতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর না দেন, তাহলে আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বরের সঙ্গে মাতা/পিতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ম্যাপ তৈরি করতে হবে।
মাতা/পিতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ম্যাপ করার পরে আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ পুনর্মুদ্রণ করলে, সেখানে আপনি মাতা/পিতার সংশোধিত নাম দেখতে পাবেন।
>> ৪র্থ পর্যায়ে, যদি আপনার মাতা/পিতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর না থাকে। এ ছাড়াও আপনার জন্ম তারিখ যদি ০১/০১/২০০১ এর আগে হয়, তাহলে আপনার জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সংশোধনের আবেদনে মাতা/পিতার নামও সংশোধন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনার মাতা/পিতা যদি মৃত হয় তাহলে তাদের মৃত্যুর কোনো প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে না।
>> ৫ম পর্যায়ে, মাতা/পিতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর না থাকলে কিংবা মাতা/পিতা মৃত হলে ও আপনার জন্ম তারিখ যদি ০১/০১/২০০১ এর পরে হয়, তাহলে জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করলে মাতা/পিতার নাম সংশোধন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রেও মৃত পিতা/মাতার মৃত্যুর প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করবেন যেভাবে
ধাপ-১: জন্ম তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন অনলাইন আবেদন করার জন্য এই লিংকে প্রবেশ করুন http://bdris.gov.bd/br/correction
এরপর পোর্টালের জন্ম তথ্য সংশোধন ফরমে প্রথমে যার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে চান, তার জন্ম নিবন্ধন নম্বর প্রবেশ করুন।
এখানে প্রথমে আপনার অনলাইন নিবন্ধন নম্বরের ১৭ ডিজিট প্রবেশ করুন। এরপর জন্ম তারিখ ড্রপ ডাউন মেনু থেকে নির্বাচন করে অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করুন। তথ্য সঠিক থাকলে নিচে নিবন্ধিত ব্যক্তির তথ্য প্রদর্শন করবে।
প্রর্দশিত তথ্যের পাশে থাকা নির্বাচন করুন একশন বাটনে ক্লিক করুন। আপনি কি নিশ্চিত?' মেসেজ প্রদর্শন করবে। সেখানে কনফার্ম বাটনে ক্লিক করুন। তারপর আপনাকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য অবশ্যই নিবন্ধিত ব্যক্তির জন্ম সনদটি অনলাইনে থাকতে হবে। জন্ম সনদ নম্বর অবশ্যই ১৭ সংখ্যার হতে হবে। অন্যথায় জন্ম সনদ অনলাইন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ধাপ-২: এই ধাপে আপনার যে ইউনিয়ন বা পৌরসভার অধীনে জন্ম নিবন্ধনটি করা হয়েছে সে ঠিকানা নির্বাচন করুন। এখানে প্রথমে দেশ ড্রপ ডাউন মেনু থেকে যে দেশ থেকে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে, সে দেশ নির্বাচন করুন।
বাংলাদেশ নির্বাচন করলে বিভাগ অপশন থেকে বিভাগ ও ছবিতে প্রর্দশিত আবশ্যিক তথ্যগুলো নির্বাচন করুন। সব তথ্য নির্বাচন হয়ে গেলে পরর্বতী বাটনে ক্লিক করুন। এই ধাপে আপনার জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের মূল কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
ধাপ-৩: আপনার জন্ম নিবন্ধনে তথ্য সংশোধনের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এখানে আপনি তথ্য সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য এন্ট্রি করবেন।
প্রথমে বিষয়ের ড্রপ ডাউন মেনু থেকে সংশোধনের বিষয় নির্বাচন করুন। আপনি চাইলে যেসব বিষয় সংশোধনের আবেদন করতে পারবেন তাহল-
ক. নাম (বাংলায় ও ইংরেজিতে), খ. পিতা ও মাতার নাম (বাংলায় ও ইংরেজিতে), গ. জন্ম তারিখ, ঘ. জাতীয়তা, ঙ. লিঙ্গ, ও চ. জাতীয় পরিচয়পত্র।
আপনার যে তথ্যটি সংশোধন করার প্রয়োজন তা নির্বাচন করার পর সংশোধিত তথ্য বক্সটি সক্রিয় হবে। এখানে আপনার সঠিক তথ্যটি প্রদান করে সংশোধনের কারণ হিসেবে ভুল লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, তা নির্বাচন করুন।
একাধিক তথ্য সংশোধনের প্রয়োজন হলে আরও তথ্য সংযোজন করুন বাটনে ক্লিক করে সংশোধনের প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিন।
ধাপ-৫: ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি এন্ট্রি করার পর আপনার জন্ম স্থানের ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানার তথ্য দিন।
দেশ, বিভাগ, ডাকঘর (বাংলায় ও ইংরেজিতে), গ্রাম / পাড়া / মহল্লা (বাংলায় ও ইংরেজিতে), বাসা ও সড়ক ( নাম, নম্বর ) সঠিকভাবে এন্ট্রি করুন।
নিবন্ধিত ব্যক্তির তথ্যাদি সংশোধনের জন্য যিনি আবেদন করছে তার তথ্য প্রদান করুন। আবেদনাধীন ব্যক্তির সহিত সম্পর্ক নির্বাচন করুন ও আবেদনকারীর নাম, আবেদনকারীর ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেইল প্রদান করুন।
সংশোধনের আবেদনকারী পিতা-মাতা ব্যতিত অন্য কেউ হলে তার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর প্রদান করুন। অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য আবেদনের স্বপক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড করার জন্য সবুজ চিহ্নিত সংযোজন বাটনে ক্লিক করুন;
আপনার প্রত্যাশিত ফাইলটি নির্বাচন করে অপেন বাটনে ক্লিক করুন। আপনার নির্বাচিত ফাইলটি প্রিভিউ দেখাবে ও এর পাশে থাকা ফাইল টাইপ ড্রপডাউন মেনু থেকে আপনার সংযুক্তির ধরন নির্বাচন করে আপলোড করার জন্য স্টার্ট বাটনে ক্লিক করুন।
আবেদন ফি
জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য আপনাকে প্রয়োজনীয় ফি চালান অথবা অনলাইন ফি পরিশোধ পদ্ধতি ব্যবহার করে পরিশোধ করতে হবে।
আপনি যদি অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করতে চান তাহলে ফি আদায় বাটনে ক্লিক করুন।
চালানের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করে থাকলে- চালান নং, চালান জমা দেয়ার তারিখ, চালান পরিশোধের মাধ্যম, ব্যাংক, জেলা ও ব্যাংক ব্রাঞ্চ সঠিকভাবে এন্ট্রি করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।
সাকসেস বা সফল ম্যাসেজ আসলে বুঝতে হবে, আবেদনপত্রটি সফল ভাবে সাবমিট করা হয়েছে।আবেদন দাখিল হওয়ার পর প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করে, আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নির্ধারিত তারিখের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধকের কাছে (ইউনিয়ন বা পৌরসভায়) দাখিল করুন।
এরপর নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কার্যালয় আপনার আবেদনটি যাচাই বাছাই করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন। নিবন্ধন সঠিক হওয়ার পর আপনার অনলাইন জন্ম নিবন্ধনটি হাতে পেয়ে যাবেন।
জেএমএস/এমএস