গাছে গাছে মনোমুগ্ধকর চিত্রশিল্প
ইমন ইসলাম
প্রকৃতি ও জীবনের এক অপার মেলবন্ধনের নাম জাবি ক্যাম্পাস। জাহাঙ্গীরনগর নামটি শুনলেই মনের মধ্যে সৃষ্টি হয় এক অদ্ভুত আলোড়ন। ঘন গাছপালার আচ্ছাদন ক্যাম্পাসের পরিবেশকে করেছে আরো সৌন্দর্য মন্ডিত। যে সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে প্রকৃতি প্রেমীদের।
ক্যাম্পাসজুড়ে সবুজের বুক চিরে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে উঁচু উঁচু গাছ। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী পরিশ্রান্ত এসব গাছ হারিয়েছে তাদের চিরচেনা সেই রূপ ও সত্ত্বা। অর্ধমৃত গাছগুলো নতুন রূপে সাজবে বলে যেন প্রহর গুনছিল। প্রকৃতি ও জীবনের মেলবন্ধন ঘটাতে তাই রং তুলি হাতে বেরিয়ে পড়েছেন এক চিত্র শিল্পী। যার দুচোখজুড়ে হাজারো কল্পনা আর ইচ্ছাশক্তি।
লোকজ নকশা আর বাংলা সাহিত্যের আদলে রাঙাতে শুরু করেছেন ক্যাম্পাসের প্রাণহীন নিস্তদ্ধ গাছগুলো। প্রকৃতি,মানব ও প্রাণীকূলের নিরন্তন সম্পর্ককে রং তুলির আঁচড়ে গাছ গাছালির কোটরে উপস্থাপন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগ কুমার মিশ্র।
ক্যাম্পাসের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনের গাছে জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাহারি চিত্রকর্ম। রং তুলির আঁচড়ে রবি ঠাকুরের চিত্রকর্মটি যেন জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম একজন কর্ণধার। বাংলা সাহিত্যে, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির মধ্যে তার যে গভীর সম্পর্ক সেই সম্পর্ককে নব রূপে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চিত্রকর্মের মধ্যে দিয়ে।
এ ছাড়াও পুরাতন প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন লেকের ধারের দুইটি গাছে জায়গা করে নিয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও উড়ন্ত অপ্সরা নামের মনোমুগ্ধকর দুইটি চিত্রকর্ম। দেখে মনে হবে জীবন্ত এক বাঘ তার শিকারের জন্য অপেক্ষমান। বাঙালি জাতির কাছে বাঘের রয়েছে আলাদা গুরুত্ব। আপাত দৃষ্টিতে হিংস্র হলেও তা বিশ্ব দরবারে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে। অসাধারণ এক ক্যানভাসে সেই চিত্রটিই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
লাল সবুজে আবৃত উড়ন্ত অপ্সরা চোখে পড়ার মতো। মুক্ত মনে আপন কল্পনায় উড়তে চাওয়া এক তরুণীর চিত্রকর্ম ও রয়েছে সেখানে। ক্যাম্পাসের মধ্যে চলার পথে চোখে পড়বে দৃশ্যমান এসব চিত্রকর্ম। পথচারী শিক্ষার্থীদের দূর থেকেই কাছে টানে চিত্রকর্মগুলো। ক্যাম্পাসে চিত্রকর্ম অঙ্কন নতুন নয়। সাংস্কৃতিক রাজধানীখ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রন্ধে রন্ধে সংস্কৃতি ও শৈল্পিক ভাবনা জড়িয়ে আছে। যে শৈল্পিক ভাবনা তাদেরকে প্রকৃতির বুকে নন্দনতত্ত্ব রচনা করতে অনুপ্রাণিত করে।
ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ৪৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সোহাগ কুমার মিশ্র বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসের সবুজ গাছগুলোতে কিছু করার আগ্রহ ছিল। আর সেই আগ্রহ থেকেই এই চিত্রকর্মগুলো অঙ্কন করেছি। তা ছাড়া গাছের কোটরে আঁকা চিত্রকর্মগুলো গাছ ও ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করেন তিনি।
চিত্রকর্ম গুলো ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যে এনেছে নতুন মাত্রা সেই সঙ্গে বৃদ্ধি করেছে নান্দনিকতার নতুন সুর। যে নান্দনিকতা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্যাম্পাস প্রেমীরা। কেউবা আবার রোমাঞ্চকর সেই মুহূর্তটুকু ক্যামেরাবন্দি করছেন।
লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ ,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
কেএসকে/এএসএম