১৫ বছরেই যোগব্যায়ামের প্রশিক্ষক, ৩০০০ আসনে দক্ষ
যে বয়সে অন্যান্য শিশুরা বন্ধুদের খেলাধুলায় মগ্ন থাকে, সে বয়সেই কি না ইয়োগা অলরাউন্ডার হয়ে ওঠে শিশুটি। মাত্র ৫ বছর বয়স থেকেই যোগব্যায়ামের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে যশবন্ত রেড্ডি।
যোগব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী, এ কথা সবারই জানা। শরীর ফিট রাখতে অনেকেই নিয়মিত যোগব্যায়াম অনুশীলন করেন। শুধু শারীরিক সুস্থতা নয় বরং মানসিক সুস্থতাও বজায় রাখে যোগব্যায়াম।
তবে ক’জনই বা যোগব্যায়াম অনুশীলন করেন? জানলে অবাক হবেন, যেখানে বড়রা যোগব্যায়াম এড়িয়ে চলেন, সেখানে কি না এক কিশোর যোগব্যায়ামে পারদর্শিতা অর্জন করেছে। ভারতের বেঙ্গালুরুর এই কিশোরের গল্প আপনাকেও অনুপ্রাণিত করবে যোগব্যায়াম চর্চায়।
বর্তমানে যশবন্তের বয়স ১৫ বছর। বেঙ্গালুরুর ট্রিমিস ওয়ার্ল্ড স্কুলে ছাত্র সে। তবে ছোটবেলা থেকে সে অনেক জেদি ও দুষ্টু প্রকৃতির শিশু ছিলো। স্কুলজীবন শুরু হতেই পড়ালেখায় মনোযোগ কম আর দুষ্টুমি, আলাপচারিতা বেশি করতো সে। এজন্য শিক্ষকরা তার অভিভাবকের কাছে অনেকবার অভিযোগও করেন।
তখনই এক শিক্ষক তার বাবা-মাকে পরামর্শ দেন, ছেলেকে গান শেখানোর জন্য। যাতে সন্তানের মনোযোগ উন্নত হয়। তার বাবা-মা গানের স্কুলে ঠিকই ভর্তি করান। তবে ৬ মাসের বেশি আর সে স্কুলের গণ্ডি পার হয়নি যশবন্ত। সে গানের ক্লাসও পছন্দ করতো না।
তখন ছেলেকে শান্ত করার উপায় খুঁজতে লাগলেন মা। অবশেষে তার ছেলেকে ইয়োগা সেন্টারে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন তার মা। সেখান থেকেই ছোট্ট যশবন্ত বদলে যেতে শুরু করে। তখন সবে তার বয়স ৫ বছর। যোগব্যায়ামের ক্লাস করতে খুবই আগ্রহী হয়ে ওঠে সে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ছেলের আচরণে পরিবর্তন টের পেলেন বাবা-মা।
এরপর কয়েক মাস তারপর এক বছরের মাথায় দেখা গেলো যশবন্ত এখন শান্ত প্রকৃতির ও পড়ালেখায় অনেক মনোযোগী হয়ে উঠেছে। যোগব্যায়াম করতে সে এতোটাই পছন্দ করতো যে বড়দের সঙ্গে এর অনুশীন করা শুরু করে। কারণ ততদিনে যোগব্যায়াম সম্পর্কে সে আরও কৌতূহলী হয়ে ওঠে।
তবে তার যোগগুরু বলেছিলেন, এতো অল্প বয়সে সব ধরনের আসন করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তা মানেনি যশবন্ত। এরপর বেশ কয়েকটি আসন তার গুরু তাকে শিখিয়ে দেন। প্রথমদিকে না পারলেও ধীরে ধীরে সেগুলোর অনুশীলন বাড়াতে থাকে যশবন্ত।
যে আসনগুলো করা তার মতো অল্প বয়সীদের জন্য কঠিনতম, সেগুলোই দক্ষতার সঙ্গে করে দেখায় যশবন্ত। এরপর থেকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শুরু করে সে। যা তার আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
যশবন্ত জানায়, ‘তার প্রিয় যোগব্যায়াম হলো গন্ডাবেরুণ্ডাসন। ছোটবেলায় আমি যেটা শিখেছি তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন হলো গান্ডবেরুণ্ডাসন। এটি এমনই এক ভঙ্গি যা প্রতিযোগিতায় অনেক পয়েন্ট এনে দিতে পারে। প্রতিটি ইয়োগা শিক্ষার্থীর কাছেই মঞ্চে এই আসনটি করে দেখানো স্বপ্নের মতো। আমি এটি শিখতে অনেক সংগ্রাম করেছি।’
‘এই আসনটি কারার জন্য হাত অনেক শক্তিশালী হতে হয়। এজন্য প্রায় আট মাস হাতের ব্যায়ামের মাধ্যম বাহু মজবুত করতে হয়েছে। পুরো শরীরকে কেবল দু’হাতে ভারসাম্য বজায় রেখে আসনটি করতে হয়’, বলে জানায় যশবন্ত।
১৫ বছর বয়সী যশবন্ত প্রতিদিন সকালে ৪৫ মিনিটের জন্য যোগব্যায়াম করে। সে এরইমধ্যে ৩০০০টিরও বেশি আসনে দক্ষতা অর্জন করেছে। এ বছর ‘রাষ্ট্রীয় কর্ণাটক রত্ন পুরস্কার ২০২১’ অর্জন করেছে যশবন্ত। একইসঙ্গে যশবন্তের থলিতে আছে ৭৬টি মেডেল, ১০৮টি সার্টিফিকেট ও ৫৮টি ট্রফি।
এসবই সে অর্জন করেছে যোগব্যায়ামে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। স্কুলের সবচেয়ে দুষ্টু ছেলেটিই আজ সবচেয়ে শান্তশিষ্ট হয়েছে শুধু যোগব্যায়ামের কল্যাণেই। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই যোগব্যামের প্রশিক্ষক বনে গেছে সে। তার মতে, ‘যোগব্যায়াম একটি সুস্থ জীবনধারা ও শারীরিক ক্রিয়াকলাপ, যা অর্ধেক সমস্যার নিরাময় করে।’
সূত্র: বুক অব এচিভার
জেএমএস/এমএস