একসঙ্গে ৯ সন্তান জন্ম দিয়ে বিশ্বরেকর্ড!
সন্তান জন্ম দেওয়া যে কোনো নারীর জন্যই সবচেয়ে আনন্দের অনুভূতি। এক মায়ের পেট থেকে জমজ ২-৩টি সন্তান জন্মানোর ঘটনা বেশ স্বাভাবিক। এর অধিক জমজ সন্তানও অনেক নারীই একসঙ্গে জন্ম দিয়েছেন। তবে কখনও কি শুনেছেন, কোনো নারী একসঙ্গে ৯ সন্তানকে জন্ম দিয়েছেন?
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যিই যে, মালির ২৫ বছর বয়সী এক নারী একসঙ্গে ৯ সন্তানের জন্ম দিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে নাম লিখিয়েছেন। তিনিই প্রথম নারী, যিনি একসঙ্গে সর্বোচ্চ সংখ্যক সন্তান জন্ম দিয়েছেন এবং প্রতিটি সন্তানই সুস্থভাবে বেঁচে আছে।
হালিমা সিসো নামের ওই নারীর গর্ভকালীন সময়ে পরীক্ষা করে ৭টি শিশুর উপস্থিতি টের পান চিকিৎসকরা। তবে ডেলিভারির সময় দেখা যায়, আরও ২ সন্তানের জন্ম নিয়েছে। হালিমা একসঙ্গে ৫ মেয়ে ও ৪ ছেলে সন্তানের জন্ম দেন।
চলতি বছরের মে মাসে মালির এই নারী ৯ সন্তানের জন্ম দিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ডে নাম তুলেছেন। হালিমার স্বামী জানান, ‘একসঙ্গে ৫ মেয়ে ও ৪ ছেলের বাবা হয়ে আমি খুবই খুশি ও গর্বিত।’
এর আগে ২০০৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একসঙ্গে ৮ সন্তানের জন্ম দিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখান এক নারী। নাদ্যা সুলেমান নামক ওই নারীর সব সন্তানেরাই সুস্থ আছে। বর্তমানে তাদের বয় ১২ বছর। জানা যায়, তিনি ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের মাধ্যমে গর্ভধারণ করেছিলেন।
তারও আগে ১৯৭১ সালে অস্ট্রেলিয়ান এক নারী এবং ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ান এক নারীও ৯ সন্তানের জন্ম দেন। তবে সেই সন্তানেরা জন্মের পরপরই মারা যায়।
মালির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফান্তা সিবিও হালিমার ৯ সন্তান জন্মানোর ঘটনায় শুভ কামনা জানিয়েছেন। তার সুস্থতার কারণেই মালি সরকার উন্নত চিকিৎসার জন্য মরোক্কাতে পাঠানো হয়।
সেখানকার মেডিকেল ডিরেক্টর প্রফেসর ইউসুফ আলাউই এএফপি নিউজ এজেন্সিকে বলেন, ‘এই ঘটনাটি সত্যিই বিরল। সুস্থভাবে একসঙ্গে ৯ সন্তানের জন্ম দেওয়ার ঘটনা সত্যিই ব্যতিক্রমী। তিনি ২৫ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভবতী ছিলেন। পরবর্তীতে আরও ৫ সপ্তাহ বাড়িয়ে তার ডেলিভারি করা হয়।’
হালিমার ডেলিভারির সময় ১০ চিকিৎসক এবং ২৫ প্যারামেডিক্সের একটি দল উপস্থিত ছিলেন। প্রতিটি শিশুর ওজন ৫০০ গ্রাম এবং ১ কেজির মধ্যে ছিল। জন্মের পর তাদেরকে ২-৩ মাসের জন্য ইনকিউবেটরে রাখা হয়। হালিমার ৯ সন্তান জন্মদানের বিষয়টি মালিতে রীতিমতো সাড়া ফেলে দেয়।
একাধিক গর্ভাবস্থার কারণ কী?
একসঙ্গে একাধিক সন্তান গর্ভধারণকে মাল্টিপল প্রেগন্যান্সি বলা হয়। এটি স্বাভাবিক ঘটনা নয়। সাধারণত যমজ, দুই এর অধিক হতে পারে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ২৫০ গর্ভধারণের মধ্যে ১টির যমজ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তবে ৩টি হওয়ার হার প্রতি ১০ হাজার গর্ভধারণের ১টিতে, ৪ জন হওয়ার হার আরও কম, প্রতি ৭ লাখে ১ জনের। তবে বর্তমানে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান নেওয়ার হার বেড়ে যাওয়ার কারণে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়াও পরিবারে একাধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার ইতিহাস থাকলে জমজ সন্তান হতে পারে। আবার একজন যমজ সন্তানের গর্ভেও জমজ সন্তান জন্ম নিতে পারে।
কীভাবে জমজ সন্তান হয়? ২-৩টি ডিম্বাণু একই মাসিকচক্রের সময়ে নিষিক্ত হলে দু-তিনটি বাচ্চা একই সঙ্গে হতে পারে। যেমন হালিমার ক্ষেত্রে ৯টি সন্তান হয়েছে।
এই বহু সন্তান হতে পারে বহু ডিম্বাণু থেকে। আবার হতে পারে একটি ভ্রূণই বিভক্ত হওয়ার মাধ্যমে। তবে বহু ডিম্বাণু থেকে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এই বহু ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার ঘটনা খুব বেশি নয়।
তবে ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যত্বের চিকিৎসার সময়ে ডিম্বাণু তৈরির জন্য ওষুধ প্রয়োগের ফলে বহু ডিম্বাণু তৈরি হয়ে থাকে এবং তাদেরই একাধিক সন্তান গর্ভধারণের ঝুঁকি বেশি।
আবার টেস্টটিউব চিকিৎসার সময়ে যতগুলো ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের জন্য দেওয়া হয়, ততগুলো সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একসঙ্গে বহু ডিম্বাণু থেকে যমজ শিশু জন্ম হলে তাকে ডাইজাইগোটিক যমজ বলে।
একসঙ্গে জন্ম নিলেও তারা ভিন্ন ভিন্ন ভ্রূণ থেকে এসেছে। তবে একটি ভ্রূণ বিভক্ত হয়ে যমজ হলে তাকে মনোজাইগোটিক যমজ বলে। যেহেতু তারা একটি ভ্রূণ থেকেই হয়েছে, তাই জিনগত গঠন, চেহারা ও স্বভাব একই রকম হয়ে থাকে।
সূত্র: বিবিসি
জেএমএস/এমএস