পাকস্থলী ছাড়াই বেঁচে আছেন ম্যারাথন দৌড়বিদ
পেটের দায়ের মানুষ দিন-রাত পরিশ্রম করে থাকেন। কারণ মানুষ খাবার গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে শক্তি সঞ্চয় করে থাকে। আর খাবার পরিপাক করে পাকস্থলী তারপর সে খাবার হজমের পর শরীর এর পুষ্টিগুণ থেকে শক্তি পায়। তবে কখনও কি ভেবে দেখেছেন, আপনি বেঁচে আছেন অথচ পেটের ভেতরটা শূন্য!
হয়তো কেউই এমন এক বিস্ময়কর পরিস্থিতি কল্পনাতেও আনার সাহস পান না। তবে অবাক করা বিষয় হলেও সত্যিই যে, ৩৬ বছর বয়সী জুয়ান ডুয়ালের পেটের ভেতরটি ঠিক এমনই। অর্থাৎ তার পেটের মধ্যে নেই পাকস্থলী, কোলন বা মলাশয়, রেকটাম ও গলব্লাডার বা পিত্তথলী। প্রায় ১৮ বছর ধরে তিনি এভাবেই বেঁচে আছেন। জানলে অবাক হবেন, এই মানুষটিই একজন জনপ্রিয় ম্যারাথন দৌড়বিদ।
জুয়ানের জীবন কাহিনী জানলে হয়তো আপনার চোখ বেয়ে পানি ঝরে পড়বে! জুয়ানের জন্ম হয় স্পেনে। সেখানেই পরিবারসহ বাস করতেন তিনি। মাত্র ১৩ বছর বয়সে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা কারণ হিসেবে সে জানতে পারে জুয়ান ‘ফ্যামিলিয়াল মাল্টিপল পলিপোসিস’ নামক এক বিরল ব্যাধিতে ভুগছেন। এটি এমন একটি জিনগত রোগ, যা পাকস্থলীর ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছিল ৯৯.৮ শতাংশ।
জিনগত এই সমস্যার কারণে জুয়ানের দাদি এবং তার এক চাচা কোলন অ্যাডেনোকার্সিনোমাতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। একই সমস্যার কারণে জুয়ানের বাবার অন্ত্রের অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। এরপর ১৯ বছর বয়সে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর, জুয়ানের কোলন এবং মলদ্বার অপসারণের জন্য কঠিন অস্ত্রোপচার করা হয়। সেই তখন থেকে শুরু...
২৮ বছর বয়সে জুয়ানের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। তার এই বিরল রোগটি তার পাকস্থলীকে প্রভাবিত করছিল। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে সেটিও অপসারণ করতে হয় জুয়ানকে। এই অস্ত্রোপচারের পর জুয়ানের শরীরের রক্তক্ষরণ অনেক বেড়ে যায়। বেঁচে থাকা অসম্ভব হলেও ভাগ্যের জোড়ে সার্ভাইভ করে টিকে থাকেন জুয়ান। যদিও তার কষ্ট সেখানেই শেষ হয়নি।
শরীর থেকে পাকস্থলী অপসারণের পর ১০৬ কেজি থেকে তার ওজন কমে আসে মাত্র ৫৭ কেজিতে। অস্ত্রোপচের কয়েক মাস পরও জুয়ান উঠে দাঁড়াতে এবং কয়েক ধাপ এগিয়ে যেতেও হাঁপিয়ে উঠতেন। এর কিছুদিন পরে আবারও জুয়ানকে যেতে হলো ছুরি-কাচির নিচে।
বিপজ্জনক এক ব্যাকটেরিয়া বাসা বেঁধেছিল তার পিত্তথলিতে। ওই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। এ বিষয়ে জুয়ান জানান, ‘আমি শরীরের শক্তি ৫০ শতাংশ হারিয়ে ফেলি এবং আমি সম্পূর্ণ শক্তিহীন ছিলাম।’
কয়েক ধাপে গুরুতর সব অস্ত্রোপচার থেকে সেরে ওঠার পর যেন নতুন জীবন পান জুয়ান। তখন স্পেন মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে জুয়ান তার বাবা-মায়ের কয়েকজন বন্ধুর আমন্ত্রণ গ্রহণ করে জাপান ভ্রমণ করেন। সেখানে গিয়ে নতুনভবে সবকিছু শুরু করেন জুয়ান।
তিনি জাপানি ভাষায় কথা বলতে পারতেন না, তাই তিনি বেশিরভাগ সময় কুকুরকে নিয়ে হাঁটতেই পছন্দ করতেন। একদিন কুকুরের দড়ি ধরে হাঁটতে হাঁটতে কুকুর দৌড়তে লাগল। এমন সময় ধরে জুয়ানও দৌঁড়াতে শুরু করল। কিছু দূর যাওয়ার পর জুয়ান টের পেলেন, তিনি দৌঁড়াতে পারছেন।
এর কয়েক মাস পরে জুয়ান তিনি নিজেকে ইংল্যান্ডের একটি ছোট শহরে কাজ শুরু করেন। সেখানে বিনোদনের ক্ষেত্র খুব কম ছিল। তবে শহরটি পাহাড়বেষ্টিত হওয়ায় শারীরিকভাবে আরও সক্ষম হয়ে ওঠেন জুয়ান। তিনি সেখানে কয়েকজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। তাদের উৎসাহ ও নিজ আত্মবিশ্বাসে উঠে দাঁড়ান জুয়ান। এরপর শুরু করেন শারীরিক অনুশীলন।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, শেষ অপারেশনের ৮ মাস পরই টানা ২ ঘণ্টা বার্সেলোনা হাফ ম্যারাথন শেষ করেন জুয়ান। এরপর তিনি পর্বত দৌড় এবং অতি-ম্যারাথনের প্রশিক্ষণ শুরু করেন। তিনি জানান, ‘খেলাধুলা তাকে সুস্থ রেখেছে এবং বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়।’
পাকস্থলী না থাকায় জুয়ানের ক্ষুধার অনুভূতি জাগে না। যা তার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ যেকোনো সময় শরীরের বিভিন্ন পুষ্টি কমে গেলে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন জুয়ান। এজন্য পুষ্টিবিদের পরামর্শে জুয়ান তার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার রুটিন করে রেখেছেন।
তিনি ম্যারাথনের সময় নির্দিষ্ট বিরতিতে খাওয়া বন্ধ করে দেন, যাতে তা শেষ করার জন্য পর্যাপ্ত শক্তি থাকে। যদিও তার শরীর কীভাবে খাদ্য প্রক্রিয়া করে তা স্পষ্ট নয়। তবে স্প্যানিশ সংবাদপত্র মার্কা অনুসারে, তিনি ডোনাট থেকে শুরু করে হ্যাম, পাস্তাসহ সবকিছুই মোটামুটি খেয়ে থাকেন। তবে তরলজাতীয় খাবার বেশি খান তিনি।
সূত্র: অডিটি সেন্টাল/রানার্স ওয়াল্ড
জেএমএস/এমএস