ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

ডাক্তার না হয়েও অসংখ্য শিশুর প্রাণ বাঁচিয়েছেন যিনি!

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২:১৬ পিএম, ০৫ জুলাই ২০২১

সালমান আহসান

ইনকিউবেটর ডাক্তার হিসেবে পরিচিত মার্টিন কোনি বিংশ শতাব্দীতে একজন সমালোচিত ব্যক্তি হিসেবে নিন্দা কুড়ালেও, বর্তমানে তিনি একজন হিরো হিসেবে পরিচিত। যিনি হাজারো অপরিণত নবজাতক বাচ্চার জীবন রক্ষা করেছেন।

১৯৩০ এর দশকে নিউইয়র্কের কোনি দ্বীপে যদি কেউ বেড়াতে যেতেন তাহলে হয়তো সামান্য কিছু টাকা খরচ করেই সেখানকার বিনোদন পার্কে কিংবা মেলায় আকর্ষণীয় সব রাইডে চড়তে পারতেন। তবে বোর্ডওয়াক ধরে দ্বীপের ভেতরে আরেকটু হেঁটে কিছু বাড়তি টাকা খরচ করলেই মার্টিন কোনির সাড়া জাগানো ইনকিউবেটরে রাখা বাচ্চাদের প্রদর্শনীর দেখা মিলতো।

No description available.

ওই দ্বীপে যেসব পর্যটকরা বেড়াতে যেতেন, তারা কোনির বিশেষ প্রদর্শনীতে ফী দিয়ে ঢুকে দেখতে পেতেন সারি সারি অপরিণত নবজাতক ইনকিউবেটরের গ্লাসের ভিতরে বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে।

যাদের একেকজনের দেহের ওজন আধা কেজিরও কম! সেই সময় মার্টিন কোনির এই উদ্যোগ জনমনে বেশ আগ্রহ ও কৌতূহল সৃষ্টি করেছিল। পাশাপাশি অপরিণত নবজাতকদের যত্নে সবার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতেও সাহায্য করেছে।

No description available.

যেভাবে হয়ে উঠলেন ‘ইনকিউবেটর ডাক্তার'

পোল্যান্ডের ক্রোটোজিনে ১৮৬৯ সালে জন্মেছিলেন মার্টিন কোনি। ১৮৮৭ সালে আমেরিকাতে পাড়ি দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত তার জীবনের কাহিনী নিয়ে তেমন তথ্য পাওয়া যায় না। প্রথমদিকে স্থানীয় মেলা কিংবা বিনোদন পার্কে তিনি নানারকম প্রদর্শনী ও খেলা দেখিয়ে দর্শক জমিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

কোনি দাবি করেন, লিপজিগ ও বার্লিনের মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করার পর তিনি ইউরোপিয়ান মেডিকেল লাইসেন্সের অধিকারী হন। তবে ইতিহাসবিদেরা বলেন অন্য কথা, কোনি না-কি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেয়ে ডাক্তার হননি। তাদের দাবির পক্ষে অবশ্য যুক্তি আছে। কারণ কোনি যখন ইউরোপ থেকে আমেরিকাতে পাড়ি জমানোর পূর্বে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার মতো বয়সই হয়নি তার!

No description available.

কোনি বলেন, বিখ্যাত ডা. পিয়েরে কনস্ট্যান্ট বুদিনের তত্ত্বাবধানেও তিনি পড়াশোনা করেছেন। ডা. বুদিনকে মডার্ন নিওন্যাটাল (নবজাতক বাচ্চার জন্ম হওয়া থেকে এক মাস পর্যন্ত যত্ন) মেডিসিনের জনক বলে গণ্য করা হয়।

১৮৯৬ সালে জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত এক বৃহৎ শিল্প প্রদর্শনীতে ডা. বুদিন তার ‘চাইল্ড হ্যাচারি’ প্রজেক্ট লাখো দর্শনার্থীর সামনে প্রদর্শন করেন, এতে মেডিকেল সহকারী হিসেবে ছিলেন মার্টিন কোনি। ডা. বুদিনের এই হ্যাচারি প্রজেক্ট বেশ সফলতার মুখ দেখেছিল।

No description available.

পরবর্তীতে এটি ব্যবহৃত হয়েছিল মুরগির ফার্মে; মুরগির বাচ্চার যত্নে। মানুষের বাচ্চার ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখার সাহস করেননি বুদিনও। অথচ ১৯০৭ সালের দিকে কোনিই সর্বপ্রথম ইনকিউবেটরের সাহায্যে নারীদের গর্ভে জন্ম নেয়া অপরিণত নবজাতকদের বাঁচানোর সাহসী প্রচেষ্টার সূচনা করেন।

নিজের কন্যাকেও বাঁচালেন যেভাবে

১৯০৩ সালে মার্টিন কোনি এনাবেল নামে এক নার্সকে বিয়ে করেন। চার বছর পরে এনাবেল বাচ্চা জন্ম দেয়ার নির্ধারিত সময়ের ছয় সপ্তাহ পূর্বে হিলডেগার্ড নামে এক অপরিণত কন্যাশিশুর জন্ম দেন যার ওজন মাপা হয়েছিল মাত্র দেড় কেজি!

No description available.

বাবা মার্টিন কোনি যদি ইনকিউবেটরের সঙ্গে জড়িত না থাকতেন; তাহলে হয়তো হিল্ডেগার্ডও পৃথিবীর আলো দেখতে পেতেন না। তখনকার সময়ে নবজাতকদের যত্নে তেমন সেবা পাওয়া যেত না। সেজন্য গড়ে চারজন অপরিণত নবজাতকদের মধ্যে তিনজনই মারা যেত।

ইনকিউবেটরে সদ্যজাত বাচ্চাদের প্রদর্শনী

তার এই জীবনরক্ষাকারী উদ্যোগ সম্পর্কে মানুষ যেন আরও জানতে পারে সেজন্য কোনি দ্বীপের প্রধান বিনোদন পার্কগুলোতে তিনি দুটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রেখেছিলেন। একটি লুনা পার্কে অপরটি ড্রিমল্যান্ড পার্কে।

No description available.

ড্রিমল্যান্ড পার্কে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণে ১৯১১ সালে প্রদর্শনী স্থগিত হয়ে যায়। অবশ্য ইনকিউবেটরে রাখা অপরিণত বাচ্চাগুলোকে নিউইয়র্ক পুলিশের প্রচেষ্টায় বাঁচানো হয়েছিল। পরে এই বাচ্চাদের লুনা পার্কের প্রদর্শনীতে স্থানান্তর করা হয় এবং প্রায় ৪০ বছর ধরে ওই প্রদর্শনী চলেছিল।

প্রদর্শনী থেকে পাওয়া অর্থ সেসব অপরিণত বাচ্চাদের যত্নের পাশাপাশি কোনির ‘চাইল্ড হ্যাচারি’র ব্যবস্থাপনায়ও খরচ করা হতো। ইউনা পার্কের প্রদর্শনী যখন কোনি বন্ধ করে দিলেন তখন পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার শিশু তার ইনকিউবেটরে সেবা পেয়েছিল।

তার মধ্যে সাড়ে ছয় হাজার শিশুকে তিনি বাঁচাতে পেরেছিলেন। বেঁচে যাওয়া শিশুর মধ্যে তার কন্যা হিল্ডেগার্ডও ছিল। ইনকিউবেটরে নবজাতকদের বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে কোনির সফলতার হার ছিল ৮৫ শতাংশেরও বেশি!

No description available.

অপরিণত বাচ্চাদের যত্নের সেকাল একাল

১৯৪০ এর দশকে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বোদ্ধারা অবশেষে চাইল্ড হ্যাচারির ধারণাকে আমলে নেন। নবজাতক শিশুদের যত্নে সেটাকে হসপিটালে ব্যবহার করা শুরু করেন। এতে করে ১৯৪৩ সালে মার্টিন কোনি তার প্রদর্শনী বন্ধ করে দেন।

সেই চাইল্ড হ্যাচারিকে (বর্তমানে যা ইনকিউবেটর) মেডিকেল কমিউনিটি ও হসপিটালগুলোতে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার পর, পরবর্তীতে নানাবিধ পরিবর্তন এনে সেটাকে আরও কার্যকরী করা হয়।

কোনির ব্যবহৃত অনেক কৌশলই বর্তমানে নবজাতকদের চিকিৎসাসেবায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যার মধ্যে সদ্যজাত বাচ্চাকে জীবাণুমুক্ত করার বিশেষ পদ্ধতি এবং 'ক্যাঙ্গারু কেয়ার' উল্লেখযোগ্য।

বর্তমানে অপরিণত বাচ্চা জন্ম নেওয়ার পর, তাদের বেঁচে থাকার হার পূর্বের চেয়ে অনেক বেড়েছে। যার জন্য আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে মার্টিন কোনির কাছে।

সূত্র: অল দ্যাট ইন্টারেস্টিং

জেএমএস/জেআইএম

আরও পড়ুন