ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

সুস্থ থাকতে মমি গুঁড়ো করে খেতেন যারা

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ০২:১১ পিএম, ২৬ জুন ২০২১

সালমান আহসান

সুস্থ হতে কিংবা বিভিন্ন রোগ-ব্যাদি থেকে বাঁচতে অতীতে অনেক মানুষেরা মমিকে ওষুধ হিসেবে গ্রহণ করত। প্রাচীনকালে একশ্রেণীর লোকেরা বিশ্বাস করতেন, মানব শরীরে যেহেতু আপনা-আপনি আরোগ্য লাভ কোর ক্ষমতা আছে; তাই এটি খাওয়ার মাধ্যমে অন্য হয়তো অন্য মানব শরীরকেও সুস্থ রাখতে পারে।

মৃত মানব শরীরকে কাজে লাগিয়ে রোগের চিকিৎসা সম্ভব- এ বিশ্বাসটি ক্রমেই এক গোষ্ঠী থেকে আরেক গোষ্ঠীতে ছড়িয়ে পড়ে। এদের মধ্যে ছিল মিশরীয়, গ্রিক, চাইনিজ এবং ইহুদী সংস্কৃতির মানুষেরা। তারা মানুষের শরীরের মাংস, হাড় ও রক্তকে নানা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করতো।

ইউরোপেও দ্বিতীয় শতাব্দীতে রোমান যোদ্ধারা মৃত গ্ল্যাডিয়েটরদের রক্তপান করতো। এটি তাদেরকে শারীরিকভাবে শক্তিশালী করবে বলে বিশ্বাস ছিলো। ১৫ শতকের দিকে ইউরোপিয়ানরা দাবি করা শুরু করে, তারা এক আশ্চর্য পথ্য আবিষ্কার করেছে। যার মাধ্যমে মৃগীরোগ, রক্তক্ষরণ, কাটা-ছেঁড়া কিংবা বমিজাতীয় সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগ সারবে দ্রুত!

jagonews24

এরপর থেকেই ওই ওষুধের ব্যবহার বেড়ে যায়। বাদামি রঙের সেই পাউডারকে তারা যেকোনো পানীয়ের সঙ্গে বা মলম বানিয়ে বা সরাসরিই খেয়ে ফেলতো। এটা ‘মমিয়া’ নামে পরিচিত ছিল। মমি শব্দটি আরবি ‘মমিয়া’ থেকে এসেছে, যা ‘ফিসাসফল্ট’কে বোঝায়। এটি একটি প্রাকৃতিক উপাদান, যা বহু আগে থেকেই ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিলো।

ক্রুসেড (ধর্মযুদ্ধ) চলাকালীন ইউরোপীয়রা ওষুধ হিসেবে মমিয়ার সঙ্গে পরিচিত হয়। খুব শিগগিরই এটি পুরো ইউরোপজুড়ে যাবতীয় রোগের চিকিৎসায় অব্যর্থ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ফিসাসফল্টের মতো দেখতে আরেকটি জিনিস ছিল ‘বিটুমেন’, যা প্রাচীন মিশরে মমি তৈরিতে ব্যবহৃত হতো। সেটিও ‘মমিয়া’ নামেই বাজারে সয়লাব হয়ে যায়।

তবে এক শ্রেণির মানুষ ক্রমেই দ্বিধান্বিত হয়ে এই মমিয়াকে আসল মমির সঙ্গে তুলনা করতে থাকেন। এরপরেই মূলত মমি কেনাবেচা শুরু হয়। সেই মমি কিনে লোকেরা সেটাকে গুঁড়ো করে মধু কিংবা কোনো পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতো কিংবা আক্রান্ত স্থানে লাগাতো। এমনকি যেকোনো ধরনের রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেও তারা সেটা ব্যবহার করতে শুরু করে।

jagonews24

মমির বিভিন্ন অংশ রোগ নিরাময়ে বিভিন্নভাবে কাজ করতো বলে বিশ্বাস ছিলো তাদের। চর্মরোগের ক্ষেত্রে মমি’র চর্ম আলাদা করে পিষে সেটা খেতো। মমির খুলিকে তারা মাথাব্যথা কিংবা মস্তিষ্কের অন্যান্য রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করতো।

১৮ শতকের দিকে মমিয়া ওষুধ হিসেবে ব্যর্থ হয়ে পড়ে। যখন সবাই বুঝতে শুরু করলো, এটি আদৌ রোগ নিরাময়ে কার্যকরী নয়। তবে ১৯২৪ সাল পর্যন্তও ওষুধের দোকানে মমিয়ার সন্ধান পাওয়া যেত। যদি আপনি চিত্রশিল্পী হয়ে থাকেন তাহলে, মমিয়া’র ইতিহাস হয়তো আপনি ভিন্ন একটা কারণে জেনে থাকবেন।

কারণ ইউরোপীয়রা যখন মমিকে গুঁড়ো করে কিংবা পিষে প্রক্রিয়াজাত করে ভিটামিনের মতো খাওয়া শুরু করেনি, এর আগে তারা মমিয়াকে অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে মমি ব্রাউন নামে এক ধরণের রং তৈরি করে সেটা দিয়ে ছবি আঁকতো। প্রাক-রাফায়েলীয় শিল্পকর্মগুলোতে এটি ব্যবহার করা হতো।

jagonews24

১৯৩০’র দশক পর্যন্ত সত্যিকারের মমির তৈরি বিশেষ রং ‘মমি ব্রাউন’ দবাজারে সহজলভ্য ছিল। শেষ পর্যন্ত কাণ্ডজ্ঞান ব্যবহার করে ইউরোপীয়রা রোগ নিরাময়ে কিংবা চিত্রশিল্পে মমির অদ্ভুত ব্যবহার বন্ধ করা শুরু করলো। তারা চিন্তা করে দেখলো খাবার ও রং হিসেবে মমিকে ব্যবহার করাটা আসলেই বেশ বিদঘুটে একটা ব্যাপার।

এতে করে মমি কেনাবেচার ব্যবসায় মন্দা দেখা দিলো। ক্রমেই মমির নৃতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক মূল্য প্রচার হয়ে গেলে মমি কেনাবেচা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। মমি নবায়নযোগ্য সম্পদ নয়, এটি ভেবেই শেষপর্যন্ত ইউরোপীয়রা মমিভক্ষণে ক্ষান্ত দেয়।

jagonews24

আরোগ্য লাভে জীবিত অথবা মৃত মানব শরীরকে ভক্ষণ কিংবা ব্যবহারের পদ্ধতিকে আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রে ‘মেডিকেল ক্যানিবালিজম’ বলা হয়। আজকাল মমি কেনাবেচা কিংবা রোগ নিরাময়ে এটি কাজ করবে, এমন কুসংস্কার না থাকলেও ভিন্ন এক উপায়ে এই মেডিকেল ক্যানিবালিজম আজো টিকে আছে।

আর সেটি হচ্ছে ‘অঙ্গ প্রতিস্থাপন’। প্রাচীনকালে কিংবা মধ্যযুগে যেমন মমির অবৈধ লেনদেন হতো; তেমনই আজকাল রোগীর জন্য অত্যাবশ্যকীয় কোনো অঙ্গ প্রতিস্থাপনেও অবৈধভাবে মৃত মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কেনাবেচা অবৈধভাবেই ঘটে থাকে!

সূত্র: সায়েন্স স্টোরি

জেএমএস/এমএস

আরও পড়ুন