যেভাবে ক্যান্সার জয় করেছেন এই নায়িকারা
মরণব্যাধি ক্যান্সার থেকে রক্ষা না পেয়ে প্রতিবছর বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। তবে মরণব্যাধি হলেও প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্ত করা গেলে, তা চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব। পাশাপাশি সঠিক জীবন-যাপন এবং শরীরচর্চার মাধ্যমে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে থাকার নজিরও আছে অনেক।
আজ ‘ন্যাশনাল ক্যান্সার সারভাইভার্স ডে’। যারা ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে প্রতিদিন বেঁচে থাকার মুহূর্ত গুনছেন, তাদের প্রতি সম্মান জানাতে এবং ক্যান্সারে হেরে না গিয়ে বরং ক্যান্সার জয় করার প্রতিজ্ঞা ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বব্যাপী দিবসটি উদযাপন করা হয়।
জুনের প্রথম রবিবার এই দিবসটি পালন করা হয়। যদিও এটি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদযাপিত হয়। ‘ন্যাশনাল ক্যান্সার সারভাইভার্স ডে’ ফাউন্ডেশন কিছুটা সাফল্যের সঙ্গে বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই দিবস উদযাপনের গুরুত্ব বাড়াতে চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮৮ সালের ৫ জুন প্রথম এই দিবসটি পালিত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, সবশেষ ২০১৮ সালের হিসেবে সারা পৃথিবীতে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৯৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবছর নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে তিন লাখ মানুষ। প্রতি ছয় জনে একজনের মৃত্যু হচ্ছে এই ক্যান্সারের জন্য। সঠিক প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে বছরে মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
তবে ক্যান্সার জয় করে কিংবা ক্যান্সারের সঙ্গে টিকে থাকা ব্যাক্তিদের সংখ্যাও নিতান্তই কম নয়। সাধারণ মানুষের মতো বলিউডের অনেক নামজাদা অভিনেতা এমনকি অভিনেত্রীরাও ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন। এমনকি অনেকেই মরণব্যাধি ক্যান্সারকে জয় করে সুস্থ হয়ে দিন যাপন করছেন। জেনে নিন তেমনই কয়েকজন ক্যান্সার সারভাইভার্সদের সম্পর্কে-
মনীষা কৈরালা
এই অভিনেত্রী ২০১২ সালে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। প্রথম দিকে তিনি টেরই পাননি ক্যান্সার তার শরীরে বাসা বেঁধেছে। এরপর তিনি যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন; তখন জানা যায় তিনি ক্যান্সারে ভুগছেন।
পরবর্তীতে তাকে চিকিত্সার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নিয়মিত কেমোথেরাপি নিতে হয়েছিল তাকে। কয়েক মাস তিনি নিউইয়র্কের হাসপাতালে কাটিয়েছিলেন। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই করেন এই অভিনেত্রী।
এরপর ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করেন তিনি। সঠিক খাদ্যাভাস, শরীরচর্চা, মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে চেষ্টা করেন তিনি। এর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব থেকে এই অভিনেত্রী ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া শুরু করেন।
এই বলিউড অভিনেত্রী বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানান, ‘ক্যান্সার আমার জীবনে অভিশাপ নয়, আশির্বাদ হয়ে এসেছিল। আর এ কারণেই জীবনের গুরুত্ব বুঝেছি, দ্বিতীবার বেঁচে থাকার সুযোগ পেয়েছি।’
লিসা রে
ভারতীয় বাঙালি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান অভিনেত্রী লিসা রে ২০০৯ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। একাধিক মেলোমা ধরা পড়েছিল তার। এটি অস্থি মজ্জার প্লাজমা কোষের একটি ক্যান্সার। লিসা রে তার স্ট্যান্ড সেল ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে পেরেছিলেন।
২০১০ সালের এপ্রিলে, তিনি প্রতিস্থাপনের কারণে ক্যান্সারমুক্ত হতে সক্ষম হন। লিসা তার ক্যান্সার যুদ্ধ নিয়ে বারবার বিভিন্ন ইন্টারভিউতে বলেছেন, ‘আমার একজীবনে অনেক জটিল অধ্যায় পাড় করতে হয়েছে। অনেক কিছু দেখেছি, অনেক কিছু শিখেছি। এখন আমি নিজেকে ক্যান্সার গ্রাজুয়েট বলতে পারি। ক্যান্সারমুক্ত হতে গিয়ে এর খুঁটিনাটি অনেক কিছুই এখন আমার নখদর্পনে।’
ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ব্লগ ইয়েলো ডায়েরি লিখতে শুরু করেছিলেন এই অভিনেত্রী। এ ছাড়াও লিসা রে একটি বই ও লিখেছেন। বইটি ক্যান্সার নিয়ে। এতে তিনি তার ক্যান্সার আক্রান্ত দিনগুলো এবং নিজেকে ক্যান্সারমুক্ত করার অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা লিখেছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি আমার জীবনকে ঈশ্বরের করুণা ও পুরস্কার বলে মনে করি। মরণব্যাধি ক্যান্সার আমাকে জীবনের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে শিখিয়েছে। এখন আমি আমার স্বাস্থ্য, খাবার ও ওষুধ সম্পর্কে খুব সচেতন থাকি। যোগ ব্যায়ামকে করেছি জীবনের অপরিহার্য্য অংশ। যোগ ব্যায়াম আমাকে শারীরিক ও মানসিক শক্তি যোগাচ্ছে।’
সোনালী বেন্দ্রে
২০১৮ সালের জুলাইতে টুইটারে এই অভিনেত্রী জানান, তিনি মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন এবং নিউ ইয়র্ক সিটির একটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। মেটাস্ট্যাসিক ক্যান্সার হলে ক্যান্সারযুক্ত কোষগুলো লসিকা সিস্টেম বা রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
সোনালি যতদিনে তার রোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন; ততদিনে ক্যান্সার চতুর্থ পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশে নেমে এসেছিল। অভিনেত্রী জানান, ‘তিনি সারা রাত কেঁদেছিলেন ক্যান্সার সনাক্ত হওয়া পরে।’
কেমোথেরাপি নেওয়ার ফলে চুল, চোখের পাপড়ি পড়ে যেতে শুরু করে নায়িকার। বেঁচে থাকার আশা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছিল। তবুও দমে যাননি তিনি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ক্যান্সার জয়ের গল্প জানিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘চুল ছিল আমার সৌন্দর্যের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক। চুল পরিচর্যাকারী বিভিন্ন পণ্যের প্রচার করেছি একসময়। তবে যখনই ক্যানসারে আক্রান্ত হলাম, তখনই জীবনের সবকিছু উল্টেপাল্টে গেল।’
অনেকে বলেন, ‘আপনার জীবনযাপনের ধরন তো ভালোই ছিল, কী এমন হলো যে ক্যান্সার হয়ে গেল!’ আমিও এসব শুনে শুনে ভাবতে শুরু করেছিলাম যে সত্যিই তো, আমারই কেন ক্যান্সার হলো? কী এমন করেছিলাম আমি? মনোবিদ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলাম। তিনি জানালেন, ‘ক্যান্সার হয় জেনেটিক কারণে কিংবা ভাইরাসের কারণে। এখানে নিজেকে অপরাধী ভাবার কোনো কারণই নেই।’
মমতাজ
বলিউড ডিভা মমতাজ ২০০২ সালে ৫৪ বছর বয়সে স্তন ক্যান্সার আক্রান্ত হন। ৬টি কেমোথেরাপি এবং ৩৫টি বিকিরণ নেওয়ার পরে তিনি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করতে সক্ষম হন। তিনি বারবার বলেছিলেন, ‘আমি সহজেই হাল ছাড়ি না। এমনকি মৃত্যুর মুখোমুখি আমাকেও লড়াই করতে হবে।’
বারবারা মোরি
মেক্সিকান এই সুন্দরীকে হৃতিক রোশনের কাইটস চলচ্চিত্র নিশ্চয়ই দেখেছেন! ২৯ বছর বয়সে এই নায়িকার স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার ধরা পড়ার কারণে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন এই নায়িকা।
তারপর থেকে তিনি ক্যান্সার সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন ক্যাম্পেইন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যান্সার সচেতনা ছড়ানোর কাজে সরব তিনি। স্তন ক্যান্সার নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টরিতেও অংশগ্রহণ করেছেন তিনি।
সূত্র: শি দ্য পিপল
জেএমএস/এএসএম