১০ টাকায় ইফতারসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে যে সংগঠন
দীর্ঘ একবছর ধরে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর অচল পৃথিবী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিল। কিন্তু বছর ঘুরে আবারও হানা দেয় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। ফলে সরকার আরোপিত বিধি-নিষেধের মুখে ঘরবন্দি হয়ে আছে খেটে খাওয়া মানুষ। গত একবছরে অধিকাংশ নিম্ন এবং নিম্নমধ্যবিত্তের আয়-রোজগারের অবস্থা শোচনীয়। ফলে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে অনেক পরিবার। দিন দিন পরিস্থিতি আরও করুণ হচ্ছে।
বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ মহামারির পাশাপাশি ক্ষুধার যুদ্ধে জয়ী হওয়া। তাই চলমান দুর্যোগ ও রমজান মাসকে সামনে রেখে ‘উই, নট আই’র সদস্যরা স্বল্পমূল্যে ইফতার সামগ্রী মানুষের দ্বারে পৌঁছে দিচ্ছে। স্বল্পমূল্যে ইফতার কর্মসূচির আওতায় তারা ১০ টাকায় অভাবী মানুষের মাঝে মানসম্মত খাবার সরবরাহ করছেন।
মূলত নিম্ন আয়ের পাশাপাশি, নিম্নমধ্যবিত্তরা যারা সম্মানের ভয়ে কারো কাছে সাহায্য নিতে দ্বিধায় থাকেন, তাদের জন্যই এ আয়োজন। যেন নামমাত্র মূল্যে বিনা সংকোচে তারা এ খাবার কিনে খেতে পারেন। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে তারা মূলত ইফতারের সময় খাদ্য বিতরণ করছেন। ঢাকার মিরপুর-১ এর সলিমুদ্দিন মার্কেট ও ৬০ ফিটের জোনাকি রোডে খাবার সরবরাহ করছে সংগঠনটি।
এ ব্যাপারে উই, নট আই’র সহ উদ্যোক্তা ও ভাইস চেয়ারম্যান তাহসিন রিয়াজ বলেন, ‘আমরা পুরো কার্যক্রম নিজ উদ্যোগে ফান্ডিং করছি। ১০ টাকা নিলেও দেখা যায় প্যাকেটপ্রতি আমাদের খরচ হয় ৪০-৪৫ টাকা। তাই ইচ্ছা থাকলেও এরসঙ্গে কোনো পানীয় দিতে পারছি না। যাদের একদম সত্যিকারের প্রয়োজন, তাদের হাতে খাবার তুলে দিতে বিশেষ টোকেনের ব্যবস্থা করেছি। ফিল্ড সার্ভে করে টার্গেটেড মানুষ খুঁজে বের করে এ টোকেন দেওয়া হচ্ছে।’
গতবছর করোনাকালীন বিশেষ পরিস্থিতিতে ‘প্রজেক্ট একান্নবর্তী’ নামে একটি কার্যক্রম পরিচালনা করে সংগঠনটি। যার আওতায় তারা প্রায় ৮ হাজার মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ করেন। পাশাপাশি বিগত বছর ও রমজানকেন্দ্রীক ইফতার বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করেন।
খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির পাশাপাশি তারা সুন্দর পরিচ্ছন্ন সমাজ গড়ার কাজে অটল। ইফতার বিতরণ চলাকালে রাস্তায় পড়ে থাকা খাবারের প্যাকেট ও অন্য ময়লা নিজেরাই পরিষ্কার করে ফেলেন। কারণ সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে সাতটি অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করছেন-
১. ময়লা-আবর্জনা রাস্তায় নয়, ডাস্টবিনে ফেলবো।
২. টাকায় ও দেয়ালে কখনো কিছু লিখবো না।
৩. বিদ্যুৎ ও পানি অপচয় রোধ করবো।
৪. নারীদের সম্মান করবো, কাউকে অসম্মান করবো না।
৫. নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেরাই পরিচ্ছন্ন রাখবো।
৬. রাস্তায় চলাচলের সময় অ্যাম্বুলেন্সকে সুযোগ করে দেবো।
৭. ট্রাফিক নিয়ম-কানুন মেনে চলবো।
এসব কার্যক্রমের সার্বিক তদারকি করছেন সংগঠনের কার্যনির্বাহী পরিষদের মাহিন সাফা, আল মুহাইমিন ত্বাহা ও সিয়াম আহমেদ। সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি নাঈম সামাদ বলেন, ‘আসলে সাধারণ মানুষের সাহায্যের ওপরই নির্ভর করছে আমরা প্রতিদিন কত জনের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি। তাই সমাজের অর্থবান মানুষদের এ মহতি উদ্যোগে অংশগ্রহণ করার আবেদন জানাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি রুমন রাইয়ানের হাত ধরে জন্ম নেওয়া এ সংগঠন বরাবরই আলোচনায় ছিল মিরপুরব্যাপী পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। এ ছাড়াও মিরপুরকে পরিচ্ছন্ন, পরিকল্পিত মডেল সিটি হিসেবে তুলে ধরার উদ্যোগ ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে। দেশের জাতীয় দিবসগুলোয় তারা ভিন্নধর্মী পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম দিয়ে তরুণ প্রজন্মের মাঝে অনুপ্রেরণা জোগায়।
পাশাপাশি বিভিন্ন দিবসে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে তুলে ধরতে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়ে থাকে সংগঠনটি। এমনকি তরুণদের মাঝে নেতৃত্বের গুণাবলী বিকশিত করে তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন সময় লিডারশিপ ক্যাম্প ও ওয়ার্কশপের আয়োজন করে।
এসইউ/জিকেএস