ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

স্বাধীনতার ঘোষণায় যা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ১১:৪৪ এএম, ২৬ মার্চ ২০২১

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে বাংলাদেশ। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃত পঞ্চাশ বছরের বাংলাদেশ। এই স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য বাঙালিকে অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিই ঘোষণা করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঘোষণাটি বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে প্রথমে টেলিফোনে বিভিন্ন নেতা ও সূত্রের কাছে পাঠানো হয়। তৎকালীন ইপিআরের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে ঘোষণাটি চট্টগ্রামে পাঠানো হয় সারাদেশে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। একই সঙ্গে মগবাজার ভিএইচএফ অয়্যারলেস স্টেশনে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়।

সব জায়গায় বার্তা পাঠিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি দ্রুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ দেশে-বিদেশে পৌঁছে দিতে বলা হয়। বিভিন্ন ওয়্যারলেস স্টেশনের বাঙালি দেশপ্রেমিক কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বার্তাটি ছড়িয়ে দেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তখন পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে বহির্বিশ্বের টেলিফোন যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিল। একমাত্র ওয়্যারলেস শিপিং চ্যানেলের মাধ্যমে সমুদ্রে জাহাজগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ ছিল। ট্রান্সমিটারের মাধ্যমেও বার্তাটি ঢাকা থেকে প্রচার করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বার্তাটি ছিল ইংরেজিতে লেখা। বাংলায় অনুবাদ করে বার্তাটি বিভিন্নভাবে প্রচার করা হয়—‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করো। আল্লাহ সহায় হোন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের লোকদের হত্যা করছে। ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ, দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোনো আপস নাই, জয় আমাদের, পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সকল আওয়ামী লীগ নেতা, কর্মী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় লোকদের এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।’

bb-1.jpg

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার লিখিত একটি কপি ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ৪টা-৫টার দিকে মগবাজার ভিএইচএফ (ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি) ওয়্যারলেস স্টেশনে পৌঁছে যায়। এটি গ্রহণ করেছিলেন সহকারী প্রকৌশলী মো. আবদুল কাইউম ও ইঞ্জিনিয়ার সুপারভাইজার মেজবাহ উদ্দিন। তাঁরা বার্তাটি সকালেই চট্টগ্রামের ছলিমপুর স্টেশনসহ দেশের বিভিন্ন ওয়্যারলেস স্টেশনে পাঠিয়ে দেন।

২৬ মার্চ ভোরের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি হাতে পেয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মী, বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত বাঙালি কর্মীরা প্রচার করতে শুরু করেন। কেউ মাইকযোগে তা প্রচার করেন, কেউ আবার সাইক্লোস্টাইল করে ছড়িয়ে দেন।

বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সাক্ষাৎকারে জানান, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী টেলিফোনে ইপিআরের সদর দফতর পিলখানায় পৌঁছে দেওয়া হয় ৩২ নম্বর সড়কের বাড়ি থেকে, যা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে দেওয়া শুরু হয়।

বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা এক সাক্ষাৎকারে জানান, আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ কর্মী হাজি মোহাম্মদ মোরশেদ ২৫ মার্চ রাতে টেলিফোনে সর্বত্র বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠান। পরে সে রাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মোরশেদকেও গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়।

পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার টিক্কা খানের গণসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক তার ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ বইয়ে ট্রান্সমিটারে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে রেকর্ড করা স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেছেন বলে লিখেছেন।

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন