তরুণদের ভাবনায় বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি নাম, একটি স্মৃতি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও শেখ মুজিবুর রহমান একে অপরের পরিপূরক। যার ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি আমরা। পেয়েছি সোনার বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মাঝে রয়েছে আবেগ, ভালোবাসা ও নানা উদ্দীপনা। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে তরুণরা জানাচ্ছেন তাদের আবেগ-অনুভূতি। তাদের কথা তুলে ধরেছেন রায়হান আহমেদ—
মুরাদ হোসাইন বলেন, ‘বাঙালি, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শব্দ তিনটি একই সূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠেই মানুষের মনে স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা পেয়েছি স্বাধীন দেশ। বঙ্গবন্ধু না থাকলে হয়তো আমরা স্বাধীন দেশ কখনোই পেতাম না। বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস কল্পনা করা যায় না। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, বাগ্মিতা, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, সাহসিকতা, মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধা ও ত্যাগ মুগ্ধ করেছে সব শ্রেণিপেশার মানুষকে। বেশি মুগ্ধ করেছে তরুণদের। ছাত্রজীবন থেকে দেশ ও জাতির স্বার্থে সংগ্রাম করতে গিয়ে বারবার কারাভোগ করেছেন। তারপরও তিনি থেমে থাকেননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশের জন্য লড়াই করেছেন। তাই তরুণদের জন্য দরকার বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান। তরুণরাই পারে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বুকে লালন করে একটি সোনার বাংলাদেশ গড়তে। যেখানে সবাই শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারবে।’
ফজলে রাব্বি ফরহাদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলতেই তরুণদের চোখে ভাসে এক অনুপ্রেরণার নাম। এক অকুতোভয়, নির্ভীক সৈনিকের নাম। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন এই বীর সেনানী। সেই ছোটবেলা থেকেই টুঙ্গিপাড়ার খোকার দিন কাটতো অন্যায়ের সাথে আপোষহীনতা আর সত্যের দাবিতে স্লোগান দিয়ে। বাংলার মানুষের প্রতিটি দাবি পূরণের আন্দোলনে, প্রতিটি সংগ্রামের সম্মুখভাগের সৈনিক ছিলেন বঙ্গবন্ধু।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়ে আমরা জানতে পারি, বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-ভাবনা ছিল তারুণ্যকেন্দ্রীক। তিনি সেই তারুণ্যের সময় থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শিখেছিলেন। ৭ মার্চের ভাষণের পর বাংলার তরুণসমাজ তার ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশকে স্বাধীন করেছেন হায়েনাদের কবল থেকে। জাতির জন্য তরুণদের সেই আত্মত্যাগ আজও চিরস্মরণীয়। সেই তরুণদের জন্য এখনো পথচলার সাহস জোগায় বঙ্গবন্ধুর সেই বীরত্বগাথা ইতিহাস।’
তাজরিয়ান শিকদার বলেন, ‘প্রতিটি দেশের কোনো পটভূমি পরিবর্তন বা মহান সাফল্যের পেছনে থাকে তরুণদের বিরাট অবদান। বাংলার প্রতিটি সাফল্যও তার ব্যতিক্রম নয়। আজও বাঙালি জাতির তরুণরা যদি মুক্তির মহানায়ক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের আদর্শের প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রেখে যাওয়া উদ্যম আর সাহস নিয়ে কাজ করে, তাহলে বাঙালি জাতির আমূল পরিবর্তনে খুব বেশি সময় লাগবে না। এ দেশে উদিত হবে নতুন এক সূর্য। গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর সেই কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলা।’
তিনি বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ, স্বাধীন রাষ্ট্র যার হাজারো ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি; তিনি বঙ্গবন্ধু ব্যতীত আর কেউ নন। তরুণ সমাজের একজন আদর্শ তিনি। বঙ্গবন্ধু তার জীবনের শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম করেছেন অধিকারহীন, নিষ্পেষিত-নিপীড়িত মানুষের জন্য। তিনি জীবনের অনেকটা সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয়েছে মানুষের অধিকার আদায় করতে গিয়ে। তরুণ প্রজন্ম তার কাছ থেকে স্বাধীনতা রক্ষা করা শিখেছে। অধিকার আদায় করা শিখেছে। সত্য প্রকাশ করতে শিখেছে। যোগ্য নেতার গুনাবলী ধারন করতে শিখেছে। শিখেছে মাথা উঁচু করে বাঁচতে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে চলতে পারলেই আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলা খুঁজে পাবো।’
উম্মেহানী বলেন, ‘বাঙালি জাতির মুক্তির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর ছিল অসাধারণ নেতৃত্বের ক্ষমতা। তাঁর নেতৃত্বের গুণেই স্বাধীন বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। একজন দেশপ্রেমী আদর্শ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান নিজের দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবেসে ব্যক্তিস্বার্থকে তুচ্ছ করে কাজ করে গেছেন। অসংখ্যবার কারাবরণসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বের ক্ষমতা আজও বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ করে। নিরস্ত্র, দরিদ্র, শোষিত বাঙালি তার এক ডাকে সাড়া দিয়ে রাজপথে নেমে আসে। ছিনিয়ে আনে লাল-সবুজের পতাকা।’
তিনি বলেন, ‘বাল্যকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন মানবদরদী। মানুষের বিপদে সর্বদা এগিয়ে আসতেন। সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন। একজন আদর্শ, আত্মত্যাগী ও উদ্যমী মানুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত নেতা। বঙ্গবন্ধু কেবল দেশপ্রেমী নন; তিনি প্রকৃতিপ্রেমীও। প্রাণির প্রতিও তিনি ছিলেন সচেতন। তারুণ্যের চোখে বঙ্গবন্ধু বলতেই যেন অন্যায়ের প্রতি কঠোর আর ন্যায়ের প্রতি কোমল একজন সংগ্রামী নেতাকে মনে হয়। একজন মানবপ্রেমী আদর্শ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন চিরকাল।’
মুসাদ্দির হোসাইন বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন বাংলার মানুষকে মুক্তি দিতে। বাংলার মানুষের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার জন্য ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। তার এই সংগ্রামী জীবন থেকে তরুণ প্রজন্মের অনেক কিছুই ধারণ করার আছে। তরুণ প্রজন্মের সবার এই আর্দশ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু সব সময় স্বপ্ন দেখতেন শোষণহীন সোনার বাংলা গড়ার।’
তিনি বলেন, ‘সোনার বাংলা গড়তে কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি তিনি। জীবনভর সংগ্রাম করেছেন। সব সময় বাংলার দুঃখী মানুষের কথা ভেবেছেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘We have to work sincerely and honestly for the emancipation of the poor people of this country. This is our aim’। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করতে হলে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করতে হবে। অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার শিক্ষা নিতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রতিজ্ঞা করতে হবে।’
মাহমুদ তানজীদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে শরীরে শিহরণ জেগে ওঠে। একটি জাতিকে শোষণ, অত্যাচার থেকে মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর মুখনিঃসৃত বক্তব্যগুলো উল্লেখযোগ্য। এ ভাষণ থেকে শেখা যায় বক্তৃতার কৌশল। একজন মানুষের কথা বলার সময় শারীরিক অঙ্গভঙ্গি দেখে শেখা যায়। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মানুষকে উজ্জীবিত রেখেছে। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করে সব শ্রেণিপেশার মানুষকে একত্রিত করার পেছনে বঙ্গবন্ধুর অবদান অন্যতম।’
এসইউ/এমএস