বিলাসবহুল হোটেলে মৃতদেহ রাখা হয় কেন?
পাঁচতারকা বা নামি-দামি হোটেলে রাত কাটানোর স্বপ্ন থাকে সবারই। ভ্রমণপিপাসুরা সব সময় উন্নতমানের হোটেলের সন্ধানে থাকেন, যেখানে তারা বিশেষ মুহূর্ত কাটাতে পারবেন।
তবে কখনো কি ভেবেছেন, পাঁচতারকা এক হোটেলে রাখা হয় শুধু মৃতদেহ। অবাক হওয়ার মতোই বিষয় এটি। রাজকীয়ভাবে মৃত ব্যক্তির শেষকৃত্য হয় হোটেলটিতে। এরপর কফিনবন্দি লাশটিকে রাখা হয় হোটেলের এক ঘরে।
বলছি, জাপানের ওসাকার হোটেল রিলেশন বা ‘ইতাই হেতেরু’ হোটেলের কথা। যেখানে রাখা হয় মৃতদের। যদিও জাপানিরা মৃতদের কখনো কবর দিয়ে বা পুড়িয়ে থাকেন। তবে হোটেলে লাশ রাখার ঘটনা সত্যিই বিরল।
মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য জাপানিদের নতুন এ উদ্যোগ ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে এ হোটেলে প্রিয়জনের লাশ সংরক্ষণ করে থাকেন জাপানিরা।
মৃতদেহ হোটেলে রাখার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। জাপানে কবরস্থানগুলোর সংখ্যা অনেক কম জনসংখ্যার তুলনায়। বর্তমানে সেখানকার কবরস্থানে মৃতদের জায়গা পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এ কারণেই যদি কোনো মৃতের জন্য কবরস্থানে জায়গা পাওয়া না যায়, সে ক্ষেত্রে আত্মীয়রা লাশ নিয়ে চলে যান ওসাকা হোটেলে। সেখানে শেষকৃত্য করার পর মৃতদেহ জলবায়ু-নিয়ন্ত্রিত কফিনে সংরক্ষণ করা হয়।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, মৃতকে যে ঘরে রাখা হয়; সেটি ডাবল বেডের সুসজ্জিত এক রুম। সেখানে রয়েছে টেলিভিশন, আসবাবপত্রসহ সব সুযোগ-সুবিধা। যদিও মৃতব্যক্তির এসব সুবিধার কোনো প্রয়োজন নেই।
রুমভেদে হোটেলের ভাড়া বাড়তে বা কমতে পারে। মৃতের আত্মীয়রা প্রতিমাসে বা বাৎসরিক ভিত্তিতে হোটেল ভাড়া পরিশোধ করেন। জনসংখ্যার চেয়ে কবরস্থান কম থাকায় হোটেলটি যেন জাপানিদের কাছে আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। সেই সঙ্গে হোটেল মালিকরাও রয়েছেন নিশ্চিন্তে।
শুধু ওসাকা নয়, জাপানে এ ধরনের হোটেলের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ ধরনের হোটেলকে ‘কর্পস হোটেল’ বা ‘লাশ হোটেল’ বলে। জাপানে গত কয়েক বছরে এ ধরনের হোটেল ব্যবসায় চাঙা হয়ে উঠেছে।
সরকারি তথ্যমতে, জাপানে প্রতিবছর ২০ হাজার মানুষ মারা যান। ২০৪০ সাল নাগাদ সেখানকার মৃত্যুহার ১.৭ মিলিয়নে গিয়ে ঠেকবে। সব মিলিয়ে মৃতদেহ দাফনের জায়গা না পাওয়ায় এমন উদ্যোগ বেছে নিয়েছেন জাপানিরা।
রয়টার্স/ইনসাইডার/জেএমএস/জেআইএম