প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতনতায় কাজ করছেন তারা
জি এম আদল
বাংলাদেশ বিগত কয়েক দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাস্থ্যখাতে অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনো আমরা অনেক পিছিয়ে। এর মধ্যে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা অন্যতম। ২০২১ সালে এসেও নারীদের পিরিয়ড নিয়ে জড়তা রয়ে গেছে। অনেক সময় পিরিয়ড চলাকালীন অথবা বয়ঃসন্ধিকালে তরুণ-তরুণীদের বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
তাই প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে প্রয়োজন বেশি বেশি প্রচার-প্রচারণা। এরই মধ্যে অনেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করছে। তেমনই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘উইথ শি’। ‘দূরে থেকে জুড়ে থাকি, সংকোচ দূরে রাখি’- স্লোগান নিয়ে ইমরান জাহান আরাফাতের হাত ধরে সংগঠনটির যাত্রা শুরু।
সংগঠনের উদ্যোগ এবং কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিষ্ঠাতা এবং সমন্বয়ক আরাফাত জানান, করোনাকালীন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের চিন্তাধারা থেকেই এ উদ্যোগ নেন। তিনি মা-বোনদের জরুরি প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে আগ্রহী স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে অনলাইনে কাজ শুরু করেন।
মহামরির শুরুর দিকে নারীদের পিরিয়ডকালীন পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েই ‘উইথ শি’ যাত্রা শুরু করে। লকডাউনে যারা বাসা থেকে বেরিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে পারছিলেন না; তাদের বাসায় বিনা মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দিয়েছে ‘উইথ শি’র স্বেচ্ছাসেবীরা।
জেলাভিত্তিক হটলাইন এবং ফেসবুকে ‘উইথ শি’ পেজের মাধ্যমে খুলনাসহ ৯টি জেলায় এ সেবা চালু করে। খুলনা, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ এ সংগঠনের কার্যক্রম বিস্তৃতি লাভ করে।
এমন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করার চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আরাফাত জানান, স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে প্রচুর গোঁড়ামি মানুষের মাঝে। কেউ কথা বলতে চান না এ বিষয়ে। একই কারণে অনেক ভুল ধারণাও রয়েছে। ফলে নারীরা ভোগেন জরায়ু ক্যান্সারসহ ভয়াবহ সব রোগে। বাংলাদেশে নারী-পুরুষ উভয়েরই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
কাজের শুরুতে অনেকে তাদের না বুঝে গালি দিতেন। তারা ধর্মবিরোধী কাজ করছেন বা ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে এমন। তাছাড়া মানুষ অভ্যস্ত ছিল না বিষয়টি নিয়ে। পরে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও ধর্মীয় চিন্তাবিদদের ডেকে অনলাইনে আলোচনা করে মানুষকে সচেতন করেন।
২০২৪ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষকে প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতন করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে তারা অনেকগুলো কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। প্রায় ৫৪টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে করোনাকালীন অনলাইনে প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। নিয়মিত বিনা মূল্যে ডাক্তারের কনসালটেন্সি প্রোগ্রাম চালু রেখেছেন।
স্যানিটারি ন্যাপকিন যে ত্রাণের অংশ হতে পারে, তা ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সময় দেখিয়েছে ‘উইথ শি’। খুলনার কয়রা এবং সাতক্ষীরায় প্রায় ৪৬৬ পরিবারের মাঝে তারা তিন মাসের প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী উপহার হিসেবে পৌঁছে দিয়েছে। পরবর্তীতে বন্যাদুর্গত ফরিদপুর ও দিনাজপুরেও এমন উদ্যোগ নেয় সংগঠনটি।
প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে সংগঠনটি অনলাইনে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নারীর ঋতুচক্র ও স্বাস্থ্য সচেতনতায় নিয়মিত অনলাইন সেশন ‘উইথ ডক্টর’স অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে নিরাপদ ঋতুচক্র সম্পর্কিত নানা প্রশ্নের উত্তর ও পরামর্শ দেন অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা।
মহামারি চলে গেলে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে ব্যাপকভাবে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তবে এর মাঝেও থেমে নেই স্বেচ্ছাসেবীরা। তারা নিজ নিজ পরিবার ও প্রতিবেশী শিশুদের সুরক্ষায় কাজ করছেন। অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে ‘প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ভালো ও মন্দ স্পর্শ বিষয়ক প্রশিক্ষণ’ পরিচালনা করছেন।
সংগঠনটি এরই মধ্যে স্বেচ্ছাসেবীদের দক্ষতা উন্নয়নে ১৮০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। যা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করবে প্রশিক্ষণার্থীরা। এ ছাড়াও অফলাইনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবন দক্ষতা উন্নয়নেও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তারা।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জরুরি প্যাড ব্যাংক স্থাপন বিষয়ক পরিকল্পনাও রয়েছে। এ ছাড়া পিরিয়ড ও বয়ঃসন্ধি বিষয়গুলো স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন জেলায় শিশুদের সঙ্গে কেক কেটে বয়ঃসন্ধি উদযাপন করছে। যা এরই মধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
জেএমএস/এসইউ/জেআইএম